ব্যক্তিগত ট্যাক্সের আদ্যোপান্ত – ট্যাক্স কিভাবে কমাবেন ও ফেরত পাবেন

0
1396

ট্যাক্স বিষয়টাই সুবিশাল একটা ব্যাপার। ট্যাক্সের জগতটা মহাসমুদ্রের মত। এই মহাসমুদ্রে সন্তোরন করা আপাতদৃষ্টিতে সবার পক্ষে সম্ভবও না, দরকারও নেই। কিন্তু যার যার ব্যক্তিগত স্বার্থে পার্সোনাল ট্যাক্সের কিছু খুঁটিনাটি বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন। ট্যাক্সের অনেকগুলা ক্যাটাগরির মধ্যে পার্সোনাল বা ব্যক্তিগত ট্যাক্স একটা।

পার্সোনাল ট্যাক্সেরও নানাবিধ নিয়ম রয়েছে, খুব জটিল না হলেও সহজও না এমন কিছু হিসেব আছে। যা সাধারণত না জানলেও হবে। যার যার আয়, ট্যাক্স ক্রেডিট ও ট্যাক্স রিলিফের উপর ভিত্তি করে রেভিনিউই ট্যাক্স এর হিসেব করে নিবে। তবে মনে রাখতে হবে রেভিনিউ কখনো কম ট্যাক্স নিবে না, বেশি ট্যাক্সও কাটবে না। রেভিনিউতে যার যার তথ্যের ভিত্তিতেই তার তার ট্যাক্সের হিসবে হবে।

এখন প্রশ্ন হল, তাহলে আমাদের কাজ কি? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে এই লেখাটা মনোযোগ দিয়ে সম্পূর্ণটা পড়তে হবে। লেখাটা একটু বড় হতে পারে, কিন্তু এর থেকে সংক্ষিপ্ত করতে গেলে সম্পূর্ণ বিষয়টা তুলে ধরা সম্ভব হতনা।

ব্যক্তিগত ট্যাক্সের বিষয়ে আমাদের করনীয় কি?

ধরুন আপনার কোম্পানি যখন আপনাকে বেতন দেয় তার আগে কোম্পানি তার পে-রোল এ পে-স্লিপ ইস্যু করে, যেখানে কোম্পানি আপনার PAYE, USC, PRSI বাদ দিয়ে বাকিটা আপনাকে পে করে। যা পরবর্তীতে কোম্পানি রেভিনিউকে ফেরত দিয়ে দেয়। তার মানে কি কোম্পানিই ঠিক করে, যে আপনার কত ট্যাক্স তারা কাটবে? উত্তর হল, না। কোম্পানি প্রত্যেকবার পে-রোল রান করার আগে RPN আপডেট করে নেয়। RPN হল ‘রেভিনিউ পে-রোল নোটিফিকেশন’, যার মাধ্যমে রেভিনিউর সাথে সংযুক্ত প্রত্যেক কর্মচারীর তথ্য কোম্পানির পে-রোল সফটওয়্যারে আপডেট হয়ে যায়। এখন আপনার যদি কোন তথ্যই রেভিনিউতে না থাকলে পে-রোল সফটওয়্যার সে RPN রিট্রিভ করতে পারবেনা, সুতরাং আপনার উপর ইমারজেন্সি ট্যাক্স ধার্য হবে। সাধারণত নতুন চাকুরীতে কেউ ঢুকলে এটা হয়, এজন্য কেউ নতুন চাকুরী শুরু করলে রেভিনিউ কে জানানো লাগে।

