করোনার আদ্যোপান্ত

0
812
করোনার আদ্যোপান্ত

চীনের ঊহান থেকে যখন করোনার সূত্রপাত, বিশ্ব তখনো বুঝে উঠতে পারে নাই এর ভয়াবহতা। সবাই ঠাট্টা মশকরা করে বলত – ওরা সাপ, ব্যাঙ, বাদুর এমন হেন কোন খাবার নাই যা তারা খায়না, তাদের এমন রোগ হবে না তো কার হবে? হু হু করে যখন করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়তে লাগল এবং গণহারে মারা যেতে লাগল, তখনই বিশ্ব একটু নড়েচড়ে বসল। নড়েচড়ে বসা মানে চায়নার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে শুরু করা। বিশ্বের দ্রব্য সাপ্লাইয়ের এক নাম্বার দেশ হল চীন, সে চীন থেকে দ্রব্য আমদানি বন্ধ করে দিল বহির্বিশ্ব। এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চাইনিজরাও পড়ল মহা বিপদে। সবাই তাদেরকে একপ্রকার একঘরে করে রাখল। চাইনিজ বা ওই রকম চেহারার কাউকে দেখলেই তার থেকে দশ হাত দূরত্ব বজায় রেখে চলত, মনে করত এক একটা চাইনিজ মানে এক একটা ভাইরাস। 

চায়নার এমন কোণঠাসা অবস্থায় চায়নাবিরোধীরা বগলদাবা করতে লাগল যে, এইবার বোঝ ঠেলা। বিশিষ্ট পণ্ডিতবর্গ তো ধরেই নিয়েছে যে, চায়নাকে ধরাশয়ী করতে এটা আমেরিকার চাল। আমেরিকা মনে হয় ভাইরাস বানিয়ে চায়নাতে ছড়িয়ে দিয়েছে। যাই হোক করোনাতো হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান এর মত অল্প সময়ের মধ্যে স্কোর হাজারের সেঞ্চুরির কাছাকাছি নিয়ে গেল, ওই মুহূর্তে চায়নাও আক্রমণে আনল নতুনত্ব। ঘোষণা হল লকডাউনের। মিড অন, মিড অফ, মিড উইকেট, স্লিপ, কাভার, এক্সট্রা কাভার, গালি সব দিকে এমনভাবে বন্ধ করল; করোনা আর সীমানার বাহিরে বেরই হতে পারল না। স্কোরও কমতে কমতে শূন্যে নেমে গেল। 

এইদিকে চায়না তো পার পেয়ে গেল। কিন্তু ওইদিকে যে মিস ফিল্ডিং হয়ে কিছু ভাইরাস সীমানার বাহিরে চলে আসল তার কি হবে? ছাড়া পাওয়া বাঘিনীর মত উন্মাদ করোনা হয়ে পড়ে বাঁধনহারা। শুরুতেই ঘাড় মটকে ধরে ইরানের এবং এর পর রক্ত চোষা শুরু করে ইতালির। ইতালিকে একবারে নাস্তানুবাদ করে ছেড়ে দেয়। ইতালির  উপর কেন এত আক্রোশ জন্মালো তার ব্যাখ্যাও কেউ কেউ দিয়েছিল, বিশেষ করে বঙ্গদেশীয় কতিপয় গুণী ব্যাক্তিবর্গ। বিশ্ব তখনই ব্যাপারটা একটু সিরিয়াসলি আমলে নিতে শুরু করে। আমেরিকা যদিও গুরুত্ব দিতে একটু সময় নেয়, কারণ এটা ছিল চাইনিজ ভাইরাস। কিন্তু পরবর্তীতে চায়নায় তৈরি হওয়া আই ফোনের মত ভাইরাসও যখন সম্পূর্ণ আমেরিকা ছড়িয়ে যায় এরপর একে আমলে না নিয়ে আর পারে নাই। করোনা নিয়ে মশকরা করা সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যাক্তিকেও জানান দিয়ে গেল, করোনা তার থেকেও শক্তিশালী। 

এরপর করোনা কিভাবে ছড়াল তা বর্ণনা করলে ফুটবল খেলার ধারাভাষ্যের মত হয়ে যাবে। এরপর যা কিছু হয়েছে সবই হয়েছে চোখের নিমিষে, স্বপ্নের মত। করোনার উঠানামা আর মৃত্যুর মিছিল গুনতে গুনতে বছরের শেষ প্রান্তে এসেও মিলে নাই কোন সুখবর।  অনেক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে ২০২০ কে বরন করে নেয় সবাই। সবাই চিন্তা করল এই বছরটা হবে ২০/২০ খেলার মতই আমোদপ্রবন, কিন্তু কে জানত যে শেষ পর্যন্ত সবাইকে যে টেস্ট খেলিয়ে ছাড়বে। শুধু টেস্টই না, একবারে ফলো অন ফেলে দিল। এখন কে জানে এই ফলো অন তাড়া করে কবে জয় আসবে? 

Facebook Comments Box