আইরিশ কিংবা ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী বাংলাদেশিদের দেশে গমনের জন্য নো-ভিসার প্রয়োজন পড়ে। নো-ভিসা স্ট্যাম্প পাসপোর্টে থাকলে বিদেশি পাসপোর্টধারী বাংলাদেশিদের বাংলাদেশ গমনের ক্ষেত্রে আলাদা করে ভিসা নেয়ার প্রয়োজন পড়েনা। একবার নো-ভিসা নেয়া হলে পাসপোর্টের মেয়াদ পর্যন্ত নো-ভিসার মেয়াদ থাকে।
নতুন বিদেশি পাসপোর্টধারী কিংবা পুরনো বিদেশি পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নো-ভিসা নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। সেক্ষেত্রে নো-ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক সময় অনেকেই সমস্যার সম্মুখীন হন এবং পূর্ণ আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকার কারণে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। এই ধাপে ধাপে আবেদনের নির্দেশনাবলি আশা করি অনেকের উপকারে আসবে।
এই আর্টিকেলটিতে অনলাইন আবেদনপত্র পূরণ, কি কি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট লাগবে এবং কি কি পদ্দতিতে কি উপায়ে স্বশরীরে কিংবা পোস্টের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে সবকিছুর উপর স্টেপ বাই স্টেপ নির্দেশনা দেয়া হবে।
প্রথম পর্যায়ঃ অনলাইন আবেদনপত্র পূরণ
প্রক্রিয়ার শুরুতেই অনলাইন আবেদনপত্রের ফর্মটি পূরণ করে নিতে হবে। যার জন্য আপনি সরাসরি www.visa.gov.bd ওয়েব লিঙ্কটিতে গেলেই হবে অথবা এখানে ক্লিক করুন।
ক্লিক করার পর নিম্নোক্ত পেজটি দেখতে পাবেন, সেখানে গিয়ে নিচে বাম পাশের বক্সটি টিক দিয়ে পরবর্তী পেজে যান। সেখানে আপনার ইমেইল এড্রেসটি দুইবার দিয়ে ক্যাপচা শব্দগুলো হুবহু টাইপ করে লগঅন করুন।
১ম ধাপঃ লগঅন করার পর এক নাম্বার পেজটি দেখতে পাবেন, এটা হচ্ছে ফর্মের প্রথম ধাপ। এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত অংশ। যা সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে এবং এখানে যে তথ্য দিবেন সেটাই আপনার ভিসা পেজে প্রদর্শন করবে। এখানে আপনার নিজ নাম দুইবার টাইপ করতে হবে এবং দুই নামই একই নাম এবং বানান সম্বলিত হবে। এর পর আপনার বিদেশের ঠিকানা (ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ইত্যাদি) এবং এর পরে বাংলাদেশের ঠিকানা এবং একটি বাংলাদেশের ফোন নাম্বার দিতে হবে। জন্মতারিখ সঠিকভাবে প্রদান করুন। এরপর নিচের তথ্যগুলো ধাপে ধাপে পূরণ করুন।
ছবি এখানে না দিলেও চলে, তবে দিলে ভালো। আপলোড করার জন্য কি সাইজের ছবি দিতে হবে তা ছবির নিচে দেয়া আছে। সাধারণত পাসপোর্ট সাইজের ছবি হলেই চলবে। মনে রাখবেন ছবি আপলোড করার পর এখানে নাও দেখাতে পারে তবে ফর্মটি ডাউনলোড করার পর দেখতে পাবেন। যদিও পাসপোর্ট সাইজের এক কপি প্রিন্টেড ছবি নিয়ে যেতে হবে অথবা পোস্টের সাথে পাঠাতে হবে।
২য় ধাপঃ পেজ ১ এর সব পূরণ করার ফর কর্নারে Save&Next এ ক্লিক করে পরের পেজে যান। সেখানে Type & Visa Requirement এ No Visa Required সিলেক্ট করে পরবর্তী পেজে যান।
৩য় ধাপঃ তিন নাম্বার পেজে যাবার পর নিচের মত একটি পপ আপ স্ক্রিন দেখতে পাবেন যা অ্যাপ্লিকেশন রেফারেন্স নাম্বার এবং পাসওয়ার্ড দেখতে পাবেন। এ অংশটুকু সেভ করে রাখুন। যা আপনাকে পরে আপনার কাজে লাগতে পারে। যেমন আপনি আবেদন ফর্মটি আংশিক পূর্ণ রেখে চাইলে পরে আবার লগইন করে আবার শুরু করতে পারেন এবং এই রেফারেন্স নাম্বারটিই আপনার প্রিন্ট করা ফর্মে দেখতে পাবেন এবং এই নাম্বারই এম্বেসিতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং দিতে দরকার হবে।