ওই রেভিনিউর তথ্যের উপর ভিত্তি করেই পে-রোল সফটওয়্যার নির্ধারণ করে আপনার কাট-অফ পয়েন্ট কি, ট্যাক্স ক্রেডিট কত, হায়ার রেটে ট্যাক্স কত আর লোয়ার রেটে কত ট্যাক্স আসে ইত্যাদি ইত্যাদি।
রেভিনিউ সাধারণত বছরের শুরুতে একটা স্ট্যান্ডার্ড ট্যাক্স ক্রেডিট সার্টিফিকেট ইস্যু করে যার উপর ভিত্তি করেই সারা বছরের ট্যাক্স নির্ধারণ করে। কিন্তু আপনি চাইলে সে ট্যাক্স ক্রেডিট এর পরিবর্তন আনতে পারেন। যার উপর ভিত্তি করে আপনার ট্যাক্সেরও উঠানামা নির্ভর করবে। তা করতে হলে আপনার অবস্থান সম্পর্কে রেভিনিউকে অবগত করতে হবে। যদি না করেন তাহলে রেভিনিউ জানবেনা যে আপনার অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে। সুতরাং রেভিনিউও তার স্ট্যান্ডার্ড ট্যাক্স ক্রেডিট সার্টিফিকেটের উপর ভিত্তি করে ট্যাক্স কেটে যাবে।

সুতরাং আমাদের করনীয় হল, রেভিনিউকে সবসময় আপডেট প্রদান করা।

পার্সোনাল ট্যাক্সের সাধারণ ধারণা 

ট্যাক্স ক্রেডিট কি?

ট্যাক্স ক্রেডিট হল এমন একটা ক্রেডিট যা আপনার ট্যাক্সকে কমাতে সাহায্য করে। বাই ডিফল্ট প্রত্যেক কর্মজীবী একটা স্ট্যান্ডার্ড ট্যাক্স ক্রেডিট পেয়ে থাকে। তা হল পার্সোনাল ট্যাক্স ক্রেডিট €১,৭৭৫ এবং এমপ্লয়ী ট্যাক্স ক্রেডিট €১,৭৭৫, মোট €৩,৫৫০ এর ট্যাক্স ক্রেডিট চোখ বন্ধ করে সবাই পেয়ে থাকে (সিঙ্গেল অ্যাসেসমেন্টের ক্ষেত্রে)।

যদি এই €৩,৫৫০ ট্যাক্স ক্রেডিট না থাকত তাহলে কি হত? ধরুন আপনার বাৎসরিক আয়ের উপর ট্যাক্স আসে €৫০০০, কিন্তু ট্যাক্স ক্রেডিট €৩,৫৫০ থাকার কারণে আপনাকে আর €৫০০০ টাকা ট্যাক্স দেয়া লাগতেছেনা। আপনি €৫০০০ থেকে €৩,৫৫০ বাদ দিয়ে কেবলমাত্র বাকি €১,৪৫০ টাকাই ট্যাক্স দিলেই হবে। যদি €৩,৫৫০ ক্রেডিট না থাকত তাহলে আপনাকে €৫,০০০ টাকাই ট্যাক্স দেয়া লাগত।

আগেই বললাম €৩,৫৫০ ট্যাক্স ক্রেডিট বাই ডিফল্ট সবাই পেয়ে থাকে। এখন চাইলে এই ট্যাক্স ক্রেডিট বাড়ানো যায়। ট্যাক্স ক্রেডিট বাড়া মানে কম ট্যাক্স প্রদান। ধরুন ট্যাক্স ক্রেডিট বেড়ে যদি €৪০০০ হয়, সেখানে যদি কারো €৫০০০ টাকাই বাৎসরিক ট্যাক্স আসে তাহলে তাকে ট্যাক্স দিতে হবে মাত্র €১০০০ টাকা, যেখানে উপরোক্ত হিসেব অনুযায়ী €৩,৫৫০ থাকার কারণে একই আয়ের ব্যাক্তিকে দিতে হচ্ছে মাত্র €১,৪৫০ ট্যাক্স।

এটা মনে রাখতে হবে যত বেশি ট্যাক্স ক্রেডিট তত কম ট্যাক্স লাইবিলিটি (বকেয়া)।

ট্যাক্স ক্রেডিট বাড়ানোর উপায় কি?

