দরবেশ বাবার করকমলে – সাজেদুল চৌধুরী রুবেল

0
2413
Dorbesh_Baba

দরবেশ বাবার করকমলে
সাজেদুল চৌধুরী রুবেল


 

দেশে কোনো মানুষ নেই। ন্যায্য কথা বলার লোক নেই। প্রতিবাদ করার সাহস নেই। জবাব দিহীতা নেই। জবাব আদায় করার লোক নেই। আছে শুধু চৌর্যবৃত্তি, তেলবৃত্তি, দলবৃত্তি ও দালালবৃত্তি। দেশে সংগঠন আছে, সাংগঠনিক কাঠামো নেই। আইন আছে, আইনের প্রয়োগ নেই। কোর্ট আদালত আছে, স্বাধীনতা নেই। সংবিধান আছে কিন্তু এর বিধান নেই। স্বাধীনতা আছে কিন্তু এর মর্মবাণী নেই। রাজনীতি আছে, রাজনৈতিক দল আছে কিন্তু রাজনৈতিক নেতা নেই। আছে রাজনৈতিক মস্তান। সোসাল মিডিয়ার কল্যাণে এমন এক মস্তানের ডিজিটাল সাক্ষাত মেললো আজ।

সম্ভবত দু চারদিন আগে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল একটি টক শোর আয়োজন করে। সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের সঞ্চালনায় এ টক শোতে অতিথি হিসেবে অংশ নেন জনাব সালমান এফ রহমান ও জনাব ফরহাদ মজহার। জনাব মজহারের প্রশ্নের উদ্বৃতি টেনে জনাব খালেদ মি রহমানকে হুবুহু সেই প্রশ্নটি করলে তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন। যেনো আঁতে ঘা লেগে যায়। খালেদ সাহেবের প্রশ্নকে “স্টুপিড প্রশ্ন” আখ্যায়িত করে তাঁকে সাংবাদিকতার সবক শেখানোর চেষ্টা করছেন। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন। বিষোদগার করেছেন। মোট কথা, তার কথা বলার বাচনভঙ্গি ও ধরণ দেখে মনে হচ্ছিল তিনি সম্ভবত ভুলেই গিয়েছিলেন যে জনগণ তার অসভ্যতা ও অসৌজান্যতা দেখছে।

অবশ্য জনগণ দেখলেই বা তার কি! তিনি তো আর এসবের কেয়ার করেননা। তার গরম মেজাজ জনগণকেই উল্টো ভীত সন্ত্রস্ত করে। কারণ তিনি যে কেবোল রাজনৈতিক মস্তান তা তো নয়, অনেকের মতে দরবেশ বাবাও বটে। দরবেশ সাহেবের অঙ্গুলি হেলনে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে। অলৌকিক ক্ষমতা বলে দিনকে রাত, রাতকে দিন কিংবা কালোকে সাদা বানিয়ে দিতে পারেন। এরকম একজন দরবেশের সমালোচনা বা বিরুদ্ধাচরণ করে নিজের বিপদ ডেকে আনবে এমন বুকের পাটা কয়জনের আছে! নেই বলেই তিনি বা তার মতো ব্যাক্তিবৃন্দ নিজেদেরকে রাজনৈতিক সন্ত্রাসীতে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তারা এতোই বেপরোয়া ও এতোই শক্তির অধিকারী যে তাদের পকেটে সরকার বন্দী ও তাদের কাছে দেশ জিম্মি। অন্যথায় সালমান এফ রহমানের মতো ব্যাক্তিরা এতোটা লাগামহীন হতে পারতো না।

