আয়ারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় সামাজিক সংগঠন অল বাংলাদেশী এসোসিয়েশন অফ আয়ারল্যান্ড (আবাই) নতুন উপদেষ্টা কমিটির নাম ঘোষণা করেছে। গত ১০ই সেপ্টেম্বর ২০২৩ তে ডাবলিনের সাইন্টোলজি সেন্টারে অনুষ্ঠিত আড়ম্বরপূর্ণ অভিষেক অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা প্রদান করা হয়।
২৫ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠনের পেছনের যৌক্তিকতা ও কিসের প্রেক্ষিতে অথবা ভিত্তিতে উপদেষ্টাদের বাছাই করা হয় তা জানার জন্য আইরিশ বাংলা টাইমস প্রতিনিধি আবাই এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলে।
সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের ভাষ্যমতে, তাঁরা বেশ কিছু বিষয় মাথায় রেখে উপদেষ্টামণ্ডলী বাছাইয়ের উপর গুরুত্ব প্রদান করেন। শুরুতে তাঁরা আবাই এর এক্সিকিউটিভ কমিটিকে সমগ্র আয়ারল্যান্ড থেকে নাম প্রস্তাব করার আহ্বান জানান। তন্মদ্ধ থেকে কমন নাম বাদ দিয়ে ১২৬ জনের একটি তালিকা পাওয়া যায়। আবাই এর সভাপতি জানান, ‘’১২৬ জনই সমাজের গুরুত্বপূর্ণ এবং সন্মানিত ব্যক্তিত্ব, এবং কমিউনিটির বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে জড়িত। কিন্তু ১২৬ জনের সবাইকে নিয়ে তো কমিটি গঠন করা সম্ভব নয়। শুরুতে ২০ জনের কমিটি মাথায় নিয়ে ফিল্টারিং এর কাজ শুরু করি, শেষ পর্যন্ত তা ২৫ জনে উন্নীত হয়’’।
কমিটি গঠনে যে বিষয়গুলাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল, সেগুলো হচ্ছেঃ
– আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশি হিসেবে বিভিন্ন কমিউনিটির কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব এবং বাংলাদেশের গর্ব সুনাম যাদের কল্যাণে অটুট থাকে তাঁদেরকে রাখা হয়েছে। যেমন কাউন্সিলর, মেয়র ইত্যাদি।
– এমন ব্যক্তি যে সমাজে প্রবীণ, পরিচিত মুখ, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অগ্রগণ্য, আবাই এর কর্মকাণ্ডে সর্বদা সহযোগী।
– আয়ারল্যান্ডে বিভিন্ন কাউন্টি কমিটির থেকে অন্তত একজন (এক্ষেত্রে সভাপতি)। যেসব কাউন্টিতে একাধিক কমিটি রয়েছে, তন্মদ্ধে পরিচিতি, সিনিয়রিটি, পেশা ইত্যাদি বিবেচনা করে অতিদীর্ঘ কমিটি এড়াতে একজনকেই বাছাই করা হয়েছে। যারা স্বেচ্ছায় কমিটিতে আসতে চান নাই, তাঁদের চাওয়াকে সন্মান প্রদর্শনপূর্বক মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ডুপ্লিকেশন এড়াতে একটি কমিটি থেকে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও একাধিক ব্যক্তিকে নেয়া সম্ভব হয়নি।
– কাউন্টি কমিটি ছাড়াও কাউন্টি ভিত্তিক ব্যক্তিবর্গকে বিবেচনায় আনা হয়েছে।
– পেশা, শ্রেণি, লিঙ্গ ইত্যাদির মিশ্রণ রাখা হয়েছে, যেমন কমিটিতে মহিলা রয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। বিভিন্ন পেশা যেমনঃ ডাক্তার, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ক্রীড়া সংগঠন (যেমন BSAI) ইত্যাদি পেশার উপদেষ্টা রাখা হয়েছে।
– বাংলাদেশি রাজনৈতিক ইনফ্লুয়েন্স আবাইতে রাখা হয়নি এবং রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতেও উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়নি।
– উপদেষ্টা কমিটি গঠনে আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশি কমিউনিটি ও আবাই এর স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কারো ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ কিংবা মতাদর্শের ভিত্তিতে উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়নি।
আবাই এর সাধারণ সম্পাদক জানান, ‘’১২৬ জন এর তালিকা থেকে ১০০ জনকে বাদ দেয়া সহজসাধ্য বিষয় ছিলনা। আমরা জানি অনেকেই উপদেষ্টা কমিটিতে থাকার সব রকম যোগ্যতাই রাখেন কিন্তু আমরা মনে করি কমিটির মান বজায় রাখার স্বার্থে এর থেকে বড় কমিটি করা ঠিক হবেনা’’।
সভাপতি বলেন, ‘’আমি জানি আমাদের অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হবে, আরও অনেকেই কমিটিতে রাখা হয় নাই কেন, এই প্রশ্ন অবশ্যই যৌক্তিক, কিন্তু ২৫ জনের এই ফিল্টারিং করতে আমাদের অনেক চাপের মধ্যে থাকতে হয়েছে। তারপরেও আমি মনে করি এটা একটা ব্যালেন্সিং কমিটি হয়েছে’’।
আবাই এ ও জানিয়েছে যে, বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা হবার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের সিদ্ধান্তকে আবাই সন্মান জানায়, তবে তাঁরা উপদেষ্টা কমিটিতে আসলে আবাই সমৃদ্ধ হত বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে অনেকে হয়ত না জেনেই আবাই এর সমালোচনা করতেছেন যে কেন উক্ত ব্যক্তিদের নাম নেই। সমাজের যে কোন ভালো কাজে, যে কারো সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে আবাই দণ্ডায়মান, জানিয়েছেন উভয় আবাই এর সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক।
কমিটিতে প্রধান উপদেষ্টা বলে কিছু নেই। কমিটিতে সবার অবস্থান সমান রাখা হয়েছে। ঘোষিত কমিটির তালিকা নিম্নে দেয়া হলঃ
(১) তারেক সালাহ উদ্দিন
(২) আজাদ তালুকদার
(৩) কাজি মোশ্তাক আহমেদ ইমন
(৪) সাজেদুল চৌধুরী রুবেল
(৫) জহির উদ্দিন
(৬) জসিম উদ্দিন দেওয়ান
(৭) ইকবাল মাহমুদ
(৮) রবিউল আলম
(৯) ডাঃ মুসাব্বির হুসেইন
(১০) মামুন হাসান
(১১) ঝিনুক আলী
(১২) শামিম কবির
(১৩) আবদুল মুহিত
(১৪) ডাঃ মুহাম্মদ রফিক উল্লাহ
(১৫) শামসুল হক
(১৬) জহিরুল ইসলাম জহির
(১৭) সাইফুল ইসলাম
(১৮) হামিদুল নাসির
(১৯) ইকবাল আহমেদ লিটন
(২০) হাজী শাহ তাজুল ইসলাম
(২১) মিজানুর রহমান জাকির
(২২) চুন্নু মাতব্বর
(২৩) আক্তার হুসেইন
(২৪) সাইদুর রহমান (বীর মুক্তিযোদ্ধা)
(২৫) ডঃ ইসমেত জাকিয়া রহমান