শ্রমিকদের দায়িত্ব নেয়ার প্রতিশ্রুতি রুবানার

0
806

রোজার ঈদের আগেই সব তৈরি পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার পরিকল্পনা করছে বিজিএমইএ৷ করোনায় আক্রান্ত শ্রমিকদের দায়িত্ব নেয়ার প্রতিশ্রুতিতে কারখানা খুলছেন মালিকেরা ৷ যদিও এখনও প্রায় তিনশ কারখানার শ্রমিকরা বেতন পাননি৷ বিজিএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আরশাদ জামাল জানিয়েছেন, ঈদের আগেই সব তৈরি পোশাক কারখানা খুলে যাবে৷ আর তৈরি পোশাক মালিকদের এই সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘করোনায় কোনো শ্রমিকের কিছু হলে সব দায়িত্ব আমরা নেব৷’
বিজিএমইএ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকা, গাজীপুর, সাভার , আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের প্রায় ৮৯০টি কারখানা চালু হয়েছে৷ শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়েছেন৷ মোট শ্রমিকদের ৪২ ভাগ কাজে যোগ দিতে পেরেছেন৷
আরশাদ জামাল দিপু বলেন, ‘আমরা ফেইস বাই ফেইস পোশাক কারখানা খুলে দেব৷ বাইরের জেলাগুলো থেকে যেহেতু যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে তাই সেখান থেকে শ্রমিকদের আসতে নিষেধ করেছি ৷ তবে আগামী ৭ তারিখের পরে এই সমস্যা থাকবে না বলে মনে হয়৷ ঈদের আগে অবশ্যই সব পোশাক কারখানা খুলে দেয়া যাবে৷’
বিজিএমইএ বর্তমানে যে কারাখানাগুলোর হিসেব দিচ্ছে সেগুলো আসলে সরাসরি পোশাক রপ্তানি করে৷ বিজিএমই বলছে এ রকম পোশাক কারখানার সংখ্যা দুই হাজার ২৭৪টি ৷ সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোতে ২৪ লাখ ৭২ হাজার ৪১৭ জন শ্রমিক আছেন৷
কিন্তু বাস্তবে পোশাক কারখানার সংখ্যা সারাদেশে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি – কারণ অনেক কারখানা আছে যারা সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করে৷ এসব কারখানায় ৫০ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করেন৷ শিল্প পুলিশ সূত্র জানায়, সারাদেশে এপর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজারের বেশি পোশাক কারখানা খুলেছে৷ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘আমাদের হিসেবে সারাদেশে তিন হাজারের মতো পোশাক কারখানা খুলেছে৷ ১ মে এর পর ধীরে ধীরে সব কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷’

বিজিএমইএ বলছে, কারখানাগুলোর ভেতরে এবং শ্রমিকদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই কারখানাগুলো খোলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷ এটা নিশ্চিত করার জন্য মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে৷ রুবানা হক আরো জানান, ‘যেসব কারখানা খোলা হয়েছে তার ভেতরের ছবি আমরা সংগ্রহ করছি যাতে সেখানকার পরিস্থিতি বোঝা যায়৷ কেউ যদি কোভিড আক্রান্ত হন তা যেন গোপন করা না হয়৷ আমাদের ওয়াচ কমিটি আছে৷ আমাদের সাথে চিকিৎসকরা আছেন৷ কোনো শ্রমিক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, বিপদে না পড়েন সেটা আমরা দেখব৷ যদি কোনো শ্রমিকের কোনো কিছু হয় তাহলে সম্পূর্ণ দায়ভার আমাদের৷ আমরা তার খরচ থেকে শুরু করে সবকিছু দেখব – শ্রমিকদের করোনা টেস্টের জন্য চারটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনেরও উদ্যোগ নিয়েছি৷’
তিনি আরো বলেন, ‘যেইসব শ্রমিক আগেই এসেছেন বা গ্রামের বাড়িতে যাননি তাদের দিয়েই কারখানা খুলছি সীমিতভাবে৷ কোনো কোনো শ্রমিক বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে চাকরির জন্য৷ তাদের আমরা নিরুৎসাহিত করছি৷ তাদের আমরা এপ্রিল মাসের বেতন পৌঁছে দেব৷’
তবে সারাদেশে জরুরি সেবার বাইরে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও শ্রমিকরা বিভিন্নভাবে পোশাক কারখানায় ফিরছেন৷ বিশেষ করে ফেরিঘাটগুলোতে শ্রমিকদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা যাচ্ছে৷ শ্রমিক নেতা সিরাজুল বলেন, ‘কারখানাগুলোতে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও সামজিক দূরত্বের কিছু ব্যবস্থা নেয়া হলেও বাস্তবে তা পর্যাপ্ত নয়৷ সব কারখানা মেশিনগুলোর দূরত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি৷ তবে মালিকরা বলেছে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে চিকিৎসার দায়িত্ব নেবেন৷’

গত তিন মাসে পোশাক কারখানার সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ ভাগের মতো অর্ডার বাতিল হয়েছে৷ যার পরিমাণ তিন বিলিয়ন ডলারের কিছুটা বেশি৷ তবে এটাকে পুরোপুরি বাতিল বলা যাবে না৷ বিজিএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আরশাদ জামাল দিপু জানান, ৩০ ভাগের মতো অর্ডার বাতিল হয়েছে৷ আরও ২৫ থেকে ৩০ ভাগের মতো অর্ডার হোল্ড আছে৷ অর্ডার হোল্ড, বাতিল, বিলম্ব সব মিলিয়ে ৬০ ভাগ হবে৷’ তিনি বলেন, ‘মাসে দুই থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়৷ সেই হিসেবে তিন মাসে সাত বিলিয়ন ডলার বা তার কিছু বেশি অর্ডার ছিল৷’
তবে এই সব অর্ডার শেষ পর্যন্ত বাতিল হবে না৷ অর্ডার ফিরে আসছে৷ আবার কিছু অর্ডার হয়তোবা পরের বছর অ্যাডজাস্ট হবে৷ সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত ২৫ ভাগ অর্ডার চূড়ান্তভাবে বাতিল হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিজিএমইএর এই সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট৷ তিনি বলেন, ‘ক্রেতারা তো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি৷ ইউরোপ এর ৬২ ভাগ দোকান বন্ধ৷ কিন্তু চীনে খুলছে৷ আরও কিছু কিছু দেশে ক্রেতারা তাদের ব্যবসা খুলতে শুরু করেছে৷ ফলে ক্যান্সেল বা স্থগিত হওয়া অর্ডার আবার ফিরে আসছে৷ সুইডেনতো বলেই দিয়েছে অর্ডারের টাকা আমাদের দিয়ে দেবে৷
বিজিএমইএ জানায়, এই পর্যন্ত অর্ডারের ৩.১৫ বিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে ক্রেতাদের কাছ থেকে৷ যারা অর্ডার ক্যান্সেল করেছে তাদের কেউ ১৮০ দিন পরে পেমেন্ট করার কথা বলছে৷ কিন্তু কাঁচামালের দায় কে নেবে? বাংলাদেশের পোশাক খাতে এখনো নতুন অর্ডার আসা শুরু হয়নি৷ মোটামুটি দেড় মাসের অর্ডার জমে আছে৷ যেগুলো না দিলেই নয় সেইগুলো এখন সীমিত পরিসরে তৈরি করে দেয়া হচ্ছে বলে জানায় বিজিএমইএ৷

Facebook Comments Box