টরন্টোর পাশে লেক অন্টারিওর তীরে শহর মিসিসাগা। এই মিসিসাগাই বেগমপুরা বা বেগম পাড়া নামে খ্যাত। ২০০৬ সাল হতে বাংলাদেশ থেকে কানাডায় বিপুল হারে অভিবাসন শুরু হয়। পরিসংখ্যান কানাডা (২০২০) অনুসারে, কানাডায় ১,০০,০০০ বাংলাদেশী বসবাস করেন। মিসিসাগা কথিত বেগমপাড়া হলেও সারা কানাডায় এ রকম অনেকগুলো ‘বেগম পাড়া’ আছে।
বেগম পাড়ার বেগমদের সাহেবরা তাঁদের সঙ্গে থাকেন না। তারা বাংলাদেশে থেকে কষ্ট করে টাকা বানান; টাকা বানাতে ক্লান্তি লাগলে পরে এসে সেখানে পরিবারের সঙ্গে ‘আরামের’ সময় কাটান। তাদের অ্যাপার্টমেন্টগুলো বিলাসসামগ্রীতে ভরা। তাদের সন্তানেরা সে দেশের ভালো ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। ‘বেগম’দের একমাত্র কাজ হলো ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করা আর ‘আরাম’ করা।
বাংলাদেশের বেগমদের সাহেবরা দেশে চাকরি, ব্যবস্যা-বাণিজ্য, রাজনীতি করে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে তাদের অর্জিত অবৈধ আয় কানাডায় পাচার করে তাদের বেগমদের কাছে পাঠায়। আর তাদের বেগমরা-সন্তানরা এখানে অভিজাত এলাকার দামি বাসা-বাড়ি-গাড়িতে বিলাসবহুল আয়েশি জীবনযাপন করেন।
বেগমদের সাহেবরা কানাডাকে ‘সেকেন্ড হোম’ বানিয়েছেন বিনিয়োগকারী কোটায়। মাত্র দেড় লাখ কানাডীয় ডলার অর্থাৎ এক কোটি ১০ লাখ টাকা জমা দিলেই কানাডা নাগরিকত্ব দিচ্ছে। কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্থ সাহেবদের এই অর্থ তো কোন ব্যাপারই না।
বাংলাদেশি সাহেবরা কত শত-হাজার কোটি টাকা কানাডায় পাচার করছেন, তার হিসেব নেই। বাংলাদেশিদের ‘রেমিট্যান্স’ কারণেই নাকি ইউরোপ আমেরিকার মত মতো অর্থনৈতিক ধসের স্বীকার হয়নি কানাডা।
ঠিক কতজন বাংলাদেশি কত শত-হাজার কোটি টাকায় এভাবে নাগরিকত্ব কিনছেন, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান জানা যায়নি। অবৈধ পথে ব্যয়িত অর্থও অবৈধভাবেই অর্জিত বলেই টাকাটা তাঁরা দেশে রাখা নিরাপদ মনে করেননি। রাজনীতিবিদেরা হরহামেশাই পরস্পরের বিরুদ্ধে দেশ বিক্রির অভিযোগ করেন। দেশের অর্থনীতিকে লুট করে বিদেশের নাগরিকত্ব কেনার এই ব্যবসাই হলো ‘দেশ বিক্রির’ আসল ব্যবসা। সম্প্রতি একজন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ৪০ বছরের আদমশুমারির গোপনীয় ‘র-ডাটা’ বিদেশিদের কাছে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর মতো অনেকেই আছেন। শেয়ার মার্কেট, হল-মার্ক, ডেসটিনি, সোনালী ব্যাংকের টাকা আর কোথায় যাবে? এভাবে স্বদেশে ঘুষ-দুর্নীতি-দখলবাজি করে অনেকেই বনে যাচ্ছেন বিদেশের ‘সম্মানিত’ নাগরিক।
আজও দুর্নীতিবাজ সাহেবরা দেশকে বিক্রি করে যাচ্ছেন। দেশের প্রতি ভালোবাসা শুধুই মুখেই। দেশের রুটি রুজির পথ বন্ধ হলে কিংবা সময় পুরলে সাহেবরা ঠিকই পাড়ি জমান বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা বেগম পাড়ায় বেগমদের সান্নিধ্যে।