অনন্য উচ্চতায় আসীন বাংলার কৃতি সন্তান প্রফেসর সেলিম হাশমি – ওমর এফ নিউটন

0
914
Prof Mohammad Hashmi

প্রফেসর মোহাম্মদ সেলিম হাশমি, বাংলার আকাশে উদিত হয়ে পৃথিবীর উপরে জ্বলতে থাকা এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বিজ্ঞান জগতের দিকপাল, বিশ্বজুড়ে যার খ্যাতি। যিনি নামকে করেছেন মহিমান্বিত, জীবনকে করেছেন সাফল্যমণ্ডিত। তিনি একজন মানুষ গড়ার দক্ষ কারিগর। সফল হননি শুধু নিজেই, নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন বহু সফল ব্যক্তিত্বকেও। তিনি একজন দীপ্ত প্রদীপ, যার আলোর আভা ছড়িয়ে গিয়েছে সর্বত্র। জনাব হাশমি এমনই একজন পরশপাথর; হাত দিয়েছেন যেথায়, সোনা ফলেছে হেথায়। সাফল্যের ছুরিতে তিনি শুধু ধারই দিয়েছেন কখনো মরচে ধরার সুযোগই দেননি।

একমাত্র বাংলাদেশী যিনি Higher Doctorate Degree of DSC এওয়ার্ড অর্জন করেন। তাঁর অসামান্য কৃতিত্ব এবং অবদানের জন্য ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে আজীবন সন্মাননা EMERITUS উপাধিতে ভূষিত করে।

জন্ম, বেড়ে উঠা এবং শিক্ষা জীবনের মূল ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপিত বাংলাদেশে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়; সবজায়গায় উড়িয়েছেন সাফল্যের পতাকা। সর্ব ক্ষেত্রেই কৃতিত্বকে ছিনিয়ে নিয়েছেন বীরদর্পে। বিলেত ছিল তৎকালীন সময়ের বিশ্বের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। প্রফেসর হাশমির মত মেধাবীরা সেই বিদ্যাপীঠের একজন গর্বিত ছাত্র না হলে কি হয়? স্কলারশিপ এর সুবাদে ব্রিটেনে পাড়ি জমান তিনি। শুরু হল সোনার উপর হীরের প্রলেপ মাখানোর পর্ব। পিএইচডি শুরু করলেন Mechanical engineering এর উপর, সেই সাথে শিক্ষকতা। পিএইচডি শেষ হবার পরপরই শুরু হল তাঁর বর্ণাঢ্য শিক্ষকতার ক্যারিয়ার।

লেকচারার হিসেবে শুরু করে প্রফেসর হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে উজাড় করে দিয়েছেন নিজেকে, বিলিয়ে দিয়েছেন নিজের জ্ঞানকে। প্রতিষ্ঠা করেছেন অনেক ডিপার্টমেন্ট, প্রতিষ্ঠিত করেছেন অনেক ছাত্রকে। সাহায্য করেছেন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীকে। বাংলাদেশী ছাত্রদের পিএচডি গবেষণার জন্য ব্যাবস্থা করেছেন বাহ্যিক ফান্ডের, যার দ্বারা ১৫ বছরে ২৫ জন বাংলাদেশী ছাত্রের সমস্ত ব্যায়বভার নির্বাহ করা হয়। যে ছাত্ররা এখন বাংলাদেশ সহ, মালেয়শিয়া, কানাডা, আমেরিকার মত বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বরত আছেন।

শুধু দায়িত্বরত বিশ্ববিদ্যালয়ই নন, বিশ্বের বহু নামিদামী বিশ্ববিদ্যালয়ও বঞ্চিত হয়নি তাঁর সেবা থেকে। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন নিজের জ্ঞানকে। কখনো পরীক্ষক হিসেবে, কখনো উপদেশদাতা হিসেবে, কখনো গেস্ট শিক্ষক হিসেবে ছুটে গিয়েছেন দেশে দেশে। বাংলাদেশেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বেচ্ছায় স্বশরীরে ছুটে গিয়েছেন উপদেশ দেয়ার জন্য। ভেবেছেন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলাও যদি বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করে তাহলে দেশের ছাত্ররা বহুগুণে উপকৃত হবে। তিনি কিছু কোর্স মডিউল প্রণয়নেরও প্রস্তাব রাখেন, যদিও পরবর্তীতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গৃহীত হয়নি।

