বই জ্ঞানের প্রতীক, আর পিঠা হচ্ছে ঐতিহ্যের। পিঠা হচ্ছে পেটের খোরাক, আর বই হচ্ছে জ্ঞানের খোরাক। পেটের ও জ্ঞানের খোরাক মেটাতে এবং জ্ঞানকে সমৃদ্ধি করতে ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে সমগ্র আয়ারল্যান্ডবাসী জড় হলো বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ ডাবলিন (BD-AD) আয়োজিত বইমেলা ও পিঠা উৎসবে। অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়েছ গত ১১ ই ফেব্রুয়ারি রবিবার ডাবলিনের টালাতে অবস্থিত কিলনামানাহ ফ্যামিলি রিক্রিয়েশন সেন্টারে।
ফেব্রুয়ারি মাস ভাষার মাস। এই ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে বীর বাঙালিরা। ভাষাকে বহনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে বই। আর এ বইকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ফেব্রুয়ারি মাসেই আয়োজন করা হয় বইমেলার। বাংলাদেশেও সবচেয়ে বড় এবং জাতীয় বইমেলা আয়োজিত হয় ফেব্রুয়ারি মাসেই। তারই অংশ হিসেবে BD-AD ফেব্রুয়ারি মাসেই আয়োজন করে বইমেলার।
বাংলাদেশে শীতকাল হচ্ছে উৎসবের মাস। উৎসবের আতিশয্যে, রঙে বৈচিত্র্যে আড়মোড়া দিয়ে জাগে কুয়াশার চাদর মুড়ে থাকা শীতকাল। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে যখন নতুন ধান ঘরে উঠে তখন নতুন চালের পিঠা পায়েশ দিয়ে উদযাপন করা হয় নবান্ন উৎসব। বাংলার চিরাচরিত এই ধারা চলে আসছে হাজার বছর ধরে। পৌষ মাঘের এই সময়টায় বাংলার আনাচে কানাচে ভেসে আসে খেজুর রসের পায়েশ আর পিঠা পুলির সুমিষ্ট ঘ্রাণ। তাই বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ও তুলে ধরতে একই সময় তারা বইমেলার সাথে সংযুক্ত রাখে পিঠাকেও। হরেক রকম পিঠা, মিস্টানেরআয়োজনেঅনুষ্ঠানটিপরিণতহয়পিঠাউৎসবে।
শুধু পিঠা ও বই উৎসবই নয় – এছাড়া যে উদ্যোগগুলো স্থান পায় অনুষ্ঠানেঃ
> উক্ত অনুষ্ঠানে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় এবারের মহান একুশে বইমেলায় প্রকাশিত লেখক এবং তাদের বইয়ের সাথেও। লেখকদের মধ্যে যাদেরকে সন্মানিত করা হয়, তাঁরা হলেন যথাক্রমে– ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গিরদার, ডঃ ইসমেত জাকিয়া রহমান, মেহেদী হাসান, সাজেদুল চৌধুরী রুবেল সৈয়দ জুয়েল ও ওমর ফারুক নিউটন।
> গ্রামবাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে BD-AD’র পক্ষ থেকে আয়ারল্যান্ডে অধ্যয়নরত স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও PhD কোর্সে উত্তীর্ণ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে।
> বাংলাদেশ স্পোর্টস এসোসিয়েশন অব আয়ারল্যান্ড (BSAI) এর নবনির্বাচিত কমিটিকে ফুলের তোড়া ও সম্মাননা ক্রেস্ট দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
> আয়ারল্যান্ডের সাংবাদিক আইরিশ বাংলা টাইমস এর পক্ষ থেকে জনাব আবদুর রহিম ভুঁইয়া, জনাব মাইদুল ইসলাম সবুজ, জনাব এ, কে আজাদ এবং জনাব মনিরুজ্জামান মানিককে সম্মাননা ক্রেস্ট ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
জনাব জহিরুল ইসলাম জহিরের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। জনাব আবদুল্লাহ আল কাফি এবং জনাব জাকারিয়া প্রধান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন। অনুষ্ঠানটির নেপথ্যে ছিলেন জনাব জাকারিয়া প্রধান, জনাব হারুন ইমরান, জনাব রফিকুল ইসলাম, জনাব শাহীন মিয়া, জনাব তপু শাহাদাত, জনাব মনির হোসেন এবং জনাব জনাব মাহবুব হোসেন খান, জনাব মহিউদ্দিন পাটোয়ারী লিংকন, জনাব জালাল আহমেদ ভূঁইয়া, জনাব ইকবাল আহমেদ লিটন প্রমুখ।
দেশাত্ববোধক এবং মনমুগ্ধকর সংগীত পরিবেশন করে দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন কর্ক থেকে আগত জনাব আভি আজিতাভ রয় ও ওয়াটারফোর্ড থেকে আগত জনাব মামুন মোহাম্মদ খান।
জনাব ওমর ফারুক নিউটন তাঁর নিজস্ব কাব্যগ্রন্থ ”এবার তোরা মানুষ হ’’ থেকে বহুরূপী কবিতাটি আবৃত্তি করেন। এছাড়াও কবিতা আবৃত্তি করেন। জনাব ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদার, জনাব শরিফুল আলম জেনন এবং জনাব আরিফুল ইসলাম আরিফ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অল বাংলাদেশী এসোসিয়েশন অফ আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট জনাব ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গিরদার।
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর ও লিমেরিক সিটি মেয়র জনাব আজাদ তালুকদার, কাউন্সিলর জনাব কাজী মোশতাক আহমেদ ইমন, জনাব জসিম উদ্দিন দেওয়ান, জনাব আনোয়ারুল হক আনোয়ার, জনাব ডাঃ মুসাব্বির হোসাইন, জনাব মনিরুল ইসলাম মনির, জনাব সাইফুল ইসলাম, জনাব চুন্নু মাতবর, জনাব ইকবাল আহমেদ লিটন, মুক্তিযোদ্ধা জনাব সাইদুর রহমান, জনাব ডঃ নাসিম, হামিদুর নাসির, জনাব ডাঃ পারভেজ প্রমূখ ।
আইরিশ বাংলা টাইমস ও আইরিশ বাংলাপোষ্ট সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে। এছাড়াও ডাবলিন ডায়েরি এবং ডাবলিন বাংলা বার্তার প্রতিনিধিগণ অনুষ্ঠানটি ধারণ করেন।
কানায় কানায় পূর্ণ অনুষ্ঠান কেন্দ্রটি যেন হয়ে উঠেছিল এক টুকরো বাংলাদেশ।