জেনে শুনে বিষ করেছি পান – সাজেদুল চৌধুরী রুবেল

0
834
Shajedul Chowdhury Rubel
সাজেদুল চৌধুরী রুবেল, Irish Bangla Times
Shajedul Chowdhury Rubel
সাজেদুল চৌধুরী রুবেল, Irish Bangla Times

রবীন্দ্র সঙ্গীতের একটি লাইন- জেনে শুনে বিষ করেছি পান” এ যেনো জেনে শুনে বিষ পান করার মতো। মৃত্যুর সঙ্গে আলিঙ্গনের এক নগ্ন উল্লাসের মতো। ইতিহাস বলে, এক কালে মানুষ দাস কিনে নিয়ে তাদেরকে তীর ছুড়ে হত্যা করার মাধ্যমে আনন্দ পেতো। বিষয়টা যেনো অনেকটা এরকম।

হ্যাঁ বলছিলাম, করোনা ভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশে যে লীলাখেলা চলছে তার কথা। করোনা আক্রান্তের শুরুতে দেশটিতে জগাখিচুড়ি মার্কা “লকডাউন” জারি করা হলো। ফলে কেউ মানলো, কেউ মানলোনা। কেউ ঘরে থাকলো, কেউ থাকলোনা। লকডাউনের সাথে সাথে অধিকাংশ শ্রমিকরা গ্রামে চলে গেলো। ক’দিন পরেই আবার গার্মেনটস খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হলো। হুমরি খেয়ে শ্রমিকরা মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে ঢাকায় ফিরে এলো। আবার গার্মেনটস বন্ধের ঘোষণা দিয়ে তাদেরকে ফিরিয়েও দেয়া হলো। এই যে মশকরা, এ মশকরার ফলে কি গ্রাম গঞ্জ সহ সারা দেশে ভয়ানক জীবাণুটি ছড়িয়ে পড়েনি? এবারের ঈদে আবারো একই চিত্র পরিলক্ষিত হলো। বাস, ট্রেন, লঞ্চ তথা সর্বত্রই উপচে পড়া ভিড়। স্বাস্থ্য বিধি বা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কোনো বালাই ছিলোনা। করোনাকে উস্কে দেয়ার জন্য এসব কি যথেষ্ট নয়?

উহানের পরে ইউরোপ আমেরিকায় যখন মহামারী চলছিলো তখনো করোনা বাংলাদেশের ভিসা পায়নি। ওই সময় দেশটি যদি পুরোপুরি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারতো তবে করোনা কখনোই দেশে ঢুকার ভিসাটি পেতোনা। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে করোনা তা পেয়ে যায়। দেশের মানুষের সাথে কোলাকুলি করতে সক্ষম হয়।

শয়তানটা যেহেতু দেশে এসেই পড়েছে তাই তাকে কৌশলে এড়িয়ে চলতে হবে। নেয়া হলো পদক্ষেপ। লকডাউন। ঘর থেকে বের হওয়া যাবেনা। কোনো অবস্থাতেই করোনার সাথে মুলাখাত নয়। ব্যস, দুদিন চললো। তারপর “লকডাউন” হয়ে গেলো কমপ্লিট “লকআপ”।

সরকার যখন করোনার শুরুতেই লকডাউন ঘোষণা করেছিলো আমরা বেশ প্রশংসা করেছিলাম। কিন্তু সরকারের দুর্বল কৌশলের জন্য তা যথাযথ ভাবে কার্যকর হয়নি। ফলে করোনার সংক্রমণ মারাত্মক ভাবে বেড়েই চলে। এর ভয়ংকর থাবা যখন একেবারেই তুঙ্গে তখন এবার “জীবিকার” গুঞ্জন তুলে লকডাউন খুলে দেয়া হলো। কী বিচিত্র দেশ! যে জীবনের জন্য জীবিকা সেই জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়ে জীবনকে করা হলো তুচ্ছ। তুচ্ছ তাতাচ্ছিল্যের বিষ তীরে নিক্ষিপ্ত হলো জীবন।

এ কথা সত্য, জীবন ও জীবিকা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। জীবিকা ছাড়া জীবন চলেনা। তাই বলে জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে জীবিকার অন্বেষায় বেরিয়ে পড়া কতোটুকু যৌক্তিক বা সমীচীন তা আমার মোটা মাথায় একদম খেলছেনা।

খবরে দেখলাম, লকডাউন খুলে দেয়ার প্রথম দিনেই আশংকাজনক ভাবে সংক্রমণের হার বেড়েছে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার কথা বলা হলেও মানুষ মোটেও এর তোয়াক্কা করছেনা। সুতরাং এর ভবিষ্যত ফলাফল যে খুব খারাপ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

বিষয়টি মোটেও স্বাস্থ্য সম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক। একইভাবে এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শের পরিপন্থি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, সংক্রমণ কমলে পরিকল্পনা করে ধাপে ধাপে লকডাউন তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ইতালি, স্পেনসহ অন্য দেশগুলো সেটিই করেছে। ওইসব দেশ ধাপে ধাপে লকডাউন প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। কিন্তু সর্বোচ্চ সংক্রমণের সময় বাংলাদেশে হঠাৎ করে সবকিছু চালু করে দেয়া হলো। এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সারাদেশের মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হলো। সন্দেহ নেই, সংক্রমণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছাবে এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ওপর চাপ পড়বে। কিন্তু সেই চাপ সামাল দেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কি আদৌ আছে? পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, মৃত্যুর মিছিল যদি তাড়া করে গোটা দেশব্যাপী এর দায়ভার সরকার কাকে দেবেন?

সরকারের এ সিদ্ধান্তটি কি জেনে শুনে বিষ পান করার মতোই নয়?

লেখকঃ প্রাবন্ধিক ও কলামিসট

Facebook Comments Box