প্রকাশ করেছেন এবং করে চলেছেন অনেক জার্নাল, গবেষণা পত্র, বই। যার দ্বারা উপকৃত হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকগণ।

তিনি শুধু একজন সফল শিক্ষকই নন, একজন আদর্শবান পিতাও বটে। চার সন্তানের জনক প্রফেসর হাশমি। তিন মেয়ে ও এক ছেলে তাঁর, সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

“তাঁর তিন মেয়ের একজন ডঃ মালেকা হাশমি যিনি ফার্মাকোলজির উপর PhD করেছেন এবং এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক স্টাফ হিসেবে বর্তমানে দায়িত্বরত।
আরেকজন ডঃ মলি হাশমি যিনি ফিজিওলজির উপর PhD করেছেন এবং বর্তমানে শেফিল্ড হালাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হেলথ সাইন্স ডিপার্টমেন্টে সিনিয়র লেকচারার হিসেবে দায়িত্বরত।

সর্বশেষ কন্যা তানিয়া হাশমি যিনি শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর Hons. এবং মাস্টার্স ইন অর্থহোপটিস্ট শেষ করে ডাবলিন ক্রুমলিন চিলড্রেন্স হাসপাতালে অর্থপটিস্ট হিসেবে ৭ বছর চাকরি করেন। পরবর্তীতে ক্যালিফোর্নিয়ার ইউনিভার্সিটি কলেজ ড্যাভিস হাসপাতালে অর্থপটিস্ট হিসেবে জয়েন করেন। বর্তমানে তিনি সেখানে কর্মরত আছেন।

তাঁর ছেলে একজন সফটওয়্যার অ্যাকাউন্ট্যান্ট।

জনাব হাশমির জীবন সঙ্গিনী ও চার সন্তানের রত্নগর্ভা মা হলেন ডঃ কাশ্মেরি হাশমি (PhD), যিনি শেফিল্ড হলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে ব্যাচেলর (Hons) ও ডাবলিন সিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সাইন্সে মাস্টার্স পাশ করে লিভারপুল জন মুর Universityথেকে PhD শেষ করে ডাবলিনে একটি প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন চাকরি করেন। পরিবর্তিতে তিনি সংসারের দায় দায়িত্ব কাঁধে নেন।

তাঁর শিক্ষাগত ও পেশাগত জীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণী পর্যালোচনা করলেই বোঝা যাবে কি রত্ন তাঁর ভেতর লুকায়িত।

শিক্ষা জীবন
প্রফেসর মোহাম্মদ হাশমি যার জন্ম ও বেড়ে উঠা বরিশালে। ১৯৬১ সালে তৎকালীন ম্যাট্রিকুলেশন (SSC) সমাপ্ত করার পর তাঁর ঢাকায় গমন করেন। ম্যাট্রিকুলেশনে উনি কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে পাশ করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। ১৯৬৩ সালে তিনি HSC তেও প্রথম বিভাগে উত্তীর্ন হন। SSC এবং HSC তে অসামান্য কৃতিত্বের ফলশ্রুতিতে গ্র্যাজুয়েশনের জন্য সুযোগ মেলে তৎকালীন ‘’ইস্ট পাকিস্থান ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি’’ তে Mechanical engineering এর উপর, বর্তমানে যা BUET নামে পরিচিত। চার বছর অধ্যয়ন শেষে ১৯৬৭ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তাঁর মেধার মূল্যায়ন হিসেবে তাঁকে একই ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকতা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়। এর পর তিনি ৯ মাস সেখানে চাকরি করেন।

১৯৬৮ সালে ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার (UMIST) থেকে উচ্চশিক্ষার স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য দেশব্যাপী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ওই প্রতিযোগিতায় জনাব হাশমি উত্তীর্ণ হয়ে চার বছরের মেরিট স্কলারশিপ পেয়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান Mechanical engineering এর উপর মাস্টার্স ও পিএইচডি করার জন্য। ১৯৬৮-১৯৭২ সময়কালের মধ্যে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ১৯৯৫ সালে ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার UMIST এর মাধ্যমে Higher Doctorate Degree of DSC এওয়ার্ড অর্জন করেন, যা হচ্ছে সর্বোচ্চ প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি এবং UK এর সর্বোচ্চ ডিগ্রি।

