যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে কমে ৫ কিলোমিটার প্রস্থের মাত্র আধা কিলোতে
কীর্তনখোলা নদীর পানিতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ গুণ লবণাক্ততা পাওয়া গেছে। হঠাৎ করে গত বেশ কয়েকদিন ধরে কীর্তনখোলার পানি নোনতা লাগছে। এই নদীতে এতদিন গোসল করলেও, অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে স্থানীয়রা এখন আর নদীতে নামছেন না। (খবর-ডেইলি স্টার)।
বিষয়টা এলার্মিং।
সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির চেয়েও এখানে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে স্বাদু পানির চাপ কমে যাওয়া। এই বছর যমুনায় অস্বাভাবিক কম পানি আসছে। ৫ কিলোমিটার প্রস্থের যমুনা মাত্র আধা কিলোতে নেমেছে, নদী গর্ভে ধু ধূ বালুচর জেগে উঠেছে। ফলে মোহনায় স্বাদু পানির চাপ কমে গেছে এবং স্থলে ধীরে ধীরে লবণ পানির আগ্রাসন বাড়ছে।
ঠিক গত সপ্তায় খবর এসেছে যে, ফারাক্কা পয়েন্ট থেকে পানি একেবারেই কম ছাড়ায় গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প বন্ধ করা হয়েছে। গত ৫ বছরে এবছরই সবচেয়ে কম পানি আসছে পদ্মায়। গঙ্গার পানি প্রায় বন্ধ, তিস্তার পানি শতভাগ বন্ধ, যমুনার পানি আন্তঃ নদী সংযোগ প্রকল্পের কারনে অস্বাভাবিক কমে যাওয়ার সম্মিলিত প্রভাবে স্বাদু পানি অঞ্চলে লবণ পানির আগ্রাসন তীব্রতর হয়েছে। যমুনা বাংলাদেশের শুষ্ক মৌসুমের পানির চাহিদার ৬০% এর বেশি সরবারহ করে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা সিএনএ’র হিসেবে যমুনা অববাহিকায় বাংলাদেশের চাহিদার বিপরীতে অন্তত ২৫% পানি কমে আসে। বাংলাদেশের প্রাণ ও প্রকৃতির লাইফ লাইন যমুনায় পানি কমতে থাকলে এতে সুন্দরবনের আরেক দফা ক্ষতি হবে।
পাশপাশি স্বাদু পানির মাছ, কৃষি ফলন, ধান এমনকি গবাদি পশু পালন চরম ভাবে বাঁধাগ্রস্ত হবে। স্যালাইন পানির ওয়াটার ফিন্ট্রেশনের দির্ঘমেয়াদী প্রভাবে ভূগর্ভস্ত পানিতে লবণক্ততা বাড়বে, এতে করে ধীরে ধীরে ধান চাষের সমস্যা ঘনীভূত হবে। পাশাপাশি শুরু হবে স্বাদু পানি ব্যবহারে নির্ভরশীল মানুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যা, রোগবালাই এবং নিত্যদিনের কাজ কর্মের অসুবিধা।
বাংলাদেশের উচিৎ সারফেইস ওয়াটার নিয়ে ভারতের সাথে কঠিন অবস্থানে যাওয়া। পানি নিরাপত্তা, খাদ্য ও কৃষি নিরাপত্তার জন্য সারফেইসের স্বাদু পানির ন্যায্য হিস্যার বিকল্প নাই।
উল্লেখ্য যে, গত বছর বলেশ্বর নদীতে হঠাৎ লবণাক্ততা বেড়ে গিয়েছিল। পরে দেখা যায়, শাখা নদী দিয়ে উজানের পানি আসায় বাধা তৈরি হওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছিল। ওই বাধা অপসারণ করার পর পানির লবণাক্ততা স্বাভাবিক হয়ে আসে।