সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ পেয়ে পৈশাচিকতার জন্য কিছু উম্মাদ গর্দবরা সব সময় প্রস্তুুত থাকে। কিন্তুু মূল নাশকতা চালানোর জন্য পরিকল্পনাকারীরা পিছনে নিয়োজিত থাকে। তারপর সুযোগ বুঝে তাঁরা ধর্মীয় উপাসনালয়/বাড়ি-ঘর ভাঙতে গুন্ডাদের লেলিয়ে দেয়।
এই সব ঘটনার আলামত দেখে এধর্ম -ওধর্মের লোকদের মধ্যে নানান রকম নীতিবাক্য বর্ষণ শুরু হয়। এরপর এদিক-ওদিক থেকে ছুড়া হয় অভিযোগের তীড়। কিন্তুু কেউই জানেনা যে, এগুলোর সঙ্গে ধর্ম ও ধার্মিকতার কোনো সর্ম্পক নেই। সাম্প্রদায়িক উম্মাদদের কোনো ধর্মীয় পরিচয় নেই। নিজেদের লাভ-ক্ষতির জন্য এই উম্মাদগুলো পৈশাচিকতায় মেতে উঠে।
তবে সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদের দেশে যখন সংখ্যালুঘুদের উপর এই ধরণের ঘটনা ঘটে তখন সংখ্যগরিষ্টদের উপর সব দোষ বর্তায়। যার ফলে পুরো মুসলমান সম্প্রদায়কে জঙ্গিবাদের গালি শুনতে হয়।
বিষয়টি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। মুসলমানরা কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক এবং উগ্র নয়। এইটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। ইসলাম কোনো উগ্রবাদের ধর্ম নয়। ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যবোধের শিক্ষা দেয় ইসলাম। এ- ক্ষেত্রে নবী করিম (সা:) এর একটি হাদিস এখানে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য
হজরত সুফিয়ান ইবনে সালিম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জেনে রেখ! কোনো মুসলমান যদি অমুসলিম নাগরিকের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করে, কোনো অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করে, তার কোনো জিনিস বা সহায়-সম্পদ জোরপূর্বক কেড়ে নেয়; তবে কেয়ামতের দিন আল্লাহর বিচারের কাঠগড়ায় আমি তাদের বিপক্ষে অমুসলিমদের পক্ষে অবস্থান করবো।’ (আবু দাউদ) অন্য কোনো ধর্ম গ্রন্হে এই ধরণের কঠোরতা রয়েছে বলে আমার জানা নেই।
বাংলাদেশে যেহেতু শতকরা ৯০/৯৫ (মতান্তরে ) মুসলমান বাস করেন সেহেতু অমুসলিম নাগরিকদের খেয়াল রাখতে হবে যাহাতে তাদের কোনো উস্কানিমুলক কর্মকান্ড এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে যেনো কোনোভাবে আঘাত না করে।
সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যবোধের পরিবেশ নিশ্চিত রাখতে সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে হবে সবাইকে। প্রত্যেক ধর্মে কিছু উগ্রবাদি উম্মাদ থাকে যারা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় উম্মাদনায় শুরু করে নিজেদের ফায়দা নিতে চায়।
বাংলাদেশে বা পৃথিবীর যে-প্রান্তেই এমন ঘটনা ঘটুক, সেটা খুবই সুপরিকল্পিত এবং এর প্রতিটির পেছনে থাকে রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্য ও নষ্ট রাজনীতির কালো হাত। আর তাহা না হলে কোনো এক জায়গার ঘটনার প্রতিক্রিয়া দেশের অন্য জায়গায় এত দ্রুত ছড়ায় কি করে? এগুলো সংগঠিত করতে সময় লাগে, উদ্যোগ নিতে হয়।