ট্যাক্স ক্রেডিট বাড়ানোর অনেকগুলো নিয়ম, পদ্ধতি ও উপায় রয়েছে। যার যে ক্রেডিট প্রাপ্য সে তার প্রয়োগ করতে পারে।

ধরুন আপনি আয়ারল্যান্ডে এসে বেশ কিছু বছর চাকুরী করেছেন। কিছুদিন আগে দেশে গিয়ে সদ্য বিবাহ করে আপনার বউকে নিয়ে এসেছেন, এসে আবার যথারীতি কাজে ফিরেছেন। কিন্তু আপনার স্পাউস আপাতত কোন চাকুরীতে প্রবেশ করে নাই। কিন্তু এই কথাটা রেভিনিউকে জানান নাই, যার কারণে আপনার ট্যাক্স আগের মতই কেটে নিচ্ছে রেভিনিউ। কারণ রেভিনিউ তখনো জানে আপনি সিঙ্গেল এবং সিঙ্গেল ব্যাক্তি হিসেবে আপনার ট্যাক্স ক্রেডিট €৩,৫৫০ ই আছে।

কিন্তু যদি আপনি রেভিনিউকে জানাতেন যে আপনি এখন বিবাহিত, আপনার স্পাউস চাকুরী করতেছেনা, তারা যেন আপনার জয়েন্ট অ্যাসেসমেন্ট করে। যা করলে আপনার পার্সোনাল ট্যাক্স ক্রেডিট সরাসরি €১,৭৭৫ দ্বারা বৃদ্ধি হয়ে যাবে। তার মানে হল আপনি বছরে €১,৭৭৫ ট্যাক্স অতিরিক্ত কম দেয়া লাগতেছে যা সিঙ্গেল অ্যাসেসমেন্টে সম্ভব ছিলনা।

তাহলে আপনার নিজের ট্যাক্স ক্রেডিট €৩,৫৫০ এবং আপনার স্পাউসের ট্যাক্স ক্রেডিট €১,৭৭৫ যোগ হয়ে মোট ক্রেডিট হবে €৫,৩২৫। এখন যদি আপনার বাৎসরিক ট্যাক্স €৫,০০০ আসে তাহলে ট্যাক্স ক্রেডিট €৫,৩২৫ থাকার কারণে আপনার কোন ট্যাক্সই দেয়া লাগবে না।

জয়েন্ট অ্যাসেসমেন্ট হচ্ছে একটা উল্লেখযোগ্য উপায় ট্যাক্স ক্রেডিট বাড়ানোর। জয়েন্ট অ্যাসেসমেন্ট করলে আরেকটা সুবিধা আপনার কাট-অফ পয়েন্টও বেড়ে যায়। কাট-অফ পয়েন্ট বৃদ্ধি মানে হচ্ছে আপনার লোয়ার রেটে ট্যাক্স হিসেবের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া। যেমন ২০২৩ এর রেট অনুযায়ী কারো যদি €৪০,০০০ এর নিচে ইনকাম হয় তাহলে তাকে ট্যাক্স দিতে হবে ২০% এবং এর উপরে গেলে ৪০%। কিন্তু যদি স্বামী স্ত্রী কিংবা সিভিল পার্টনারের শুধু একজন ইনকাম করলে কাট অফ পয়েন্ট €৪৯,০০০ পর্যন্ত হবে, তারমানে €৪৯,০০০ পর্যন্ত ২০% ট্যাক্স রেটে ট্যাক্স কাটবে। স্পাউসের দুইজনেই চাকুরী করলে কাট অফ পয়েন্ট €৮০,০০০ পর্যন্তও হতে পারে। তার মানে লোয়ার ট্যাক্স রেটে ট্যাক্স কাটবে এবং কম ট্যাক্স দিতে হবে।