এবং একই পেজে আপনার বর্তমান বিদেশি পাসপোর্টের নাম্বার, ইস্যুর জায়গা, ইস্যু তারিখ এবং মেয়াদ উত্তিন্নের তারিখ প্রদান করতে হবে। এর পর নিচে আরেকটা সেকশন আছে যেখানে শেষ কবে বাংলাদেশ গিয়েছেন সে তথ্য দিতে হবে। দেশে গিয়ে থাকলে YES, না গিয়ে থাকলে NO, আর তথ্য হাতে না থাকলে Yes, but don’t have information to hand অপশনে ক্লিক করতে হবে। গিয়ে থাকলে আগের পাসপোর্ট এর নো-ভিসা পাতা থেকে তথ্য নিচের অংশে প্রদান করতে হবে।
৪র্থ ধাপঃ চার নাম্বার পেজটি মূলত পেমেন্টের তথ্য। এই অংশে কোন তথ্য দেবার দরকার নেই, শুধুমাত্র Save&Next এ ক্লিক করে সরাসরি পরের পেজে চলে যান।
৫ম ধাপঃ এই পাতায় আরো কিছু তথ্য পূরণ করতে হবে। এই পাতার প্রথম অংশে আবেদনকারীর বাবা, মা ও স্পাউস (যদি থাকে) এর পূর্ণ নাম এবং তাদের জাতীয়তার তথ্য প্রদান করতে হবে। দেশে যাবার সম্ভাব্য তারিখ যেকোন একটি ভবিষ্যতের তারিখ দিলেই হবে, আর দেশে যাবার কারণ যেকোন একটা উল্লেখ করলেই হবে, যেমন Family Visit। নিচের স্ক্রিনশট মোতাবেক কিছু অংশ পূরণ না করলেও চলবে। এ অংশ পূরণ হলে পরের পাতায় চলে যান।
৬ষ্ঠ ধাপঃ এই পাতা খুবই সংক্ষিপ্ত। নিচের হুবহু নিচের স্ক্রিনশট এর মত দেখতে পাবেন। Group/Order by অংশ FM সিলেক্ট করুন। এরপর ভিসা অফিস হবে আবেদনকারীর লোকেশান অনুযায়ী। যেমন ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের আবেদনকারীরা London, স্পেনের আবেদনকারীর জন্য Madrid ইত্যাদি।
৭ম ধাপঃ এখানে ফর্ম জমা দেবার মুহূর্তে কি কি ডকুমেন্ট সাথে দিবেন তার স্থলে টিক প্রদান করতে হবে (সাপোটিং ডকুমেন্ট এর তথ্য প্রবর্তিতে উল্লখে করা আছে)।
৮ম ধাপঃ এটাই মূলত শেষ পাতা। এখানে এ পর্যন্ত যে যে তথ্য দিয়েছেন তার সব এখানে দেখতে পারবেন। দেখে নিবেন সব তথ্য ঠিক আছে কিনা। যদি কিছু ভুল বা বাদ পড়ে থাকে তাহলে পেছনে গিয়ে এডিট করে নিতে পারবেন। সব ঠিক থাকলে পাতার একবারে শেষ বাম কোনায় ডিক্লারেশন বক্সে টিক দিয়ে Save&Next এ ক্লিক করে সাবমিট করুন। এর পরে ডাউনলোড অপশন থেকে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন।
দ্বিতীয় পর্যায়ঃ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট (নথি)
- অনলাইনে পূরণ করা ফর্মটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে
- এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- অরজিনাল বিদেশি (আইরিশ/ব্রিটিশ) পাসপোর্ট
- বাংলাদেশি পাসপোর্ট এবং আগের পাসপোর্টের নো-ভিসা পেজের ফটোকপি। প্রথমবার নো-ভিসা হলে বার্থ সার্টিফিকেট এর ফটোকপি দিয়ে দেয়া ভালো।
- বিদেশে জন্মগ্রহণ করা বাচ্চাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বাবা মায়ের বার্থ সার্টিফিকেট এবং বাংলাদেশি পাসপোর্টের কপি দিতে হবে।
- নো-ভিসা ফি £৪৬ পাউন্ড
তৃতীয় পর্যায়ঃ আবেদন জমা দেয়ার পক্রিয়া
আবেদনকারীরা দুইভাবে আবেদন জমা দিতে পারেন। স্বশরীরে এম্বেসিতে উপস্থিত হয়ে অথবা পোস্টের মাধ্যমে পাঠিয়ে আবেদন জমা দেয়া যায়।
স্বশরীরে জমা দেয়ার পক্রিয়া
স্বশরীরে দুইভাবে জমা দেয়া যায়। কনস্যুলার সেবা দিতে যখন পাসপোর্ট সার্জারি আসে অথবা বাংলাদেশি এম্বেসিতে উপস্থিত হয়ে। উভয় ক্ষেত্রেই ফর্ম পূরণ করে নিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক।