রামু,নাসিরনগর ,শাল্লা ও কুমিল্লা সবগুলোই একইসূত্রে গাঁথা। নাসিরনগরের ঘটনায় চার্জশীর্টভুক্ত আসামীরা ক্ষমতাসীনদের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের নমিনেশন পর্যন্ত পেয়েছেন (ডেইলি স্টার)। শাল্লার ঘটনার প্রধান অভিযুক্তকারী ক্ষমতাসীনদের স্হানীয় একজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন বলে জাতীয় পত্রিকাগুলোতে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। রামুতে একই অবস্হা। সামনে কতিপয় লেবাসধারী ধার্মিকরা থাকলেও পেছন থেকে ইন্ধন যুগিয়েছে সেই নষ্টা রাজনীতির কালো হাত।
কুমিল্লার ইসকন মন্দির ও পূজোমন্ডপে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সেখানকার সরকার দলীয় এমপি ও মেয়রের ব্যক্তিগত কোন্দলকে দায়ী করেছেন স্হানীয় সহ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা। হিন্দু মহাজোটের নেতা গোবিন্দ চন্দ্র প্রামনিক সম্প্রতি ফেস দ্যা পিপল টকশোতে এই অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন তাঁর দলের পক্ষ থেকে সরজমিনে ঘটনা তদন্তের জন্য যখন কিছু লোকদের সেখানে পাঠানো হয়েছিলো তখন তাঁরা সেখানকার বিভিন্ন লোকদের সাথে কথা বলে এই তথ্য জানতে পেরেছেন।
দুর্গা পূজাকে উপলক্ষ্য করে কুমিল্লার এক পূজো মন্ডপে স্পর্শকাতর একটা উস্কানিমূলক দৃশ্য তৈরি করার মাধ্যমে দেশের নানান জায়গায় যেসব প্রাণহানি, বলাৎকার, ধংসলীলা ও জঘণ্য যে সব সব ঘটনা ঘটেছে তার পেছনে রয়েছে সেই অপরাজনীতির নোংরা হাত ও পরিকল্পনা। এটি বুঝার জন্য রকেট সাইন্স জানার প্রয়োজন নেই। কুমিল্লাতে কোরআন অবমাননার ঘটনা ঘটেছিল অষ্টমিতে। তাৎক্ষণিক দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্হা জোড়দার করলে নবম ও দশমিতে মন্দির ও পূজোমন্ডপে এই হামলা এবং ক্ষয়ক্ষতি হতোনা।
তাহলে পূজোমন্ডপ গুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্হা কেন জোড়দার করা হলোনা ? প্রশ্নটি উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বুকে যখন রক্তক্ষরন হচ্ছিল তখন চাঁদপুরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল বের করেছিলেন স্হানীয় মুসল্লিরা। কিন্তুু হঠাৎ করে মিছিলের পেছন থেকে একদল লোক হামলা চালায়। এই হামলাকে কেন্দ্র করে পরিস্হিতি উত্তপ্ত হওয়ায় পরবর্তীতে সেখানকার পূজোমন্ডপে হামলা হয়। তারপর পুলিশের গুলিতে সেখানে কয়েকজন মৃত্যবরণ করেন।
চাঁদপুরের সেই মিছিলের পেছনে হামলাকারীরা কারা ছিল ? কেন উস্কানি দেওয়া হয়েছিলো সে দিন ?এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ধর্মীয় চশমা ছাড়া খোঁজতে হবে। তাহলে পাওয়া যাবে এর সঠিক উত্তর।
যাক ঘটনা তো ঘটে গিয়েছে কিন্তু কী উদ্দেশ্যে বা ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে এগুলো ঘটানো হলো তা এখনো পরিস্কার নয়। সামনে নির্বাচন। জঠিল সমীকরণ। পরিকল্পনা দেশী নাকি বিদেশী সেটা ঠান্ডা মাথায় পর্যােলোচনার দাবী রাখে। এই পর্যালোচনা থেকে হয়তো জানা-বুঝা যাবে কিংবা যাবে না, কিন্তু যে ক্ষত ও ক্ষতি হয়ে গেলো তা তো সহজে মুছবে না। দেশের বিভিন্ন স্হানে ঘটে যাওয়া সকল জগণ্য কাজের জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। তবে ভবিষ্যতের জন্য চোখ-কান খোলা রাখা দরকার সবার।
পরিশেষে এতঠুকু বলবো, ধর্ম -বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশ হউক সবার। ধর্ম যার যার, মানবতা হউক সবার। এই প্রত্যাশা নিরন্তর।
– ধন্যবাদ
এস,এ,রব
Facebook Comments Box