এছাড়াও অন্যান্য ট্যাক্স ক্রেডিটও বিদ্যমান। যেমন আপনি যদি কারো দায়িত্ব বহন করেন। যেমন দেশে আপনার বাবা মায়ের দেখাশুনার জন্য টাকা পাঠান, অথবা কোন আত্মীয়ের দেখাশুনা করেন, আয়ারল্যান্ডে অথবা আয়ারল্যান্ডের বাহিরে, তার জন্য ব্যাক্তি অনুযায়ী কিছু ডিপেন্ডেন্ট রিলেটিভ ট্যাক্স ক্রেডিট খুব সহজেই ক্লেইম করতে পারেন।

আপনার বৎসরব্যাপী ডাক্তার খরচ, টিউশন ফি বাবদ খরচ গুলা ক্লেইম করতে পারেন। কিছু হিসেব আছে যা আপনার করার দরকার নেই, আপনি শুধু খরচের পরিমাণটা দিয়ে দেন, বাকি হিসেব রেভিনিউই করে নিবে।

আপনার যদি সন্তান থাকে এবং আপনার স্ত্রী চাকুরী করেনা কিন্তু আপনার সন্তানের দেখাশুনা করে, সেক্ষেত্রে হোম কেয়ারার হিসেবে ক্রেডিট ক্লেইম করতে পারেন। অনেকের ডিভোর্স হয়ে যায় গেলে এবং বাচ্চা থাকলে সিঙ্গেল প্যারেন্ট হিসেবে ট্যাক্স ক্রেডিট এবং স্বামী বা স্ত্রী মারা গেলে এবং সন্তান থাকলে উইডোড প্যারেন্ট ট্যাক্স ক্রেডিট রয়েছে।

এছাড়াও চাইল্ডকেয়ার ট্যাক্স ক্রেডিট, ইনক্যাপাসিটেড চাইল্ড ক্রেডিট, ব্লাইন্ড পার্সন ট্যাক্স ক্রেডিট, গাইড ডগ ট্যাক্স ক্রেডিট, বয়স্কদের জন্য ট্যাক্স ক্রেডিট, নতুন সংযোগিত ‘Stay & Save’ ট্যাক্স ক্রেডিটস ইত্যাদি অনেক ধরনের ট্যাক্স ক্রেডিট রয়েছে। যা যার যার অবস্থা অনুযায়ী এবং যিনি যে ট্যাক্স ক্রেডিট এর জন্য কোয়ালিফাইড তিনি কেবল সেই ট্যাক্স ক্রেডিটই ক্লেইম করতে পারবেন।

বোনাস টিপসঃ কারো স্পাউস যদি আয়ারল্যান্ডে PPS নাম্বার করার পর দেশে চলে যায়, স্পাউস অন্য দেশে থাকা সত্ত্বেও জয়েন্ট অ্যাসেসমেন্ট করা সম্ভব।

ট্যাক্স রিলিফ কি?

ট্যাক্স ক্রেডিটের মত ট্যাক্স রিলিফও ট্যাক্স কমাতে সাহায্য করে। তবে একটু ভিন্নভাবে।
ট্যাক্স ক্রেডিট মূলত সরাসরি ট্যাক্সকে কমিয়ে দেয়, আর ট্যাক্স রিলিফ সরাসরি ট্যাক্সের সাথে প্রয়োগ হয়না। ট্যাক্স রিলিফ টা মূলত আপনার মোট আয়কে কমিয়ে আনতে সাহায্য করে যার উপরই কেবলমাত্র আপনার ট্যাক্স এর হিসেব হবে। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পানির মত পরিষ্কার হয়ে যাবে।

