লিমেরিকে সফলভাবে কন্স্যুলার সেবা সম্পন্ন – দেয়া হল অতিরিক্ত সেবা

0
196

রেকর্ড সংখ্যক ই-পাসপোর্ট এবং নো ভিসার আবেদন গ্রহণের মধ্য দিয়ে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন আয়ারল্যান্ডের অন্যতম শহর লিমেরিকে কনস্যুলার প্রদান করে গত ১১ এবং ১২-ই অক্টোবর। দীর্ঘদিন কনস্যুলার সেবা না পাওয়ায় এবং ভৌগলিকভাবে মাঝামাঝি শহর হওয়ায় লিমেরিকের কনস্যুলার সেবা নিতে সেবা গ্রহণকারীদের ছিল উপচে পড়া ভিড়।

প্রবাসীদের কাছে পাসপোর্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি। পাসপোর্টের মেয়াদ ভ্যালিড থাকা অত্যন্ত অপরিহার্য বিষয়। পাসপোর্টের মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বা হওয়ার পথে থাকলে বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসের শরণাপন্ন হতে হয়। তবে অনেক দেশে দূতাবাস না থাকার কারণে পার্শ্ববর্তী নিকটতম যে দেশে দূতাবাস আছে, সে দেশের দূতাবাস ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলার সেবা প্রদান করে থাকে। আয়ারল্যান্ডও তেমনি একটি দ্বীপরাষ্ট্র যেখানে দূতাবাসের অনুপস্থিতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ ইউকে কনস্যুলার সেবা প্রদান করে থাকে।

লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন দীর্ঘ ২৫ বছর আয়ারল্যান্ডে কনস্যুলার সেবা দিয়ে আসতেছে। তন্মদ্ধে অনেক বছর কনস্যুলার সেবাটি রাজনৈতিক প্রভাবযুক্ত ছিল। তবে বহু বছর পর বাংলাদেশ হাই কমিশন ইউকে আয়ারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় সংঘটন অল বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন অব আয়ারল্যান্ড (ABAI) এর মাধ্যমে ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় কনস্যুলার সেবা সফলভাবে সম্পন্ন করে।

যেসব সেবা প্রদান করা হয়ঃ

ক) ই-পাসপোর্টঃ ২১৪ টি ই-পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ করা হয়।

খ) নো-ভিসা রিকোয়ার্ডঃ ১৯৭ টি NVR এর জন্য পাসপোর্ট গ্রহণ করা হয়।

গ) বার্থ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটঃ ২৪ টি BRC বা বার্থ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট এর আবেদন গ্রহণ করা হয়।

ঘ) পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি (POA): ৬ টি

ঙ) অ্যাটেস্টেশনঃ ১০ টি

চ) ভিসাঃ ২ টি

ABAI কতৃক যে সহায়তা করা হয়

লিমেরিক বাংলাদেশি কমিউনিটির সহায়তায় অল বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন অফ আয়ারল্যান্ড কনস্যুলার সেবা প্রদান করতে আসা অফিসারদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। স্থান প্রদান করে ABAI কে সহযোগিতা করে Student Campus College. কলেজের কার্যক্রম সাজানো, যাবতীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ, সাহায্যকারী লোকবল, সেবা পরিচালনা এবং অফিসার, ভলান্টিয়ার ও সেবা গ্রহণকারীদেরকে আপ্যায়ন করার যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করে আবাই।

ABAI এর যে সেবাটি প্রদান সবার নজর কাড়ে তা হচ্ছে IT, অ্যাডভাইজরি, প্রিন্টিং এবং ফটোকপি সেবা। দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই অনলাইন ফর্ম পূরণ কিংবা প্রিন্ট/ফটোকপি করে না আসার কারণে যাতে কেউ সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সে জন্যই এ উদ্যোগটি গ্রহণ করে। অন্তত ১৫০ জনকে IT সেবা, সহস্রাধিক প্রিন্ট এবং ফটোকপি প্রদান করা হয় সেবা গ্রহণকারীদের। সেই সাথে বিভিন্ন উপদেশ ও পরামর্শ প্রদান করে IT সেবাদানকারী টিমটি। আবাই এবং লিমেরিকের ভলান্টিয়ার দ্বারা গঠিত টিমটি দুই দিন প্রচণ্ড ব্যস্ত সময় পার করে। Student Campus College এ বিষয়ে যথেষ্ট সহায়তা করে।

হাই কমিশনের অফিসারদের উপর চাপ কমাতে পূর্বে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কাগজপত্র যাচাই করে নেয়ার জন্য আবাই কতৃক অভিজ্ঞ টিম প্রদান করা হয়।

