প্রতি বছরের ন্যায় এবারো হয়ে গেলো তরুণ বিজ্ঞানী মেলা BT Young Scientist and Technology Exhibition 2021. এবারই প্রথমবারের মতো এটি অনলাইনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলায় লিমেরিকের বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত শিক্ষার্থী অরণ্যা বিশেষ বিভাগে তাঁর প্রজেক্টের জন্য পুরস্কার প্রাপ্ত হয়।
সে Castletroy College, Limerick এ ২০২১ শিক্ষাবর্ষে জুনিয়র শাখার তৃতীয় শ্রেণীতে অধ্যায়ন করছে। প্রতিযোগীতায় তাঁর প্রজেক্ট নাম্বার ছিলো ৩৬৯৭। এই বছরে বিজ্ঞান মেলার ৫৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করা হয়। ব্রিটিশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি BT গত ২০ বছর যাবৎ আয়ারল্যান্ডে তরুণ বিজ্ঞানী তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকায় নিজেদের স্পন্সর হিসেবে যুক্ত রেখেছে। এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করার বয়স সীমা ১২ থেকে ১৯ বছর।
পুরো আয়ারল্যান্ড থেকে বাছাই করে দুই হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এই বারের তরুণ বিজ্ঞানী মেলায় তাদের প্রজেক্ট জমা দেয়। সেখান থেকে ৫৫০টি প্রজেক্ট চুড়ান্ত পর্বে আসার টিকিট প্রাপ্ত হয়। আমাদের ছোট্ট সোনামনি লিমেরিকের বাসিন্দা, বাংলাদেশিদের অহংকার “অরণ্যা জাকারিয়া খাঁন” Social and Behavioural Sciences বিভাগে বিশেষ পুরস্কার প্রাপ্ত হয়। সে “The development of racial prejudice in children” বিষয়ের উপর ৫০ পৃষ্ঠার একটি প্রজেক্ট জমা করে। এই প্রজেক্টে তত্ব উপাত্তের মাধ্যমে সে তুলে ধরে সামাজিক প্রভাব কিভাবে একজন শিশুর চিন্তাধারা ও আচরণে বর্ণ বৈষম্যের দিকে প্রভাবিত করে। সাথে সাথে সে তুলে ধরে কিভাবে এটিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তার মতে প্রায় ৯০% কালো বর্ণের শিশু কিশোর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে এই বৈষম্যের স্বীকার হয়ে থাকে।
সবাইকে সে জানাতে চেয়েছে আসলে বর্ণ বৈষম্য কি? সে মনে করে কোন শিশুই জন্মগতভাবে তাঁর ত্বকের বর্ণ বা সৌন্দর্য অন্য শিশুর চেয়ে অধিক বা কম নিয়ে পৃথিবীতে আসে না। এটি ধীরে ধীরে সমাজে আমাদের আচার আচরণের মাধ্যমে মনের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে। সে এই প্রজেক্টের মাধ্যমে তুলে ধরেছে কিভাবে একজন শিশু কিশোর আমাদের সমাজে চলে আসা মানুষের মনের মধ্যে ভুল দৃষ্টিকোণকে মোকাবেলা করবে।
সে উদাহরণের মাধ্যমে দেখিয়েছে কাপড়ের বিজ্ঞাপন, মেক-আপের বিজ্ঞাপন সহ নানা বিজ্ঞাপনে একটি নির্দিষ্ট রঙকে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তাছাড়া পিতামাতা শিশুদের সাথে রেসিজমের বিষয়টি খোলামেলা আলোচনা না করাকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছে। বিভিন্ন বইতে, কার্টুনে, সিনেমাতে, টিভি শোতে প্রধান চরিত্রকে ফর্সা বর্ণের মডেল এবং ভিলেনকে কালো বর্ণের মডেল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ থেকে একটি শিশু ধরেই নেয় তার বর্ণ ফর্সা না হলে সমাজে বা জীবনে কিছু করা সম্ভব হবে না। তাছাড়া সে মনে করে শিক্ষার অভাবও বিশেষভাবে বর্ণ বৈষম্যের একটি কারণ। সে তার বিশ্লেষণে দেখায় পর্যাপ্ত পরিমানে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার না করতে পারা বা জ্ঞানের অভাবেও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে বর্ণ বৈষম্যের সৃষ্টি করছে যা প্রকৃত পক্ষে দারিদ্রতা বা দুর্নীতির কারণে ঘটে থাকে।
অরণ্যার পিতা “জাকারিয়া খাঁন” ও “মাতা শিউলি খাঁন”। তাঁর পিত ২০০০ সালে আয়ারল্যান্ডে আসেন এবং সে ২০০৬ সালে ৩ মাস বয়সে আয়ারল্যান্ডে তাঁর মাতার সাথে আসে। তাঁর বয়স এখন ১৫ বছর। সে পড়াশুনার পাশাপাশি অতিরিক্ত কারিকুলাম একটিভিটি হিসেবে স্কুলে বাস্কেট বল খেলতে পছন্দ করে।
এবারের বিজ্ঞান মেলায় কর্কের Bandon Grammar School থেকে ষষ্ঠ শ্রেণীর একজন ছাত্র যার বয়স ১৭ বছর, নাম Gregory Tarr, প্রথম পুরস্কার জিতে নেওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে। তাঁর প্রজেক্টের নাম ছিল “Towards detecting state-of-the-art deepfakes”. Deepfake হচ্ছে কোন ব্যক্তির ছবিতে বা ভিডিওতে অন্যের চেহারা লাগিয়ে মানুষকে ধোঁকা দেওয়া। এ রকম ছবি বা ভিডিও দেখলে বুঝার উপায় থাকে না যে আসলে এই ছবি বা ভিডিওটি ফেইক করে বানানো হয়েছে। Gregory এমন একটি সফটওয়ার বানায় যার মাধ্যমে এরকম ফেইক ভিডিও বা ফেইক স্থির ছবি নির্ণয় করা সম্ভব।