কর্মজীবন
অধ্যায়নরত অবস্থায়ই তাঁর কর্মজীবনের সূত্রপাত। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পরপরই বুয়েটে ৯ মাস এবং পরে UMIST তে পিএইচডি করার সাথে সাথে গবেষণা এবং সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১৯৬৮-১৯৭২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ অর্জনের পর একই বছর Sheffield Hallam University তে লেকচারার হিসেবে নিযুক্ত হন, সফলতার সাক্ষর রেখে খুব দ্রুতই ১৯৭৬ সালে সিনিয়র লেকচারার এবং ১৯৭৭ সালে প্রিঞ্চিপাল লেকচারার হিসেবে পদোন্নতি হয়। এরপর ১৯৮৪-১৯৮৬ পর্যন্ত রিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রিডার (Reader) হচ্ছে সিনিয়র লেকচারার এবং প্রফেসর এর মধ্যবর্তী পদ।

Dublin City University (DCU) এর প্রফেসর হিসেবে যোগদানের সুবাদে তিনি ১৯৮৭ সালে আয়ারল্যান্ডে আগমন করেন। তিনি ডাবলিন সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের Mechanical & Manufacturing Engineering বিভাগের প্রফেসর হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ঐ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা প্রধানও ছিলেন। Mechanical & Manufacturing Engineering বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান হিসেবে তাঁর উপরই গুরুদায়িত্ব ছিল এই বিভাগকে শূন্য থেকে সফলভাবে প্রতিষ্ঠা করানো। নতুন স্কুল গড়ে তোলা থেকে শুরু করে জায়গা নির্বাচন, স্টাফ রিক্রুটমেন্ট ও সবধরনের সুবিধা অসুবিধা দেখার দায়িত্ব ছিল তাঁর উপরই। ১৯৯৬ সালে প্রফেসর হাশমি সফলতার সহিত ডাবলিন সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আনকোরা ডিগ্রি প্রোগ্রাম BEng (Hons) in Mechatronic Engineering এর সূচনা করেন। এর সাথে সাথে তিনি আরও তিনটা আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করেন, যে প্রোগ্রামগুলো ১৯৯৮ সালে সফলভাবে শুরু হয়। প্রোগ্রাম তিনটা হলঃ

  1. Mechanical & Manufacturing Engineering
  2. Biomedical Engineering
  3. Manufacturing Engineering with Business Studies

এ ছাড়াও তিনি আরও দুটি মাস্টার্স প্রোগ্রামের পরিকল্পনা ও পরিবর্ধনে ভূমিকা রাখেন। পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম দুটি হল Mechanical Engineering এবং Chemical Engineering.

২৬ বছরের দীর্ঘ সফল কর্মজীবন এর ইতি টেনে ২০১২ সালে অবসর গ্রহণ করেন। ২৬ বছর সেবা প্রদানের প্রতিদান সরূপ ডাবলিন সিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে সন্মানসূচক EMERITUS উপাধি প্রদান করা হয়। EMERITUS উপাধি হচ্ছে আজীবন সন্মাননা সরূপ, যার ফলে তাঁকে একজন সফল প্রফেসর হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আজীবন স্মরণ করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডের সাথে আজীবন সংযুক্ত থাকবেন।

রিসার্স ও স্কলারি কর্মকাণ্ড এবং অভিজ্ঞতা

১৯৮৭ সালে তিনি যখন DCU তে গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেন তখন মাত্র ৩ জন গবেষণার ছাত্র ছিল এবং ১০ বছরেরও কম সময়ে ছাত্রের সংখ্যা ১৯৯৬ সালে ৩০ এ উন্নীত হয়। সমভাবে তিনি Research Centre of Excellence যাকে বলা হয় Material Processing Research Centre (MPRC) প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ বাহ্যিক ফান্ড তুলতে সক্ষম হন। যেখানে গবেষণা প্রোগ্রামে সহযোগিতায় দুইজন লেকচারারও নিয়োগ দেয়া হয়।