ধরুন পূর্বের মত আপনার বাৎসরিক আয় €৩০,০০০ ইউরোই আছে। ধরুন আপনার একই বৎসরে ট্যাক্স রিলিফ পেলেন €১,০০০। তাহলে আপনার ট্যাক্স টা তখন আর €৩০,০০০ এর উপর হিসেব হবেনা, হবে €১,০০০ বাদ দিয়ে বাকি €২৯,০০০ এর উপর। তার মানে আপনি €১,০০০ এর উপর ২০% ট্যাক্স আর দিচ্ছেন না, এতে আপনি €২০০ ট্যাক্স কম দিচ্ছেন।
ট্যাক্স ক্রেডিটের মত ট্যাক্স রিলিফ পাওয়ারও অনেকগুলা উপায় রয়েছে। যেমন অনেকে PRSA বা পার্সোনাল রিটায়ার্মেন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্টে কন্ট্রিবিউট করে, যেটা পেনশন স্কিম এর মত। সুতরাং একজন ব্যাক্তি যে পরিমাণ PRSA স্কিমে দিয়ে থাকে তার একটি নিদৃস্ট % বয়সভেদে রিলিফ পেয়ে থাকে। ওই রিলিফ তার বাৎসরিক আয় থেকে বাদ দিয়ে তাকে ট্যাক্স প্রদান করতে হয়।

আবার ধরুন করোনাকালীন সময়ে অনেকে বাসা থেকে কাজ করতে হয়েছে। সরকার এর উপর ই-ওয়ার্কিং রিলিফের সংযোজন করে। বাসা থেকে কাজ করার ফলে অনেকের অতিরিক্ত ইলেক্ট্রিসিটি বা গ্যাস বিল, ইন্টারনেট ও টেলিফোন বিল দিতে হয়েছে, তার উপর হিসেব করে একটা রিলিফ ক্লেইম করা যাবে।

এছাড়াও রেন্ট এ রুম ট্যাক্স রিলিফ, ফ্ল্যাট রেইট এক্সপেন্স ট্যাক্স রিলিফ, বাইক টু ওয়ার্ক ট্যাক্স রিলিফ, মেডিকেল এক্সপেন্স ট্যাক্স রিলিফ, মেডিকেল ইনস্যুরেন্স ট্যাক্স রিলিফ ইত্যাদি। ট্যাক্স ক্রেডিটের মতই যার যার অবস্থা অনুযায়ী এবং যিনি যে রিলিফের জন্য কোয়ালিফাইড তিনি সে রিলিফ এর জন্য উপযুক্ত।

সারমর্ম হল উভয়ই ট্যাক্স ক্রেডিট এবং ট্যাক্স রিলিফ আপনার ট্যাক্স কমাতে সাহায্য করবে। প্রথমত হল আপনি আপনার অবস্থা বিবেচনা করবেন, এর পর দেখবেন আপনি কোন ক্রেডিটটি অথবা কোন রিলিফটি পাবার জন্য উপযুক্ত, সে অনুযায়ী আপনার প্রাপ্য ক্রেডিট বা রিলিফের জন্য সরাসরি ক্লেইম করতে পারবেন।

প্রোপার্টি/ব্যক্তিগত বাড়ি সম্পর্কিত ইনসেন্টিভ ও ক্রেডিট

যারা নতুন বাড়ি কিনতে বা তৈরি করতে চান তারা কিছু ট্যাক্স ক্রেডিট ক্লেইম করতে পারবেন। সেটা নগদ খরচের ক্ষেত্রে ও মর্টগেজ নেয়ার ক্ষেত্রেও হতে পারে। নতুন নিয়মে সর্বোচ্চ €৩০,০০০ পর্যন্ত পেতে পারেন। কেউ নতুন বাড়ি কিনতে চাইলে অতবা মর্টগেজ নিতে চাইলে আগে রেভিনিউতে ‘’হেল্প টু বাই’’ স্কিমে আবেদন করে নিতে হবে। তবে এর আগে নিয়মগুলো ভালো করে দেখে নিবেন।

কারো যদি বাড়ি থেকে থাকে তারাও কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স রিলিফ ও ক্রেডিট পেতে পারেন। যেমন হোম রিনোভেশন ইনসেন্টিভ, মর্টগেজ ইন্টারেস্ট রিলিফ, রেন্ট এ রুম রিলিফ, সিটি কাউন্সিলের অধীনে যাদের বাড়ি তাদের জন্য LCI রিলিফ ইত্যাদি। তবে সর্বক্ষেত্রেই কিছু নিয়ম এবং শর্ত রয়েছে, ক্লেইম করার আগে দেখে নিতে হবে আপনি সেই শর্তগুলো পূরণ করেন কিনা।

কিভাবে ক্লেইম করবেন?

