২০০১ সল্ থেকে মার্কিন সেনাবাহিনী আফগানিস্তানে অবস্থান করে আসছে। তালেবান সৈন্যদের সাথে মার্কিনিদের ও নেটোর যে যুদ্ধের অবতারণা হয়েছিল ৯/১১ এর মধ্য দিয়ে তা অবশেষে শেষ হতে যাচ্ছে। দোহাতে গতকাল ২৯শে ফেব্রুয়ারী ,শনিবার মার্কিন কর্মকর্তা এবং তালেবান প্রতিনিধিদের এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কাতারের রাজধানীতে কয়েক মাস ধরে আলোচনার পরে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন।
পাকিস্তান, কাতার, তুরস্ক, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, উজবেকিস্তান এবং তাজিকিস্তানের নেতাদের উপস্থিতিতে দোহার স্বাক্ষরিত শনিবারের এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রকে ধীরে ধীরে তার সেনা প্রত্যাহারের পথ প্রশস্ত করবে। এই চুক্তিটির নামকরণ করা হয়েছে “আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনার চুক্তি”
শনিবার দোহায় একটি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং তালেবানের উপ-নেতা মোল্লা বড়দার উপস্থিত বিশিষ্টদের স্বাগত বক্তব্য প্রদান ককরেন।
এই চুক্তি মার্কিন দূত জালময় খলিলজাদ স্বাক্ষর করেছেন এবং এই বারই মার্কিন মন্ত্রিসভার কোনও সদস্য তালেবান বিদ্রোহের সদস্যদের সাথে প্রথম কোন সাক্ষাত করেছেন।
তালেবানরা আল-কায়েদা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী দলগুলির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে এবং আফগান সরকার কে তারা মার্কিনী পাপেট বলে সম্বোধন করতো, তাদের সাথে শান্তি আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে। যার বিনিময়ে ওয়াশিংটন পর্যায়ক্রমে সেনা প্রত্যাহার শুরু করবে বলে ওয়াদা বদ্ধ হয়েছে।
পরবর্তী ১৩৫ দিনের মধ্যে মার্কিনী সৈন্যে পর্যায়ক্রমে কমিয়ে ৮,৬০০ করা হবে এবং পাঁচটি মার্কিনি ঘাঁটি বন্ধ করা হবে।
যদি উভয় পক্ষই তাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে তবে সমস্ত মার্কিন সামরিক বাহিনী ২০২১ সালের শেষের দিকে আফগানিস্তান ছেড়ে যেতে পারে, যদিও ওয়াশিংটন আইসিস ও আল-কায়দার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি চালু রাখতে চাইবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই চুক্তিতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, ১০ মার্চ থেকে আলোচনা শুরুর পূর্বে ৫,০০০ তালেবান বন্দীদের বিনিময়ে ১,০০০ আফগান সরকারী সৈন্যকে মুক্তি দিতে হবে।
কিন্তু আফগানিস্তান সরকার যারা ৫,০০০ তালেবান সৈন্য আটক করে রেখেছে, যেহেতু এই চুক্তির অংশীদার নয় তারা এতগুলো তালেবান সেনাকে মুক্তি দিতে ইচ্ছুক কিনা তা স্পষ্ট নয়। আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনি এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
গৃহযুদ্ধ ও বিভিন্ন যুদ্ধের কারণে গত ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানকে ছিন্ন ভিন্ন করে রেখেছে। ৩০ বছরের কম বয়সী বেশিরভাগ জনসংখ্যার সংঘাত ছাড়া কিছুই জানার সুযোগ পায়নি এই দীর্ঘ সময়। তাই উত্তেজনা রয়েছে যুদ্ধের অবসানের জন্য আলোচনার যে প্রচেষ্টা হচ্ছে তা যেন অগ্রগতি করে এবং সফল হয়।
তালিবানরা এই চুক্তিকে তাদের “বিজয়” হিসাবে বর্ণনা করে করেছে। তালেবান সদস্য বাদে কোনও আফগান সরকারি ব্যক্তিবর্গ এখনও পর্যন্ত আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেনি।
আফগানিস্তানের স্বতন্ত্র মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি শাহহারজাদ আকবর বলেছেন, মার্কিন-তালেবান আলোচনায় অন্যান্য আফগান কণ্ঠ যাতে উপেক্ষিত না হয় সে বিষয়ে আমাকে কিছুটা উদ্বিগ্ন করেছে।
অনেকেই মনে করছে ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী নির্বাচনে তার পররাষ্ট্র বিষয়ক নীতিতে অবদান রাখার কারণে কিছুটা সুবিধা প্রাপ্ত হবে।