১৯৯০ সালে প্রফেসর হাশমি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স প্রোগ্রাম AMPT (Advances in Materials and Processing Technologies) প্রতিষ্ঠা করেন। যা বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন দেশের বড় বড় শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারপার্সন জনাব হাসমির তত্ত্বাবধানে এখন পর্যন্ত প্রোগ্রামটি কার্যকর রয়েছে। ২০১৭ সালে AMPT এর উপরে নতুন জার্নালের সূচনা করেন, যা তখন থেকে বছরে ৪ টা করে প্রকাশিত হয়ে আসছে এবং ভবিষ্যতেও প্রকাশিত হতে থাকবে বলে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস।

বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল Elsevier এর Material Processing Technology এডিটর-ইন-চিফ এর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হয় জনাব হাশমিকে। ১৯৯৮ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি এ বিভাগে দায়িত্বরত ছিলেন। ২০১১ সালে একই বিভাগের বিশদ Major Reference Works এর ১৩ ভলিউম এবং ৭৫০০ পৃষ্ঠার জার্নালের এডিটর-ইন-চিফ এর দায়িত্বেও নিয়োজিত ছিলেন।

২০১৫ থেকে Elsevier এরই আরেকটি অনলাইন পাবলিকেশন এর বিজ্ঞান ভিত্তিক রেফারেন্স মডিউল Materials Science and Materials Engineering এর প্রজেক্টের এডিটর-ইন-চিফ এর দায়িত্ব হাতে নেন। ধীর্ঘ ৫ বছর চলতে থাকা এই গবেষণা কর্মে ১৪ টি বিষয়ের উপর প্রায় ৫০০০ আর্টিকেল/চ্যাপ্টার এর পিয়ার রিভিউ শেষে ২০২০ তে প্রকাশিত হবার অপেক্ষায় রয়েছে।

২০১৬ সালে Encyclopaedia of Renewable and Sustainable Materials এর উপর আরেকটি জার্নালের কাজে তাঁরই এক ছাত্র Prof. Imtiaz Ahmed Choudhury of UM, Malaysia সাথে যৌথভাবে এডিটর-ইন-চিফ হিসেবে কাজ করেছেন। ১২ ভলিউমের এই এনসাইক্লোপিডিয়াটি Elsevier এর মাধ্যমে প্রকাশিত হবার অপেক্ষায় রয়েছে। Elsevier এর আরও একটি প্রজেক্ট Encyclopaedia of Materials: Plastics and Polymers এর এডিটর-ইন-চিফ হিসেবে নতুন করে সম্প্রতি যোগদান করেন।

এ পর্যন্ত তিনি ৫০০ এরও অধিক রিসার্স পেপার এবং ৩০ টি বই প্রকাশ করেন এবং এখনো করে চলেছেন। এছাড়াও তিনি ১১৫ টার বেশী PhD এবং ৫৫ জন শিক্ষার্থীর MEng Research সফলভাবে শেষ করতে সুপারভাইজ করেছেন। ২৫ জন বাংলাদেশী PhD ছাত্রের স্কলারশিপ প্রদানসহ ৬০ জনেরও বেশী বিভিন্ন দেশি শিক্ষার্থীর External Examiner & Expert Assessor এর ভূমিকা পালন করেন।

মোটকথায় শিক্ষা ক্ষেত্রে জনাব হাশমির সফলতা এবং অবদান এই স্বল্প লেখায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়।

প্রফেসর হাশমি এখন অবসরপ্রাপ্ত। অবসর গ্রহণ করেও কি তাঁর অবসর আছে? বস্তুত অবসর গ্রহণের পরেও তিনি ব্যস্ত সময় পার করেন। প্রথমত তিনি ডাবলিন সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের EMERITUS হিসেবে আছেন, যার কারণে এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রফেসরদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করে থাকেন, পরামর্শ প্রদান করে থাকেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে সময় দিয়ে থাকেন। তাছাড়াও বই লেখা, জার্নাল পাবলিশ করা, বিভিন্ন রিসার্স এর কাজে এখনো সময় ব্যয় করে থাকেন।

