আয়ারল্যান্ডের অর্থনীতিতে বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে ব্রেক্সিট
আইএফএসি’র সতর্কতা
ব্রেক্সিট যথাযথভাবে কার্যকর না হলে সেটি আয়ারল্যান্ডের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ৬ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে আইরিশ ফিসক্যাল অ্যাডভাইসারি কাউন্সিল(আইএফএসি)। অর্থের হিসেবে যেটি ২১ বিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত গিয়ে ঠেকতে পারে। আয়ারল্যান্ড সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের ওপর গবেষণা ও মূল্যায়নকারী সংস্থাটি বলেছে, এই ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে কোভিড-১৯ মহামারীর চেয়েও বড়। আর এর সবচেয়ে বড় শিকার হতে পারেকৃষি-খাদ্য ও এসএমই সেক্টর- যেগুলো প্রধানত ব্রিটিশ মার্কেট নির্ভর।
আইরিশ পার্লামেন্টের বাজেট পর্যবেক্ষণ কমিটিকে আইএফএসি’র সদস্য মার্টিনা ললেস বলেছেন, আলোচনার ক্ষেত্রে সময় যেভাবে কমে আসছে, খামারগুলোর জন্য প্রস্তুতির সময় আরো কম। ললেস আরো সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, অগোছালো কিংবা চুক্তিহীন ব্রেক্সিট যতটা ভাবা হচ্ছে তাহারো বেশি খারাপ প্রভাব নিয়ে আসতে পারে, কারণ খামারগুলোকে নতুন করে শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত হতে হবে। তিনি বলেন,কঠোর ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া প্রথম কয়েক মাসের জন্য খারাপ প্রভাব নিয়ে আসবে সেই ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। কারণ খামারগুলোকে নতুন অনেকগুলো বিষয়ের সাথে মানিয়ে নিতে হবে এই সময়ের ভীতর।
এই পর্যবেক্ষক আরো বলেন, এমনকি ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হলে এবং সেটি যদি শুল্কমুক্ত সুবিধাও দেয়- তবু আয়ারল্যান্ডের অর্থনীতি অনেক ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হবে এবং খরচ বেড়ে যাবে, যার কারণে প্রবৃদ্ধি অন্তত ৩ শতাংশ ব্যহত হবে। এবং সেটি হতে পারে দীর্ঘ মেয়াদে।
২০২১ সালের বাজেট নিয়ে নিজেদের বিশ্লেষণ তুলে ধরতে পার্লামেন্টারি কমিটির সাথে বৈঠকে বসেছিল আইরিশ ফিসক্যাল অ্যাডভাইসারি কাউন্সিল(আইএফএসি) সদস্যরা। কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সেবাস্তিয়ান বার্নেস বলেছেন, ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার বিষয়টি এমন একটি ঘটনা যার অর্থনৈতিক প্রভাব পূর্বানুমান করা ছিল কঠিন।
বার্নেস ও আইএফএসির প্রধান অর্থনীতিবিদ এডি কেসি মনে করেন, কোভিড-১৯ ও সরকারি অর্থায়নের ক্ষেত্রে এ বছর সরকারের বাজেট ঘাটতি প্রকৃত ধারণার চেয়ে কম হতে পারে। সেটি হতে পারে ১৮ বিলিয়ন ইউরোর আশপাশে। যদিও বছরের শুরুতে, করোনা মহামারীর আগে ধারণা করা হয়েছিল এই ঘাটতি ৩০ বিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। তথাপি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কর আদায় হওয়ার কারণে সরকারের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
এডি কেসি বলেন, ২০২০ সালের শেষ কোয়র্টারে করোনাভাইরাস মহামারী সংক্রান্ত খরচ সম্ভবত ধারণা চেয়ে অনেক কম হবে। যে কারণে ঘাটতি ১৮ বিলিয়ন বা তার নিচে থাকবে। তবুও আইএফএসি সতর্ক করে দিয়েছে যে, ২০২১ সাল নাগাদ আয়ারল্যান্ডের ঋণ সংশোধীত মোট জাতীয় আয়ের ১০৯ থেকে ১২৭ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। করোনা মোকাবেলা তহবিলে অতিরিক্ত অর্থের জোগান দিতেই বাড়বে ঋণের বোঝা।
আইএফএসি’র চেয়ারম্যান সেবাস্তিয়ান বার্নেস বলেন, ধরে নিচ্ছি এসব ঋণের সুদের হার অনুকূলেই থাকবে, তাই করোনার সেকেন্ড ওয়েভ না এলে ঋণের হারও কমে আসা উচিত।
পার্লামেন্টারি কমিটির সাথে বৈঠকে দেয়া উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন যে, ২০২১ সালের বাজেটে কোভিড-১৯ ব্যয় বাদেও অন্তত ৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ইউরোর বেশি সরকারের বর্ধিত ব্যয় ধরা হয়েছে।
অতীতের বাজেটগুলোর তুলনায় এবার ব্যয় বৃদ্ধি ‘আশ্চর্যজনক ভাবে বেড়েছে’ উল্লেখ করে বার্নেস বলেন, অস্থায়ী ও বিশেষ উদ্দেশ্যে নয়, বরং মহামারীর পরেও বলবৎ থাকবে এই অতিরিক্ত ব্যয়। ২০১৫ সাল থেকেই এই বৃদ্ধি গড়ে প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ইউরো ছিল।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, স্থায়ী ব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ সাড়ে ৮ বিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত হতে পারে, কারণ অনেক ক্ষেত্রে এটি আগে থেকে ধারণা করা সম্ভব হয় না। এ প্রসঙ্গে তিনি স্থানীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে দেয়া তহবিলকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তার মতে, সরকারের ব্যয় বৃদ্ধির বিরোধীতা করছে না আইএফএসি। তবে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এই বৃদ্ধির অর্থ কিভাবে যোগান দেয়া হবে।
সূত্র : আইরিশ টাইমস
সৈয়দ আতিকুর রব