আয়ারল্যান্ডে চিকিৎসা পেশায় যাদের পেয়ে আমরা ধন্য – আব্দুর রাহিম ভূঁইয়া

0
604

প্রবাসের মাটিতে যে কটি প্রফেশনে সম্পৃক্ত থেকেও নিজস্ব কমিউনিটিতে সেবা করা যায় তাদের মধ্যে ডাক্তারি পেশাটি অন্যতম একটি মহৎ পেশা। আমরা আয়ারল্যান্ডবাসীরা এমন কিছু এই পেশার নিবেদিতপ্রাণ পেয়েছি যার কারণে আমরা আমাদেরকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে করি। প্রত্যেক প্রবাসী ডাক্তারই তার পেশাগত বা চাকরির পাশাপাশি তার নিজস্ব গন্ডির ভিতরে তার বন্ধু মহলকে নানা রকম পরামর্শ দিয়ে উপকার করে আসছেন। আজকে আমি এমন দুইজন ডাক্তারের কথা বলবো ও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবো যারা পেশাগত দায়বদ্ধতার পরেও এই সমাজের আপামর জনসাধারণকে অন্তর নিংড়িয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তারা দুজন শুধু আয়ারল্যান্ডেই সুপরিচিত নন, পেশাগত কারণে ও সাংগঠনিক কারণে বাংলাদেশ, ইউরোপ ও বিশ্বের অনেক দেশেই তাঁরা বেশ সফলতার জ্যোতি ছড়াচ্ছেন। 

আপনারা হয়তো এতক্ষনে বুঝে নিতে পেরেছেন আমি কাদের কথা বলতে চাচ্ছি। তাঁরা ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদার ও ডাঃ মুসাব্বির হোসাইন ছাড়া আর কেউ নন। তাঁরা দুইজনই তাদের নিজস্ব প্রচেষ্টায় এবং যোগ্যতায় অনন্য উচ্চতায় আসীন হয়েছেন।  তাঁরা তাঁদের পেশাগত দায়বদ্ধতার পরেও এই কমিউনিটিকে আগলে ধরে রাখার মতো মহৎ কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের এই পরোপকারী মনোভাবের কারণে বহুদিন আমাদের মণিকোঠায় অবস্থান করবেন। 

একটু বিস্তারিত বলতে চাই খুব সম্প্রতি কর্ক নিবাসী সামসুল ইসলাম ভাইয়কে দেখতে যাওয়া নিয়ে। সেদিন হঠাৎ করে আমার এক স্বজনের কাছ থেকে খবর পাই আমাদেরএক প্রিয় ভাই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে কর্ক ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। খবর নিয়ে জানতে পারলাম তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা ICU তে আছেন। তাঁর পরিবারের সাথে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করতে না পেরে আমার একাধিক বন্ধুমহলে যোগাযোগ করি। বন্ধুদের নিকট ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়ায় কিছুটা ঘাবড়ে যাই। সাথে সাথে মনে হয় ডাক্তার মুসাব্বির হোসাইনের কথা। জানামতে তিনি সেই হাসপাতালে কর্তব্যরত আছেন। তার সাথে কথা বলে আমি বিস্তারিত জানতে পারি। পরের দিন সকালে আমি শামসুল ইসলাম ভাইকে দেখতে যেতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু তিনি ICU তে থাকায় দেখতে পারবো কিনা সন্দেহেছিলাম। কিন্তু ডাঃ মুসাব্বির আমাকে ব্যবস্থা করে দিতে চেষ্টা করবেন বলায় আমি কিছুটা প্রশান্তি পেলাম। 

অপরপক্ষে আমি জানি ডাক্তার জিন্নুরাইন জায়গীরদার আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন প্রান্তে কোন বাংলাদেশী অসুস্থ হলে নানা রকম সহযোগিতা করেথেকেন এবং পাশে দাঁড়ান। তাঁকে ফোন দিয়ে আরেকটু বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলে তিনিও পরের দিন সকালেই শামসুল ইসলাম ভাইকে দেখার জন্য কর্ক যাবেন। এতে মনের মধ্যে আমি আরও কিছুটা শান্তি পেলাম। 

পরের দিন আমরা সেখানে পৌঁছানোর পর ডাঃ মুসাব্বির ভাই আমাদের নিয়ে শামসুল ইসলাম ভাইকে দেখার সুযোগ করে দেন। আমরা তার সাথে কিছুটা সময় অতিবাহিত করতে পারি। ভাইয়ের সাথে হালকা বাক্য বিনিময় করতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ, ভাইকে সজ্ঞানে দেখতে পেয়ে আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করার সুযোগ পেয়েছি। এ সময় ডাক্তার জিন্নুরাইন জায়গীরদার ও ডাক্তার মুসাব্বির হোসাইন সে সময়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সাথে কিছুটা আলাপ সেরে নেন, রোগীর ব্যাপারে খুঁটিনাটি জেনে নেন। সেদিন সারাদিন উভয় ডাক্তারই তাদের মূল্যবান সময় দিয়েছিলেন শামসুল ইসলাম ভাইয়ের চিকিৎসার ব্যাপারে খবরাখবর নেওয়ার জন্য। 