হাই কমিশনারের উপস্থিতি ও আয়ারল্যান্ডে দূতাবাস স্থাপনের আপডেট

বাংলাদেশ হাই কমিশন ইউকেতে দীর্ঘ ছয় বছর দায়িত্ব পালন করা হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম সেবা প্রদানের দুই দিনই উপস্থিত ছিলেন। তিনি কনস্যুলার সেবার খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করেন ও বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সাথে সাক্ষাত করেন। সাইদা মুনা তাসনিম খুব শিগ্রই বাংলাদেশে বদলি হয়ে যাবেন। তিনি জানান, বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে নতুন হাই কমিশনারকে প্রদান করবেন। তিনি আরো জানান, আয়ারল্যান্ডে চলমান দূতাবাস স্থাপনের সিদ্ধান্তও নতুন হাই কমিশনারকে অবহিত করবেন।

তিনি আয়ারল্যান্ডের বিজনেস ও কমার্স ডিপার্টমেন্টের সাথে সাক্ষাত করতে চাইলে লিমেরিকের কাউন্সিলর জনাব আজাদ তালুকদার বিজনেস ও কমার্স এর চিপ এক্সিকিউটিভ অফিসার ডি রায়ানের সাথে সাক্ষাত করিয়ে দেন। জনাব তালুকদারের অনুরোধে ডি রায়ান কনস্যুলার সেবাস্থল পরিদর্শন ও মুনা তাসনিমের সাথে মিটিং করেন।

সাইদা মুনা তাসনিম অন্তর্বর্তী সরকার থাকাবস্থায়ই আয়ারল্যান্ডে দূতাবাস প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।

বিজনেস & কমার্স CEO Dee Ryan
কনস্যুলার সেবায় যারা প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন

ABAI সার্বিক তত্ত্বাবধানে কনস্যুলার সেবাটি পরিচালিত হয়। যেহেতু সেবাস্থল লিমেরিকে ছিল, সেহেতু লিমেরিকের নির্বাচিত ছয়জন ABAI এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং ABAI এর অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতায় কনস্যুলার সেবাটি সমাপ্ত হয়। এছাড়াও লিমেরিক ও অন্যান্য কাউন্টির অভিজ্ঞ ভলান্টিয়ারগণ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।

লিমেরিকের আবাই সদস্যরা হলেন জনাব আনোয়ারুল হক আনোয়ার, জনাব মনিরুল ইসলাম মনির, জনাব শাহিন রেজা, জনাব মোজাম্মেল হক, জনাবা মোসাম্মৎ শম্পা লিলি ও জনাবা শিরিন আক্তার।

এছাড়াও আবাইয়ের অন্য যারা প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন তন্মদ্ধে জনাব আজিজুল হক মাসুদ, জনাব কাজী শাহ আলম, জনাব সারোয়ার মোরশেদ, জনাব এস এম হাসান, জনাব রাব্বি খান অন্যতম। আবাইয়ের সাধারণ সম্পাদক জনাব আনোয়ারুল হক আনোয়ার সেবা কার্যক্রমের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করেন। আবাইয়ের সভাপতি জনাব জিন্নুরাইন জায়গিরদার হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমের সাথে দূতাবাস সংক্রান্ত বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা করেন।

লিমেরিকের যারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তন্মদ্ধে জনাব আজাদ তালুকদার, জনাব আজমল হোসাইন, জনাব এ.কে. আজাদ, জনাব আমিনুল ইসলাম রনি, জনাব সাহাবুদ্দিন শিহাব, জনাবা তানজিনা সিদ্দিকা শিখি, জনাবা সুরাইয়া মান্নান, জনাবা মুক্তা মতিন, জনাবা আইনুন নাহার জলি, জনাবা আয়েশা মনির, জনাব রাশেদ খায়ের, জনাব ইয়াসিন ইফতি ভূঁইয়া, জনাব নজরুল ইসলাম, জনাব সৈয়দ মনিরুল ইসলাম লিটন, জনাব আলাউদ্দিন, জনাব জাহাঙ্গীর আলম, জনাব জাকারিয়া খান, জনাব মোতালেব হোসাইন, জনাব রহমান হক, জনাব ফিরোজ হিরণ, জনাব মিজান নাসিম, জনাব মাসুম আলম, জনাব মাসুদ আহমেদ, জনাব রফিক, জনাব ওমর এফ নিউটন ও প্রমুখ।

লিমেরিকের বাহিরে থেকে জনাব ইকবাল মাহমুদ ও জনাব হা সরকার ঝিনুক তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে উভয় দিনেই যথেষ্ট সহযোগিতা করেন।

ABAI এর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন

কনস্যুলার সেবাকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য আবাই কতৃপক্ষ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। যারা সেবা নিতে এসে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে এবং অনেকে সেবা নিতে পারেন নি ডকুমেন্টের ঘাটতির কারণে সবার প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে সেবার মান আরো বৃদ্ধি করতে আবাই বদ্ধ পরিকর।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশ হাই কমিশনকে সহায়তা করে পালাক্রমে ABAI আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গায় সেবা দেয়ার জন্য আশাবাদী।

Facebook Comments Box