বর্তমান সময়ে কঠিনতম নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। প্রাণঘাতী করোনার কোনো ধরনের উপসর্গ থাক আর না থাক নেগেটিভ রিপোর্ট ছাড়া রোগী দেখছেন না হাসপাতালের চিকিত্সকরা। অপরদিকে পজিটিভ রিপোর্ট ছাড়া করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোও ভর্তি করছে না। এরফলে করোনা পরীক্ষা করানোর আগেই হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে মারা যাচ্ছেন রোগীরা।আবার করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে বিশাল জটিলতা, বিশৃঙ্খলা। কোন হাসপাতালে গেলে পরীক্ষা হবে অনেকেই জানেন না, আবার দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর বলা হচ্ছে—আজ হবে না! কেউ পরীক্ষার সুযোগ পেলেও রিপোর্ট পেতে লাগছে পাঁচ-ছয় দিন। ফলে রিপোর্ট আসার আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে বিনা চিকিৎসায়।
সম্প্রতি সময়ে অন্তত ২০টি হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকার। তার মেয়ে ডা. সুস্মিতা আইচ জানান -শ্বাসকষ্ট থাকায় কোনো হাসপাতাল ভর্তি করেনি তার বাবাকে। সরকারি হটলাইনে সেবা দিয়ে যাওয়া এই চিকিৎসক জানিয়েছেন, নিজে ডাক্তার হয়েও বাবার কোনো চিকিৎসা তিনি করতে পারলেন না। অথচ তার বাবা গৌতম আইচ সরকার ছিলেন কিডনি রোগী।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও ক্রীড়া সংগঠক আবদুল মুনায়েম চৌধুরী ইবনে সিনা হাসপাতালে শুক্রবার মারা যান। হৃদরোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন তিনি।গেল মার্চে এই হাসপাতালেই হার্টে রিং লাগানো হয় তার। গত ৪ মে বুকে ব্যথা নিয়ে ভর্তির পরই চিকিত্সকরা করোনা পরীক্ষা করতে বলেন। তাকে আইসিইউতে ফেলে রাখা হয়। অনেক চেষ্টার পর ৬ মে তার করোনা পরীক্ষা হয়। বরঞ্চ রিপোর্ট আসার আগেই ৭ মে তিনি মারা যান। ৮ মে পাওয়া রিপোর্টে দেখা যায় তিনি করোনা নেগেটিভ ছিলেন।
এরকম অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর। প্রথম প্রথম পিপিই, মাস্ক, ফেস শিল্ড না থাকার অভিযোগ এনে চিকিৎসা থেকে বিরত ছিলেন অনেক চিকিৎসক। কিন্তু বর্তমানে এসবের অভাব দেখা যাচ্ছে না। প্রশ্ন উঠেছে–তাহলে কেন রোগীরা চিকিৎসা পাবেন না ? সংশ্লিষ্টরা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই হাত ভরে চিকিৎসকদের দিচ্ছেন, ঝুঁকি ভাতা ঘোষণা হয়েছে। বড় আকারের বাজেট ঘোষণা হয়েছে চিকিৎসার জন্য। তাহলে বিনা চিকিৎসায় কেন মৃত্যু হবে রোগীর?
অনেক এলাকায় এলাকাবাসীও করোনা আক্রান্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করছেন। অনেকের বাড়িতে তালা দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ বাসায় ডেকে টেস্ট করাতে চাইলে কয়েক দিন লেগে যাচ্ছে, তবুও টেকনিশিয়ানরা যাচ্ছেন না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নানান আশ্বাস আর প্রস্তুতির গল্প শোনানো হলেও কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। তারা শুধু মৃত্যু আর আক্রান্তের সংখ্যা গুনে যাচ্ছে।
বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া ইত্তেফাককে বলেন, প্রতিটি এলাকায় পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে। তিনটি বেসরকারি হাসপাতালকে যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে সেটা ঠিক হয়নি। তারা শুধু তাদের নিজেদের রোগীদের পরীক্ষা করবে। ঐ সব হাসপাতালে তো ধনীরা যান। সাধারণ মানুষ যেসব ক্লিনিকে যায় সেখানেও পরীক্ষার সুযোগ থাকতে হবে।