পরবর্তীতে আমরা স্থানীয় কিছু ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে শামসুল ইসলাম ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলাম। তার পরিবার ও সন্তানদের বিস্তারিত আপডেট জানানো হয়। তাদের সকল ধরণের সাহায্যের জন্য পাশে পাবেন বলে দুজন ডাক্তার তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেন। 

আমাদের কেউ যখন অসুস্থ হয় তখন আমরা মাঝেমাঝে খুব একাকী হয়ে যাই, আমাদের হাতে অনেকসময় কোনো কিছুই করার থাকেনা। আল্লাহর উপর ভরসাই আমাদের এক মাত্র সম্বল হয়ে দাঁড়ায়। সেই সময় কোন ডাক্তার কিছুটা সান্তনা প্রদান করলে, পাশে এসে দাঁড়ালে ভিনদেশী ভাষার মাঝে বাংলা ভাষাভাষী বিশেষজ্ঞের যে কোন শব্দই যেন অমিয় বাণী হিসেবে প্রকাশ পায়। 

আমি এই দুই জন চিকিৎসক সহ বিশ্বের যে কোন প্রান্তে অবস্থানরত সকল চিকিৎসকের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি। 

কর্ক যাত্রায় আমার সাথে ডাক্তার জিন্নুরাইন জায়গীরদার ও আক্তার হোসাইন সহযাত্রী হিসেবে ছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর কাজী শাহ আলম, ইনজামামুল হক জুয়েল, আওলাদ হোসেন সোহেল,  মেসবাহুল আলম, কামাল উদ্দিন, জালাল আহমেদ, সুমন ফয়সাল, ফরহাদ, আশরাফুল আলম, ঝিনুক আলী, ফয়জুল্লাহ শিকদার, মাসুদ আহমেদ ও অনেকের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। কাজী শাহ আলম ভাইকে তার “ফেলাস” রেস্তোরায় স্থানীয়দের সাথে কুশল বিনিময় করার সুযোগ করে দেওয়ায় এবং আপ্যায়ন করায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে।

আলোচোনায় উঠে আসে জীবন রক্ষাকারী প্রশিক্ষণ CPR এর প্রয়োজনীয়তার কথা। ডাক্তার জিন্নুরাইনের প্রতি উপস্থিত জনগণের আকুল আবেদন থাকে যেন তিনি ABAI এর মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডের সমস্ত কাউন্টিতে এই জীবন রক্ষাকারী প্রশিক্ষণটি ফ্রিতে করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এই জন্য ডাক্তার কমিউনিটি থেকে আগ্রহী ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে যদি একটি নিবেদিত প্রশিক্ষক টীম তৈরী করা যায় তাহলে আমরা বিশাল এই পেশা বা প্রফেশন থেকে উপকার পাবো। এই ব্যাপারে ডাঃ মুসাব্বির হোসাইন সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন। 

দেশে কিংবা প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশী চিকিৎসকদের সংখ্যা অপ্রতুল নয়। আয়ারল্যান্ডে কর্মরত চিকিৎসকের সংখ্যা ৩০-৩৫ জন বলে জানতে পেরেছি। এই সকল চিকিৎসক ভাইরা সকলেই যদি এই কমিউনিটিতে পাশে এসে দাড়ান, চিকিতসা সেবার পাশাপাশি আমাদের সমাজকে স্বাস্থ্য সচেতন এবং স্বাস্থ্য শিক্ষাদানে এগিয়ে আসেন তাহলে সেটা আমাদের সমাজের জন্য হবে এক বিশাল সেবা। একই সাথে তারা যদি আমাদের সমাজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আগামিদিনের চিকিৎসক হতে উদ্বুদ্ধ করার কাজে এগিয়ে আসেন তাহলেও সমাজ উপকৃত হবে। আমাদের সম্মানিত চিকিৎসকগন এগিয়ে আসলে আমাদের সকলের দায়িত্ব হবে তাদের কাজে সর্বাত্নক সহায়তা প্রদান করা। আমি আশা করি সংশ্লিষ্ট সকলেই এই ব্যাপার নিয়ে ভাববেন।

আমাদের সমাজে চিকিৎসক ছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবির সংখ্যা অপ্রতুল নয়। এখানে ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, আই টি বিশেষজ্ঞ, একাউন্টেন্ট এবং অন্যান্য পেশায় অনেকেই আছেন যারা সমাজে অনন্য অবদান রাখতে পারেন। আমি অন্যান্য সকল পেশাজীবীদেরকেও আমাদের এই সমাজে অবদান রাখার জন্য এগিয়ে আসতে আহবান জানাবো।

আমি আবারো ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদার ও ডাঃ মুসাব্বির হোসাইন সহ বিশ্বের যে কোন প্রান্তে অবস্থানরত সকল চিকিৎসকের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি।

Facebook Comments Box