মি রহমান একজন বয়োজ্যেষ্ঠ প্রবীণ ব্যাক্তি। তিনি একজন রাজনীতিবিদ। তিনি একজন ব্যবসায়ী। সরকারি দলকেও তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন। তার কর্মকাণ্ড, আচরণ ও বাচনভঙ্গি হবে অনুকরণশীল। ব্যাবসা ও রাজনীতির আইকন ভেবে নতুন প্রজন্ম তাকে স্যালুট দেবে। তার আদর্শকে বুকে ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। অথচ অপ্রিয় হলেও সত্য এই যে, তিনি তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেকে বিতর্কিত করছেন। চরম দোষে দুষ্ট করে তুলেছেন। যা কিনা কেবল তার নিজের জন্যই লজ্জার নয়, এ লজ্জা পুরো দেশ ও জাতির। এ লজ্জার প্রতিবাদ না জানানোটা আরও বেশি লজ্জার। তাই দেশে যেসব রথী মহারথীরা আছেন তারা কিছু বলুন আর না বলুন আমি বলবোই। আমার কাছে যা সত্য বলে মনে হয়, আমার বিবেককে যা নাড়া দেয় তা নিয়ে আমি লিখি, কথা বলি। বন্ধু হলেও বলি। স্বজন হলেও বলি। শত্রু হলেও বলি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করা আমার রক্তের ধর্ম। এতে কে কি বলবে বা কে কি ভাববে সে ধার আমি ধারিনা। আগাছা সমেত প্রাণীদের সস্তা গুণকীর্তনে গুনী হয়ে ওঠার নিম্ন বাসনা আমার নেই।

সালমান এফ রহমান সাহেবকে বলতে চাই, আপনি একজন রাজনীতিক। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতি নির্ধারকদের একজন। আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী হিসেবে রয়েছে আপনার খ্যাতি। যেহেতু আপনি একজন পাবলিক ফিগার সেহেতু শুধু খালেদ নয়, যে কোনো সাংবাদিক আপনাকে যে কোনো ধরনের প্রশ্ন করতে পারে। সেটা স্টুপিড কোশ্চান হতে পারে। ওয়াইজ কোশ্চান হতে পারে। আপনার ফেবারেট হতে পারে আবার নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে ক্ষেপে গেলে চলবেনা।

ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার সাথে তা মোকাবিলা করতে হবে। গরু রাখালের মতো রূঢ়তা বা উগ্রতা দেখিয়ে নয়। এর নেতিবাচক প্রভাব শুধু আপনাকেই খাট করেনা, সরকারের ভাবমূর্তিকেও নষ্ট করে। সরকারের অনেক সাফল্য ও অর্জনকেও মলিন করে দেয়।

একটু বিনয়, আদর্শ বা বয়সের ভারসাম্যবোধ বজায় রাখা কি খুব কঠিন? সম্পদের অহম থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা কি খুব দুঃসাধ্য? আর সে অহম আপনি সমাজে প্রকাশই করবেন কেনো? আপনার ব্যাংক ভর্তি টাকা আছে, সম্পদের পাহাড় আছে তাতে আমার কি? আমি বা আমরা আপনার খাই না পড়ি? তাহলে আমাদেরকে আপনার অগ্নিমেজাজ দেখাবেন কেনো? আপনি যতোই সম্পদশালী হোন না কেনো আপনার আর আমার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আপনি যে বাজারের ভাত খান, যে বাজারের মাছ খান আমিও সেই বাজারের মাছ ভাত খাই। আপনি খেতে বসলে রুই মাছের একটি বা দুটো টুকরোই খেতে পারেন। এর বেশি পারেন না। আমিও ঠিক তেমনি। আপনি মারা গেলে যতোটুকু কাপনের কাপড় পড়ানো হবে আমাকেও ঠিক ততোটুকু। সাড়ে তিন হাত জায়গার মধ্যে আপনাকে যেভাবে শুইয়ে দেয়া হবে আমাকেও ঠিক তেমনি। তাই মানুষকে মানুষ ভাবতে শিখুন। পেশাগত মর্যাদাকে মূল্যায়ন করুন। এতে আপনার যেমন মঙ্গল নিহিত তেমনি দেশ ও জাতিরও।

৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১
লেখক- প্রাবন্ধিক ও কলামিসট

Facebook Comments Box