প্রাক্তন ছাত্রদের সাথেও যোগাযোগ রক্ষা করেন, খোঁজখবর রাখেন, নানাবিধ উপদেশ প্রদান করে থাকেন। শেকড়ের টান এখনো তাঁকে টানে। সুযোগ পেলেই ছুটে যান বাংলাদেশে। ঘুরে বেড়ান দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে, নিজের জ্ঞানকে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কাজে লাগানোর লক্ষে। বুয়েটের সময়টাকে খুব বেশী মনে করেন। তাঁর ভাষ্যমতে বুয়েটের সময়টা তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। শিক্ষা জীবনের মধ্যে সবচেয়ে পরিশ্রম ও কষ্ট করেছেন বুয়েটে অধ্যয়নরত অবস্থায়। সেই চেষ্টা ও পরিশ্রমের ফলেই হয়েছেন প্রথম শ্রেণীতে প্রথম, স্থাপন করেছেন বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ভিত্তিপ্রস্তর। শুধু পড়ালেখার মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। জীবনকেও উপভোগ করেছেন সমান তালে। কলেজ টিমের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন, বন্ধুদের সাথে মাঝরাতে রিকশা চেপে ঘুরে বেড়িয়েছেন, পুরাণ ঢাকার বিরিয়ানি খাওয়া, খেলাধুলা করা কিছুই বাদ দেননি।

এখনো অবসর সময়ে বাগান করে সময় কাটান। নানা ধরনের সবজি, ফুল এবং গাছে ভরপুর থাকে তাঁর বাগান। বাগান করায় তিনি নাকি সিদ্ধহস্ত। নাগা মরিচ নাকি সারা বছরব্যাপী ফলিয়ে থাকেন। নিজ হাতে লাগানো গাছ ধীরে ধীরে বেড়ে উঠা পর্যবেক্ষণ করা তাঁর খুবই পছন্দ। অঙ্কুর থেকে একটি বৃক্ষের বেড়ে উঠা তাঁকে অন্যরকম আনন্দ দিয়ে থাকে। এছাড়াও পছন্দ ঘোরাফেরা করা, বন্ধুবান্ধবের সাথে গল্প করে সময় কাটানো।

জীবনে কি কোন সংগ্রাম করেছেন? এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাঁর জীবনে তেমন বড় কোন সংগ্রাম করতে হয় নি, তবে তাঁর প্রচণ্ড রকম পরিশ্রম, চেষ্টা এবং আত্মবিশ্বাসই তাঁকে আজকের অবস্থায় নিয়ে এসেছে। জীবনে কোন বিষয়ে কোন আক্ষেপও নেই তাঁর। নিজেকে যেভাবে গড়ে নিতে চেয়েছেন ঠিক সেভাবেই পেরেছেন, এজন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে তিনি কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন।

বর্তমান প্রজন্ম ও ছাত্রদের জন্য উপদেশ কি জানতে চাইলে বলেন; জীবনে সফল হতে হলে যথেষ্ট ইচ্ছাশক্তি, মনোবল চেষ্টা ও আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে এবং অক্লান্ত পরিশ্রম এর মাধ্যমে তা পূরণ করতে হবে। জীবনে সফল হতে হলে সুযোগও দরকার। কিন্তু নিজের চেষ্টা, আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম ও লক্ষ পূরণের তীব্র ক্ষুধা না থাকলে সুযোগ থাকলেও সফলকাম হওয়া সম্ভব নয়।

প্রফেসর সেলিম হাশমি নিঃসন্দেহে বাংলার গর্ব। তাঁর মত ব্যক্তিরা আছে বলেই বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করা যায়। তাঁরাই দেশের রোল মডেল, যাদেরকে দেখে অনুপ্রাণিত হবে আগামীর প্রজন্ম। বাংলাদেশকে তুলে ধরতে, বাংলার সুনামকে বর্ধিত করতে, বাঙ্গালি হিসেবে গর্ব করতে, এমন আরও প্রফেসর হাশমির আবির্ভাব ঘটুক।

Biography of Prof. Mohammed Saleem Hashmi
BSc, MSc. PhD, DSc, CEng, FIMechE, FIEI
Former Lecturer, Reader – Sheffield Hallam University, UK
Former Professor – Dublin City Univercity, Ireland
Emeritus Professor – Dublin City University

Facebook Comments Box