যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বড় বেকায়দায় পড়েছেন। একে একে তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করায় বরিসেরগদি এখন টালমাটাল। আজ বুধবার আরও ৯ মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশঅর্থমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পরিস্থিতি সামলাতে তাঁদের স্থলে নতুন মুখ আনলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরিসের সময় শেষ হওয়ার পথে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বরিসের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে মঙ্গলবার ১০ মিনিটের ব্যবধানে অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক ওস্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ পদত্যাগ করেন। তাঁদের অনুসরণ করে আজ প্রথম পদত্যাগের ঘোষণা দেন জুনিয়র পরিবহনমন্ত্রীলরা ট্রট, শিশু ও পরিবারবিষয়ক মন্ত্রী উইল কুইন্স, স্কুল উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী রবিন ওয়াকার। পরে এক চিঠিতেই পাঁচ মন্ত্রীপদত্যাগের ঘোষণা দেন। তাঁরা হলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী জুলিয়া লোপেজ, বাণিজ্যমন্ত্রী লি রাউলি, শিক্ষামন্ত্রী অ্যালেক্সবুরগার্ট, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী কেমি বেদেনোচ ও আবাসনবিষয়ক মন্ত্রী নেইল ওব্রায়েন। পরে কর্মসংস্থানবিষয়ক মন্ত্রী মিমসডেভিসও পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিজের রাজনৈতিক ‘পেশা’ টিকিয়ে রাখতে এখন লড়ছেন বরিস। বিরোধী লেবার পার্টি বলেছে, বরিস একটিদুর্নীতিগ্রস্ত দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর পদত্যাগের দাবি তুলছেন বিরোধীরা। তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও বরিস ক্ষমতা ছাড়তেনারাজ।
মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের মাধ্যমে সরকার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন বরিস। ইতিমধ্যে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে ইরাকি বংশোদ্ভূতনাদিম জাহাবির নাম ঘোষণা করেছেন বরিস। নাদিম শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রীর শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছেমিশেল ডোনেলানকে। তিনি বরিসের অনুগত হিসেবে পরিচিত। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে সাজিদের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে স্টিভবার্কলেকে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর চিফ অব স্টাফের দায়িত্বে ছিলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন বরিস ও তাঁর সরকার। করোনা লকডাউন চলাকালে সরকারি বাসভবনডাউনিং স্ট্রিটে একাধিক মদের আসর বসিয়ে তিনি সমালোচনার জন্ম দেন। গত মাসে তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় আস্থাভোট আনাহলেও তাতে উতরে যান বরিস। তবে দলে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয় ডেপুটি চিফ হুইপ হিসেবে ক্রিস পিনচারকে নিয়োগেরঘোষণা দেওয়ার পর।
মঙ্গলবার বরিস বিবিসিকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। এর কয়েক মিনিট পরই রাজনৈতিক নাটকীয়তা শুরু হয়। সাক্ষাৎকারে বরিসস্বীকার করেন, ক্রিস পিনচারের অসদাচরণের অভিযোগের বিষয়টি তাঁর জানা ছিল। তারপরও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাঁকেডেপুটি চিফ হুইপ করেন তিনি। এটি ছিল তাঁর একটা ‘বাজে ভুল’।
বরিসের এই স্বীকারোক্তি তাঁকে চাপে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী বরিসের নেতৃত্ব ও তাঁর সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে এখন কনজারভেটিভএমপিরা প্রশ্ন তুলেছেন।
আজ বিদায়ী ভাষণে পদত্যাগী স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাভিদ বরিসকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অনেক হয়েছে। আর না।’ এর আগে তিনি সতর্ক করেন, যুক্তরাজ্যের নেতৃত্ব জাতীয় স্বার্থে কাজ করছে না। ঋষি সুনাক বলেন, জনগণ আশা করছে, সরকার যথাযথভাবে, দক্ষতার সঙ্গে এবং গুরুত্বসহকারে পরিচালিত হবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না।
এদিকে বরিসের ঘনিষ্ঠ মিত্ররাও তাঁর পাশ থেকে সরে যাচ্ছেন। অ্যাশফিল্ডের এমপি লি অ্যান্ডারসন বরিসের পক্ষে সমর্থনপ্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন।
সুনাক–সাজিদকে অনুসরণ করতে বরিসের মন্ত্রিসভার বাকি সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী দলের নেতারা। লেবারনেতা স্যার কেইর স্টারমার বলেছেন, তিনি আগাম সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।
বরিসের দল কনজারভেটিভ এমপি ও সাবেক চিফ হুইপ অ্যান্ড্রু মিচেল প্রধানমন্ত্রী বরিসের ‘শেষ’ দেখতে পাওয়ার কথাজানিয়েছেন। মিচেল বলেছেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো চরিত্র বা মেজাজ–মর্জি, কোনোটাই তাঁর নেই। এখন শুধুএকটিই প্রশ্ন, ঘটনা কত দূর গড়াবে।’
কনজারভেটিভ এমপি অ্যান্ড্রু ব্রিজেন বিবিসিকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত এবং যদি তিনি তা না করেন, তবেতাঁকে জোর করে বের করে দিতে হবে।
যুক্তরাজ্যে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হবে। তবে বরিস তাঁর ক্ষমতা ব্যবহার করে নির্বাচনের তারিখ আরওএগিয়ে আনতে পারেন। আরেক বিরোধী দল লিবারেল ডেমোক্রেট নেতা স্যার এড ডেভি বিবিসিকে বলেন, কনজারভেটিভদেরঅবশ্যই ‘দেশাত্মবোধক দায়িত্ব’ পালন করতে হবে এবং ‘বরিস জনসনের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে হবে’।
প্রথম আলো