২৩ শে অক্টোবর সোমবার, জনাব তৌহিদ খানের পরিবারে বয়ে যাচ্ছে আনন্দের উচ্ছ্বাস। কারণ জনাব তৌহিদ খানের বড় ছেলে জনাব তারেক খান সেদিন একটি ইমেইল পেয়েছে। ইমেইলটি এসেছে আইরিশ ডিফেন্স ফোর্স (Irish Defence Force) থেকে। ইমেইলে আমন্ত্রণ জানিয়েছে জনাব তারেক খান কে আইরিশ ডিফেন্স ফোর্সের এয়ার কর্পস (Air Corps) ডিপার্টমেন্টে প্রাইভেট ৩ স্টার র্যাঙ্কে এয়ারক্রাফট টেকনিশিয়ান হিসেবে যোগদান করার জন্য।
জনাব তারেক খান প্রথম কোন বাংলাদেশি হিসেবে আইরিশ সরকারের ডিফেন্স ফোর্সের মত সন্মানজনক একটি পদে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। এটা শুধু জনাব তৌহিদ খানের পরিবারই নয়, সমগ্র বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য আনন্দের ও গর্বের বিষয়।
Tarek Khan, Aircraft Technician (Private 3 Stars), Air Corps, Irish Defence Force
জনাব তারেক বর্তমানে ইউনিভারসিটি অফ লিমেরিকে Aeronautical Engendering এ চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। কিন্তু এরই মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন একটি স্বনামধন্য এভিয়েশন কোম্পানি Atlantic Aviation Group এ, কর্মরত আছেন এয়ারক্রাফট টেকনিশিয়ান হিসেবে।
Atlantic Aviation Group এ থেকেই গড়তে পারতেন স্বপ্নিল ক্যারিয়ার। কিন্তু জনাব তারেকের স্বপ্ন যে আকাশ ছোঁয়া। সূক্ষ্ম মেধার অধিকারী এই টগবগে যুবক ধরতে চেয়েছেন স্বপ্নকে। তাইতো আবেদন করলেন আইরিশ ডিফেন্স ফোর্সে। কিন্তু শঙ্কিত ছিলেন এখানে চাকুরী হয় কি না হয়। কারণ এখানে চান্স পেতে পার হতে হবে বেশ কিছু কঠিন ধাপ। শুরুতে ছিল Aptitude Test, এরপর দেখাতে হয় শারীরিক সক্ষমতা (Physical Strength) এবং রয়েছে মুখোমুখি ইন্টারভিউ। সবশেষে আবার দিতে হয় হেলথ টেস্ট। কিন্তু সবগুলো ধাপ সফলতার সাথে পার করে সফল হলেন জনাব তারেক।
উক্ত পদে তাঁর মোট সার্ভিস পিরিয়ড বা সেবাকাল হচ্ছে ১২ বছর। তন্মদ্ধে ৯ বছর থাকবে অ্যাকটিভ সার্ভিস এবং ৩ বছর রিসার্ভ সার্ভিস। কিন্তু স্বপ্ন যার আকাশ ছোঁয়া এত অল্পতে কি আর তার তৃপ্তি মিটে? জনাব তারেকের ইচ্ছা পাইলট হয়ে পাখির মত দেশ বিদেশ উড়ে বেড়ানোর। তাইতো ১২ বছর মেয়াদকালের মধ্যে অর্জন করতে চান পাইলটের খেতাব। তাঁর জন্য থাকবে ফ্রি তে ডিফেন্স ফোর্স এর ট্রেইনিং নেয়ার সুযোগ। যদি এখানে জনাব তারেক চান্স না পেতেন তাহলেও তাঁর ইচ্ছা ছিল প্রাইভেটলি ট্রেইনিং নিয়ে পাইলট হওয়ার। কিন্তু তাতে গুনতে হত কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা।
ফ্রি পাইলট ট্রেইনিং ছাড়াও প্রাথমিক ট্রেইনিং এর পর আইরিশ ডিফেন্স ফোর্স থেকে অর্জন করতে পারবে Aircraft Military System এর উপর Level 8 ডিগ্রি। যেটা হবে ডাবলিন ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে এবং সার্টিফাই করবে European Union Aviation Safety Agency (EASA).