আপনার অবস্থান যখনই পরিবর্তন হবে তখনি আপনি আপনার অবস্থান রেভিনিউতে হালনাগাদ করে নিতে পারেন। যেমন ধরুন বছরের মাঝামাঝিতে আপনার বিবাহ হল, তখনি আপনি রেভিনিউতে জয়েন্ট অ্যাাসেসমেন্ট এর ফর্ম পূরণ করে দিয়ে দিতে পারেন, তাহলে সে অনুযায়ী রেভিনিউ আপনার ট্যাক্স ক্রেডিট হালনাগাদ করে নিবে। এভাবে যে কোন পরিবর্তনই রেভিনিউতে জানাতে পারেন।

রেভিনিউ অনলাইন সার্ভিস এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র যেখানে খুব সহজেই আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য, অবস্থান ও ক্লেইম করতে পারেন। যার জন্য রেভিনিউতে অ্যাকাউন্ট থাকা খুবই জরুরি। যাদের অ্যাকাউন্ট নাই অতবা অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে অবগত না তারা দেরি না করে আজই করে ফেলুন।

যাদের আপাতত অ্যাকাউন্ট নাই অথবা থাকলেও কিভাবে তা পরিচালনা করতে পারেন না অথবা কোন বিষয় বুঝতে কষ্ট হচ্ছে সেক্ষেত্রে রেভিনিউর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। সেটা ফোন করে হতে পারে অথবা সরাসরি গিয়েও করতে পারেন। আবার কিছু কিছু জিনিস আছে তা চাইলেও অনলাইন থেকে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে রেভিনিউর সাথে যোগাযোগ করাই শ্রেয়।

নতুন সংযোজিত ট্যাক্স ক্রেডিট এবং ট্যাক্স রিলিফ – ক্লেইম করতে ভুলবেন না

বার্ষিক রিটার্ন

আপনি সবগুলো ট্যাক্স ক্রেডিট এবং রিলিফ একসাথে বার্ষিক রিটার্নে ক্লেইম করে নিতে পারেন। এতে আপনার অব্যবহৃত ট্যাক্স ক্রেডিট এবং রিলিফ, যেগুলা বৎসরব্যাপী ক্লেইম করা হয় নাই এবং যার ফলশ্রুতিতে অতিরিক্ত ট্যাক্স দিয়ে আসছিলেন, সে অতিরিক্ত ট্যাক্স আপনি ফেরত পাবেন বাৎসরিক রিটার্ন এর মাধ্যমে।

বাৎসরিক রিটার্ন মূলত একটা ফর্ম, যেটা P21 নামে পরিচিত। যেখানে আপনার বছরের সব আয় হালনাগাদ করবেন। আপনার সকল PAYE সংক্রান্ত আয় ওইখানে হালনাগাদই থাকে, PAYE ছাড়া যদি অন্য আয় থেকে থাকে তাহলে তা ওইখানে দিয়ে দিতে পারেন। আপনার সমস্থ ক্রেডিট এবং রিলিফ ওখানেই প্রয়োগ করতে পারেন।

সেখানে আপনার কিছু তথ্য এবং জয়েন্ট অ্যাসেসমেন্ট হলে স্পাউসের তথ্যও দেখতে পাবেন। ব্যাক্তিগত তথ্যের পরিবর্তন হলে সেখানে তার আপডেট করে নিতে পারবেন। ব্যাংক ডিটেইলস ঠিক আছে কিনা দেখে নিবেন, যেখানে আপনার রিফান্ড ফেরত যাবে।