তবে স্বশরীরে জমা দিতে বাংলাদেশি এম্বেসিতে যাওয়ার আগে শুধুমাত্র অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে যেতে হবে। এই লিঙ্ক এ ক্লিক করলেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর ফর্ম দেখতে পাবেন যেখানে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পূরণ করে আপনার পছন্দমত তারিখে বুকিং দিয়ে নিতে পারেন। তবে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং দেয়া ভালো, অনেকসময় ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত বুকিং স্লট বুক হয়ে গিয়ে থাকে।
বুকিং ফর্মে আবেদনকারীর নাম, জন্ম তারিখ, বুকিং এর তারিখ, কান্ট্রিকোডসহ ফোন নাম্বার, ইমেইল এড্রেস এবং অনলাইন অ্যাপলিকেশন নাম্বার দিতে হবে। অনলাইন অ্যাপলিকেশন নাম্বার ডাউনলোডকৃত ফর্মেই পাওয়া যাবে।
গুরুত্বপূর্ণঃ যদি কোন কারণে আপনার পছন্দমত তারিখে অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর স্লট না পাওয়া যায়, কিন্তু নো-ভিসা জরুরি ভিত্তিতে দরকার পড়ে, তাহলে এম্বেসিতে কল দিয়ে আপনার অবস্থান বর্ণনা করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিতে পারেন।
পোস্টের মাধ্যমে আবেদন পাঠানোর প্রক্রিয়া
অনেকক্ষেত্রে স্বশরীরে উপস্থিত হওয়া সম্ভব হয়না, আবার কিছু ক্ষেত্রে এম্বেসি কতৃক স্বশরীরে আবেদন নেয়া বন্ধ থাকে, সেসবক্ষেত্রে পোস্টের মাধ্যমে আবেদন পাঠিয়েও নো-ভিসার আবেদন প্রেরণ করা যায়।
স্বশরীরে আবেদন জমা দিতে যে ডকুমেন্ট দরকার পড়ে একই ডকুমেন্টস গুলোই পাঠাতে হবে, কিন্তু শুধুমাত্র নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বাড়তি অনুসরণ করতে হবেঃ
১। আবেদন ফি £৪৬ ব্যাংক ড্রাফট করে পোস্টের সাথে পাঠাতে হবে। ড্রাফট করতে হবে ”Bangladesh High Commission, London” এর নামে। যারা আয়ারল্যান্ড থেকে পোষ্ট পাঠাবেন তাঁদেরকে বাড়তি £১০ পোস্টের খরচ বাবদ ড্রাফট করতে হবে।
২। পোস্টের সাথে আবেদনকারীর ঠিকিনাসহ একটি খালি ইনভেলপ দিয়ে দিতে হবে।
৩। লন্ডন হাই কমিশনের এই ঠিকানায় আবেদন পাঠাতে হবেঃ Consular Wing, Bangladesh High Commission, 28 Queen’s Gate London SW7 5JA, UK. Phone:+447438429939, Email: bdhighcomlondon@gmail.com
বাংলাদেশ হাই কমিশন ইউকের তথ্যমতে পোস্ট এর মাধ্যমে প্রেরিত নো-ভিসা সংযুক্ত পাসপোর্ট ফেরত পেতে ২১ কর্মদিবসের বেশি সময় লাগতে পারে। যাদের জরুরি ভিত্তিতে নো-ভিসা এবং পাসপোর্ট প্রয়োজন উনারা স্বশরীরে গিয়ে আবেদন করাই শ্রেয়।
জেনে রাখা প্রয়োজনঃ আয়ারল্যান্ডে এখন Permanent TSB ব্যাংক ছাড়া অন্য কোন ব্যাংক – ব্যাংক ড্রাফট করে না। ব্যাংক ড্রাফট করতে ঐ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকা বাঞ্ছনীয়। কারো অ্যাকাউন্ট না থাকলে যার আছে তাঁকে দিয়ে করিয়ে নিতে পারেন।
অ্যাডহক নির্দেশিকাঃ
– অ্যাপ্লিকেশন উইন্ডোজ কম্পিউটারে করাই ভালো। ম্যাক ব্যবহারকারীরাও করতে পারেন, তবে ম্যাক ব্যবহারকারীদের মাঝে মাঝে সমস্যা হতে পারে।
– ইন্টারনেট ব্রাউজারের আপডেটেড ভার্সন ব্যবহার করুন। গুগল ক্রোম, মজিলা ফায়ারফক্স ও ইন্টারনেট এক্সফ্লোরার ব্রাউজার ব্যাবহার করা শ্রেয়।
– আবেদন পূরণের সময় কোন স্পেশাল অক্ষর যেমন (, ; ‘ : – _@) ব্যবহার করবেন না। তাহলে আবেদন সাবমিট করতে সমস্যা হবে।
আশা করি উপরোক্ত নির্দেশিকা ধাপে ধাপে অনুসরণ করে খুব সহজেই আপনার নো-ভিসার আবেদন নিজেই করে নিতে সক্ষম হবেন।
হাই কমিশনের অন্যান্য সেবা ও কনস্যুলার সেবার তথ্য জানতে এখানে ভিজিট করুনঃ www.irishbanglatimes.com/step_by_step_guidance