
পদ্ম পাতার মত টলমল করে টলতে থাকা এ জীবন। পদ্ম পাতার পানি যেমন, একটু ঝাঁকুনিতেই টলে উঠে, আর একটু জোরে ঝাকুনি লাগলেই নিঃশেষ; পদ্ম পাতা থেকে বিচ্ছুরিত হয়ে ঝরে পড়ে চিরকালের জন্য।
আমাদের জীবনটাও ঠিক পদ্ম পাতার মতই, বড়ই টলমলে, অতি মাত্রায় ভঙ্গুর, অসম্ভব রকমের ভালনারেবল। দুর্ঘটনা, রোগ, শোক, মৃত্যু; খুবই হাতের নাগালে, আশেপাশেই ঘুরঘুর করে সর্বদা।
দুর্ঘটনা, রোগ, শোক যেন পদ্ম পাতার পানির মতোই, একটু এদিক ওদিক হলেই যেন নড়েচড়ে উঠে। স্থির হয়ে থাকা যেন খুবই কষ্টসাধ্য। পদ্মপাতার যেমন বাতাসের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ নাই, নিউটনের গতির প্রথম সূত্রের মতোই নাই বাহ্যিক চাপ থেকে বাঁচার নিয়ন্ত্রণ। তেমনি মানুষের হাতেও দুর্ঘটনা, রোগ, শোক থেকে বাঁচার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। শুধু টলমল করে যুদ্ধ করে যাওয়া যতক্ষণ মৃত্যু থেকে বেঁচে থাকা যায়, ঠিক যেমনি পদ্ম পাতার পানি চেষ্টা করে যতক্ষণ টিকে থাকা যায়।
গত বেশ কিছুদিন আমরা লক্ষ্য করেছি কয়েকটি ঘটনা। এইতো কিছুদিন আগেও আমাদের মাসুদ ভাই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন, এর কিছুদিন যেতে না যেতেই দুর্যটনার কবলে পড়েন পড়েন শাহীন ভাই। দেখেন শাহীন ভাই মসজিদ থেকে পায়ে হেঁটে বাসায় যাচ্ছিলেন, কিন্তু রেহাই পাননি অনিশ্চিত দুর্ঘটনা থেকে।


এরপর দেখেন আসাদ ভূঁইয়া ভাই, দেশ থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে রওনা হন। পথিমধ্যে বিমানের মধ্যেই হয়ে পড়েন গুরুতর অসুস্থ। কে জানত বিমানেই হয়ে পড়বেন অসুস্থ, তা জানলে তো ভ্রমণে বের হতেন না।

এরপর সবচেয়ে ট্র্যাজিক, গতকালই শুনলাম কর্কের শামসুল ইসলাম ভাই আমাদের মাঝে আর নাই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহী রাজিউন)। উনি ছুটি কাটাতে দেশেই ছিলেন। আয়ারল্যান্ড ছাড়ার আগেও কি উনি জানতেন যে উনি আর আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন না! পদ্ম পাতার পানির মতোই জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে ঝরে পড়বেন অকালে, কে ই বা জানত!

জানা অজানা এমন বহু ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। আমাদের কারো জীবনই এর ব্যাতিক্রম নয়। দোদুল্যমান ঝুলে আছি, পদ্মপাতার মতোই টলমল সবার জীবন। যে কোন সময় টলে উঠতে পারি রোগ শোক দুর্ঘটনা দ্বারা অথবা ঝরে পড়তে পারি মহাপ্রয়ানের মধ্যে দিয়ে।