আগামী ১৩ ই নভেম্বর তিনি শুরু করবেন আইরিশ ডিফেন্স ফোর্সের কাজ। শুরু হবে Gormanston Army Camp এর ট্রেইনিং দিয়ে। এরপর থাকবে ২৯ সপ্তাহের বেসিক ট্রেইনিং। ২৮ মডিউলের এই ট্রেইনিং হবে Casement Aerodrome (Baldonnel) মিলিটারি এয়ারবেইজে।
তারেক খানের পরিচিতি
জনাব তারেক খান হচ্ছেন লিমেরিকে দীর্ঘদিন বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসী জনাব তৌহিদ খানের সুযোগ্য সন্তান। তাঁর রত্নগর্ভা মা হচ্ছেন নাজমুন নাহার। জনাব তৌহিদ খানের ত্রিরত্ন, তিন পুত্রের মধ্যে তারেক খান হচ্ছেন সবার বড়। বাকি দুই ভাই এর মধ্যে মেঝো তাইফ খান এবং সর্ব কনিস্ট সন্তান তাবির খান।
তারেক খানের মেঝো ভাই তাইফ খানও পিতার একজন সুযোগ্য সন্তান। বর্তমানে অধ্যয়নরত আছেন স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ট্রিনিটি কলেজে। অধ্যয়ন করতেছেন Engineering with Management এ। সর্ব কনিস্ট ভাই তাবির খান অধ্যয়ন রত আছেন লিমেরিকের St. Nessan’s National School এর 5th Class এ।
পরিবারের অভিব্যক্তি
সন্তানের এমন অর্জনে পরিবারে আনন্দের আর সীমা নেই। গর্বে বুক ভরে উঠেছে পিতামাতার।
জনাব তৌহিদ খান লিমেরিকের একটি হোটেলে ধীর্ঘদিন যাবত কর্মরত। তিনি জানান তাঁর রুজি হয়ত আহামরি কিছু ছিল না। কিন্তু তাঁর সন্তানদের দেখভাল ও পড়ালেখার জন্য কখনো কোন কার্পন্য করেননি। স্বল্প আয় থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজ অর্থ খরচ করে ছেলেকে পড়িয়েছেন প্রাইভেট টিউটরিয়ালে। তিনি জানান, ”কষ্ট হয়েছে কিন্তু ছেলের ভবিষ্যৎ ছিল সব কিছুর উর্ধে, আমার এই কষ্টই আজকে সুখকর মুহূর্ত এনে দিয়েছে’’।
জনাব তারেক খানের মা জানান, ছেলেমেয়ের পড়ালেখা ও সংসারের খরচ বহন করতে তাঁর স্বামী হিমশিম খাচ্ছিলেন। তার কারণে তাকেও হাতে নিতে হয়েছিল আয়ের উৎস। সংসার ঠিক রেখে নিজেও চাকুরী করেছেন সময়ে সময়ে। তিনি জানান, তার সন্তানরাও ছিল অনেক সহযোগী। বাবা মায়ের সাধ্যের বাহিরে যায়, কখনো করেনি এমন আবদার। বাবা মা চাপের মুখে পড়ে এমন কিছু করা থেকে তারা সবসময় বিরত ছিল। আমি শুধু তাদের সফলতা নয়, তাদের সরলতা, নৈতিকতা ও বাবা মায়ের প্রতি তাদের সন্মান প্রদর্শন করার জন্যও তাদেরকে নিয়ে আমি গর্ববোধ করি।
জনাব তৌহিদ খান জানান, তারকে পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম আয় করা শুরু করে বেশ কিছুদিন থেকে। তারেকের কিছু গুন আছে, সে গাড়ি মেরামত ও অন্যান্য হাতের কাজ ভালো জানে। যা দিয়ে সে কিছু আয় করতে পারে এবং তা আমাদের সাথে শেয়ার করে।
তারেকের বাবা মা আয়ারল্যান্ডের বাংলাদেশি কমিউনিটি, বিশেষ করে লিমেরিকের কমিউনিটির প্রতি কৃতজ্ঞ। বিভিন্ন সময় তাঁর পাশে থেকে শক্তি, সহায়তা প্রদান করার জন্য। উনাদের সন্তানদের মঙ্গল কামনায় সবার নিকট দোয়া প্রার্থনা করেন। যেন সন্তানরা মানুষের মত মানুষ হয়ে কমিউনিটির সেবা করতে পারে।
তারেক খান সবার নিকট দোয়াপ্রার্থী।