সব রিভিউ করে ঠিক থাকলে জমা দিয়ে দিতে পারেন। এরপর রেভিনিউ রিটার্ন ভ্যারিফাই করে দেখে সর্বশেষ স্টেটমেন্ট অব লাইবিলিটি ইস্যু করবে। যেটা হবে আপনার বৎসরব্যাপী আয়ের এবং ট্যাক্সের হিসেবনামা। আগে কোম্পানি তার কর্মচারীদেরকে বছর শেষে P60 ইস্যু করে দিত, এখন তা আর করেনা। সুতরাং স্টেটমেন্ট অব লাইবিলিটিই আপনার বর্তমান P60, যা বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করতে পারেন।

মনে রাখতে হবে রেভিনিউ ট্যাক্স ক্রেডিট এবং রিলিফের প্রমাণস্বরূপ ডকুমেন্ট চাইতে পারে। সুতরাং সে ক্রেডিটই ক্লেইম করবেন যেটা আপনার প্রাপ্য, যাতে রেভিনিউ অথরিটি থেকে চাইবামাত্র দিতে পারেন।

অনেকে বিগত অনেক বছরই রিটার্ন জমা দেন নাই। চাইলে সর্বোচ্চ চার বছর পর্যন্ত রিটার্ন জমা দিতে পারেন। যারা বিগত বছরগুলোতে ট্যাক্স ক্রেডিট জমা দেন নাই উনাদের জন্য জন্য পরামর্শ যে রিটার্ন জমা দেয়ার। এতে কিছু অতিরিক্ত ট্যাক্স ফেরত পেলেও পেতে পারেন, যদি আপনার কোন অব্যবহৃত ক্রেডিট থেকে থাকে।

সর্বশেষ

শুরুতেই বলেছি ট্যাক্স ব্যপারটা একটু জটিল। বহু শর্ত, নিয়ম, রেট, সময়ের বেড়াজালে ভরপুর। এই আর্টিকেলও সব বিষয় তুলে আনা হয় নাই। তবে সবার জন্য সব নিয়ম প্রযোজ্য নয়, সবার জন্য সব ট্যাক্সের রিলিফ ও ক্রেডিট নয়, সবাই সব রিলিফ ও ক্রেডিট এর জন্য প্রাপ্যও নয়। আপনি শুধু আপনার অবস্থা বিবেচনা করে শুধু মাত্র সে অনুযায়ী আপনার রেভিনিউ অ্যাকাউন্টটা হালনাগাদ রাখেন।

সবসময় দুইটা বিষয় মাথায় রাখবেনঃ
১। বছরের মধ্যে বা বছর শেষে আপনার ব্যাক্তিগত অবস্থান রেভিনিউতে হালনাগাদ/আপডেট রাখবেন
২। বছর শেষে বার্ষিক রিটার্ন জমা দিবেন।

ফ্রি হেল্পলাইন 

ব্যক্তিগত ট্যাক্সের সব কিছু আপনি নিজেই করতে পারেন। এই আর্টিকেলে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই ধারনা দেয়া হয়েছে। তারপরেও যদি কারো কোন বিষয়ে কিছু জানার থাকে অথবা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন তাহলে Irish Bangla Times হেল্পলাইনে নিঃসঙ্কোচে যোগাযোগ করতে পারেন। আমাদের এই সেবা দ্বারা অতীতে অনেকেই উপকৃত হয়েছে, আপনিও উপকার পেতে পারেন। মনে রাখবেন সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

সেবা পেতে নিম্নোক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারেনঃ

Email: newton.acca@gmail.com & info@irishbanglatimes.com
Facebook message: www.facebook.com/theirishbanglatimes
Phone: 0838732429 (Please text only. Type your name and TAX & we will call you back)

Facebook Comments Box