১৯৬৩ সালে UCD এর দুইজন পদার্থ বিদ্যার গবেষক ডঃ টম বুর্কি ও ডঃ টনি স্কট নিউ ম্যাক্সিকোতে গবেষণায় থাকাকালীন “বিজ্ঞান মেলার” ধারণা নিয়ে আসেন। তাঁরা সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, এমন একটি বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করলে আয়ারল্যান্ডের তরুণ যুবকদের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হবে এবং এর থেকে আয়ারল্যান্ড উপকৃত হবে। সে থেকে “Young Scientist Exhibition” এর জন্ম নেয়া।
এই প্রতিযোগিতাটি আয়ারল্যান্ডে সর্বপ্রথম ডাবলিনের মেনশন হাউজে সংগঠিত হয়। সেই প্রতিযোগিতায় ২৩০ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। প্রথমবারের মতো তখন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো “John Monaghan”. সে সম্প্রতি একটি আমেরিকান বায়োটেক কোম্পানির Chief Executive Officer of Avigen হিসেবে চাকরি থেকে অবসরে যায়। প্রথম বছরের সফলতা ও বিশাল জনপ্রিয়তা দেখে পরবর্তী বছর এটিকে ডাবলিনের RDS এ স্থানান্তরিত করা হয়। সেই থেকে এই প্রতিযোগিতা প্রতি বছর RDS এ-ই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
খুব সম্প্রতি অংশগ্রহণ কারীর সংখ্যা বহুগুনে বেড়ে গিয়েছে এই প্রতিযোগীতায়। এই বছর ২০০০ এর বেশি প্রজেক্ট জমা পড়ে সেখানে। এই দুই হাজার থেকে বাছাই কৃত সর্বমোট ৫৫০ টি প্রজেক্ট চুড়ান্ত প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে।
এই ইভেন্ট ৪০,০০০ হাজারেরও বেশি দর্শনার্থীকে আকৃষ্ট করে যা ইয়োরোপে এই ধরণের অনুষ্ঠানে সর্ববৃহৎ বলে পরিচিত। অনেকের মতামত এরকম শিশু কিশোরদের নিয়ে আয়োজিত বিজ্ঞান মেলার মধ্যে এটি বিশ্বে সর্ববৃহৎ।
এই পর্যন্ত আয়ারল্যান্ডের ১৪ জন তরুণ বিজ্ঞানী ইয়োরোপীয়ান পর্যায়ের বিজ্ঞান মেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আইরিশ ২০ জন তরুণ বিজ্ঞানী তুলনামূলকভাবে বয়সে ছোট অবস্থাতেই আমেরিকার বিভিন্ন বিজ্ঞান মেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে।
BT Young Scientist and Technology Exhibition সাধারণত চারটি মূল বিভাগে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আর ৮০ টিরো বেশি উপ বিভাগে এগুলোকে বিভক্ত করা হয়। আমাদের পাঠকদের সুবিধার্থে ক্যাটাগরিগুলো উপ ক্যাটাগরি সহ তুলে ধরা হলো। আমরা আশা করি প্রতি বছর আমাদের অনেক অনেক শিক্ষার্থী এই রকম বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহণ করবে এবং আমাদের দেশের নাম ও তাঁর পরিবারের নাম উজ্জ্বল করবে।
Biological and Ecological sciences
agriculture, anatomy, animal science, biochemistry, biotechnology, disease, ecology, environmental science, enzymology, forestry, food science, genetics, horticulture, medical science, metabolism, microbiology, molecular biology, physiology, physiotherapy, plant science or veterinary science.
Chemical, Physical and mathematical sciences
chemistry, physics, mathematics, applied mathematics, engineering, computer programming and language or electronics. meteorology, geophysics, geology and astronomy.
Social and Behavioral sciences
social and behavioral sciences, economic, geographical, psychological or sociological studies of human behaviour, attitudes and experience, social analysis of environmental factors, demography, learning and perception as well as the study of attitudes and behaviour in relation to health, nutrition, work, leisure and living habits are all included here. Also eligible are projects on consumer affairs, effects on society, social anthropology and political science provided they involve the use of scientific methods.
Technology
The use of technology in new or improved applications, enhanced efficiencies, new innovations or better ways to do things. The category could include things related to the Internet, communications, electronic systems, robotics, control technology, applications of technology, biotechnology innovative developments to existing problems, computing and automation.
বিস্তারিত নিন্মের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যাবে।