খাই খাই রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সে সংস্কৃতির লালন

0
71

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে খাই খাই রাজনীতি। বাংলাদেশে রাজনীতি নিয়ে দেখবেন অনেক মাতামাতি, কারণ এখানে খাই খাই সংস্কৃতিটা প্রকট। যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকা চাই ও যাওয়া চাই, কারণ ক্ষমতার আশীর্বাদেই লুটেপুটে খাওয়া সম্ভব। দেখবেন যে দল ক্ষমতায় থাকে তার সমর্থিত লোকজনের জিহ্বা মাইলসম লম্বা হয়ে যায় এবং তা দিয়ে যা পারে লেহন করে যায়, আর ক্ষমতার বাহিরের তারা তীর্থের কাকের মতো বসে বসে লালা ফেলে আর দিন গুনে যায় কবে ক্ষমতা হাতে পাবে এবং একই কাজটা করবে।

২০০৯ সালের আগের টার্মগুলোতে ক্ষমতার পালাবদল একটু দ্রুতই ছিল যার কারণে কেউ ধীর্ঘ সময় ভোগ করতে ও ভোগের বাহিরে থাকতে হয়নি। কিন্তু আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় ১৫ বছর থাকায় একটু অতিরিক্তই ভোগ করে ফেলেছে এবং বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি একটু বেশী সময়ই উপেক্ষিত থেকেছে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতাচ্যুত হবার সাথে সাথে দীর্ঘদিনের ক্ষুধা মেটাতে ক্ষুধার্ত বাঘিনীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়া থেকে বোঝা যায় তারা কতটাই না ক্ষুধার্ত ছিল।

দীর্ঘদিন ক্ষমতায় গেঁড়ে থাকা আওয়ামীলীগের ক্ষমতাচ্যুতি কিভাবে ঘটেছে তা বিএনপির একশ্রেণীর নেতাকর্মীরা মুহূর্তেই ভুলে গেল শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনা করেই। একই কাজ করতে মত্ত হয়ে পড়লো যে কর্মের কারণে জনগণ সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামীলীগের উপর ক্ষিপ্ত ছিল। মুহূর্তেই ভুলে গেল কী কারণে এত বড় ঐতিহাসিক একটা গনঅভ্যুত্থান ঘটে গেল! জনগণ যে বিএনপি কিংবা যারা একই কাজ করবে বা করতে উৎসাহী হবে তাদেরকেও আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলতে দ্বিধা করবে না তা বেমালুম ভুলে বসে আছে। বিএনপির সিনিয়র অবস্থান থেকে যদিও কিছু পজিটিভ পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু এরপরেও যেসব কর্মকাণ্ড ঘটতেছে এমন চলতে থাকলে বিএনপি যে স্বপ্ন দেখতেছে তা আর বাস্তবের দেখা পাবে না।

আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয়ের দ্বারাই হিরো আলম নির্যাতনের শিকার। এ যেন মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।

সময় পরিবর্তন হচ্ছে। নতুন প্রজন্মই এখন নতুন জনগণ হয়ে উঠতেছে। এ প্রজন্মকে যে কথায় ভুলিয়ে রাখা যাবে না, এ কথা ভুলে গেলে চলবে না। সময়ের সাথে নিজেদের পরিবর্তন না করলে, যত বড় রাজনৈতিক দলই হোক না কেনো তা হালে টিকবে না। শূন্যস্থান কখনোই খালি থাকে না। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপি নামের কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বই ছিল না। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে বিএনপি বাংলাদেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল হয়ে উঠেছিল। সময়ের প্রয়োজনে যে আর কোনো রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটবে না তার সম্ভাবনাকে কোনো দলেরই উড়িয়ে দেয়া উচিত হবে না।

খাই খাই রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে সব দলকেই বেরিয়ে আসতে হবে। জনগণের পালস বুঝে কাজ করতে হবে। জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে, জনগণ সত্যিকার অর্থে কি চায় সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে সব রাজনৈতিক দল ও নেতার অবস্থা একই হবে যেমনটি হয়েছে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামীলীগ ও তাদের নেতাদের। ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই ক্ষমতার দাপট দেশের জন্য মারাত্মক অশনিসংকেত। এর লাগাম টেনে না ধরলে জনগণ বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য হবে, কারণ বর্তমানে এক্সিস্ট করে এমন দলকে ক্ষমতায় দেখতে জনগণ বাধ্য নয়। জনগণ চায় জনগণ বান্ধব দল।

জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস তা বাংলাদেশের জনগণ আবারও তা প্রমাণ করেছে। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে বহুবার করেই যাবে, যে পর্যন্ত না সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।

ওমর এফ নিউটন
বার্তা সম্পাদক
আইরিশ বাংলা টাইমস

Facebook Comments Box