আজ ২৬ শে এপ্রিল রোজ বুধবার আয়ারল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশি কমিউনিটির কেন্দ্রীয় সংগঠন অল বাংলাদেশি এসোসিয়েশন অব আয়ারল্যান্ড (আবাই) আয়ারল্যান্ডের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এর মিনিস্টার জনাব জেমস ব্রাউন এবং চিপ ইমিগ্রেশন অফিসার জনাব কণর মারফি এর এর সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ফলফ্রসু মিটিং সম্পন্ন করেন। আবাই এর পক্ষ থেকে আইরিশ মন্ত্রণালয়ের এটাই প্রথম মিটিং।
লিমরিক সিটি ও কাউন্টি কাউন্সিলর জনাব আজাদ তালুকদের উক্ত মিটিং এ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন।
আবাই এর প্রতিনিধিগণ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা নিয়ে জাস্টিস মিনিস্টার জেমস ব্রাউনের সাথে সাক্ষাত করেন। আলোচনার বিষয়বস্তু নিম্নে বর্ণনা করা হল।
বাংলাদেশে আইরিশ দূতাবাস স্থাপন অথবা দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে কন্স্যুলার অফিস অথবা এজেন্ট স্থাপন, ভিসা বিষয়ক জটিলতা দূরীকরণ এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জোরালোভাবে অনুরোধ জানান। যেহেতু বাংলাদেশে আইরিশ কোন এম্বেসি বা দূতাবাস নেই সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে যেন অন্তত কন্স্যুলার অফিস স্থাপন অথবা VFS এর মত ইমিগ্রেশন এজেন্ট স্থাপন করা হয়। যাতে করে ভিসার আবেদন জমা দেয়া ও ভিসা সংগ্রহ করতে ভোগান্তির শিকার না হতে হয়। ভারত গিয়ে ভিসা জমা ও সংগ্রহ করা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়না এবং হলেও সময়সাপেক্ষ ও ভোগান্তির বিষয়। অনেকে সময়মত পাসপোর্ট হাতে পায় না এবং পাসপোর্ট হারানোরও নজির রয়েছে। এ বিষয়ে আবাই এর প্রতিনিধিগণ গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় রাখার জন্য মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।
আবাই এর প্রতিনিধিগণ বাংলাদেশ থেকে ওয়ার্ক ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসার কোটা বর্ধনের জন্য অনুরোধ জানান, অন্যান্য দেশের তুলনায় জনসংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশে এইসব ভিসা দেয়ার হাড় অত্যন্ত নগণ্য। ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন অফিসারদের অবহেলার কথাও উল্লেখ্য করেন প্রতিনিধিগন এবং কিছু ভিসা রিফিউজের প্রমাণও উত্থাপন করেন। বিগত সময়ে ওয়ার্ক ভিসা এবং স্টুডেন্ট ভিসা অনেক রিফিউজ হয়েছে শুধুমাত্র অবহেলার কারণে।
সেই সাথে বাবা মা এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি ভিসার ব্যবস্থা যেন করে সে অনুরোধও জানানো হয়।
এর পর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রাম এর জন্য অনুরোধ জানান। বর্তমানে আয়ারল্যান্ডে ২৪ টি দেশে ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রাম রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য নেই। যেমন পার্শ্ববর্তি দেশ ইংল্যান্ডে কেউ ভিসা পেলে আয়ারল্যান্ডে এবং আয়ারল্যান্ডে ভিসা পেলে ইংল্যান্ডে ভ্রমণ করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এই সুবিধা নেই।
আয়ারল্যান্ডে প্রায় ১৭ হাজার অনথিভুক্তদের বৈধতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তার প্রেক্ষিতে অনেকে বৈধতা পেলেও অনেকের আবেদন এখনো ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। আবাই এর প্রতিনিধিগণ কিছু আবেদনের প্রমাণসহ জাস্টিস মিনিস্টার এবং চিপ ইমিগ্রেশন অফিসার এর নিকট প্রদান করেন এবং উনারা বিষয়টাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
এরপর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইমিগ্রেশণ সার্ভিস অনলাইনকরণ। বর্তমানে ভিসা নবায়ন, স্ট্যাম্প গ্রহণের জন্য গার্ডা অথবা ইমিগ্রেশনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে ভিসা নবায়ন কিংবা স্ট্যাম্প গ্রহণ করতে হয়। যা সময় সাপেক্ষ এবং অনেকের জন্য সহজসাধ্য নয়। দেরিতে স্ট্যাম্প পাওয়ার কারণে অনেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, চাকুরী ও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশন মিস করে থাকে। এ বিষয় সমাধানের জন্য ও প্রয়োজনে অনলাইনে এই সেবা দেয়া যায় কিনা তা নিয়ে মন্ত্রীর সাথে আলোচনা করা হয়।
উপরোক্ত সব বিষয়কেই যৌক্তিক ও ভ্যালিড বলে জানান জাস্টিস মিনিস্টার এবং চিপ ইমিগ্রেশন অফিসার এবং বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখার আশ্বাস দেন এবং খুব শিগ্রই বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবেন বলে জানান।
এছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মন্ত্রীর সাথে খোলামেলা আলোচনা করেন আবাই এর নেতৃবৃন্দ।
উক্ত মিটিং এ আবাই এর পক্ষ থেকে উপস্থিত থাকেন সভাপতি জনাব জিন্নুরাইন জায়গীরদার, সাধারণ সম্পাদক জনাব আনোয়ারুল হক আনোয়ার ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইনজামামুল হক জুয়েল। মিডিয়ার পক্ষ থেকে উপস্থিত থাকেন সময় টেলিভিশনের সৈয়দ জুয়েল। জনাব আজাদ তালুকদার উপস্থিত থাকেন মিটিং এ অতিথি হিসেবে।
উপরোক্ত তিনটি এজেন্ডাই গুরুত্বপূর্ণ এবং আশু প্রয়োজন। বিষয়গুলা যদি ধাপে ধাপে সমাধান সম্ভব হয় তাহলে আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে। বিশেষ করে ইমিগ্রেশন বিষয়ে।