আচ্ছা এমন একজন মানুষ দেখান তো, যাকে আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারবেন; যিনি কখনো মিথ্যে বলেননি, যার চরিত্রে বিন্দুমাত্র কালিমা নেই, যিনি কাউকে কখনো কষ্ট দেননি, যিনি সর্বদা কথা দিয়ে কথা রেখেছেন, যিনি অন্যের কাছ থেকে কষ্ট পেয়েও সর্বদা ক্ষমাশীল ছিলেন, ঘোর শত্রুর প্রতিও মনে কষ্ট না নিয়ে চলেননি, যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সৎ থেকেছেন; মোট কথা হচ্ছে যার দ্বারা কোনো পাপাকার্য সম্পন্ন হয়নি। হয়তো পারবেন না, শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি ছাড়া। আর তিনিই হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, শেষ এবং শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ), মানুষ মুহাম্মদ (সাঃ)।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন এমনই একজন মানুষ, যাকে তাঁর ঘোরতর শত্রুরাও খারাপ মানুষ হিসেবে প্রতিপন্ন করতে পারেননি। মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি যেটুকু বিদ্বেষ ছিল, তা শুধুমাত্র তাঁর ধর্ম প্রচারের কারণেই, কিন্তু তাও শেষ পর্যন্ত দূরীভূত হয়ে যায়। ব্যক্তি মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি কোনরূপ বিদ্বেষ তাঁর নবুয়তের আগ পর্যন্ত কখনোই তৈরি হয়নি।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নবুয়তপ্রাপ্ত হন ৪০ বছর বয়সে। আল্লাহ এবং ধর্ম সম্পর্কে জানতে শুরু করেন মূলত নবুয়ত লাভের পর থেকেই। কিন্তু ৪০ বছর পর্যন্তও ছিলেন একজন আদর্শ মানুষ। তাঁর জীবনী পড়ে আমরা জানতে পারি তিনি কেমন মানুষ ছিলেন। ৪০ বছর বয়েসের আগে তিনি তো জানতেন না যে, মিথ্যে বললে পাপ হবে, কারো ক্ষতি করলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবেন; তাহলে কেন তিনি সেগুলো অনুসরণ করে চলতেন? কারণ তিনি ছিলেন প্রকৃত মানুষ। আর মানুষের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে সৎগুন, ভালো গুণগুলো অনুসরণ করে চলা।
নবুয়তপ্রাপ্ত হবার পূর্বে তিনি যে মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলো অনুসরণ করতেন, নবুয়তপ্রাপ্তির পর জানতে পারলেন এগুলো পালন করা আসলে ঐচ্ছিক বা অপশনাল কোনো বিষয় নয়, এগুলো হচ্ছে বাধ্যতামূলক। স্বয়ং আল্লাহ প্রিয় নবীর চারিত্রিক বর্ণনা দিতে আল কুরআনের সূরা কলমে বলেন, ‘অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রে সর্বোচ্চ পর্যায়ে অধিষ্ঠিত’। মানে হল, এমন শিষ্টাচার, ক্ষমাশীল, ভদ্রতা, নম্রতা, দয়া, বিশ্বস্ততা, সততা, সহিষ্ণুতা এবং দানশীলতা ইত্যাদি সহ অন্য যাবতীয় চারিত্রিক ও নৈতিক গুণাবলীর অধিকারী নবুয়তের পূর্বেও ছিলেন এবং নবুয়তের পরে তা আরো উন্নত হয় ও সৌন্দর্য-সমৃদ্ধ হয়।
এবার চিন্তা করুন ৪০ বছরের আগে পর্যন্তও তিনি জানতেন না, তিনি যে ভালো মানুষের গুনগুলো অনুসরণ করতেন তা যে ধর্মীয় দৃষ্টিতে বাধ্যতামূলক, কিন্তু তারপরেও তিনি সেগুলো অনুসরণ করেছেন পুংখানুপুঙ্খভাবে। আর আমরা সেগুলো বাধ্যতামূলক জেনেও প্রতিনিয়ত অমান্য করে যাচ্ছি।
তাহলে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কত উঁচুমানের আদর্শ মানুষ ছিলেন! তাঁর নৈতিক অবস্থান কত উচ্চ পর্যায়ের ছিল! মুহাম্মদ (সাঃ) ই ছিলেন আদর্শ মানুষ, আমাদেরকে মানুষের মতো মানুষ হতে হলে যাকে অনুসরণ করা যায় চোখ বন্ধ করে। তিনি ছিলেন নৈতিকতার সুউচ্চ শিরোমণি। পৃথিবীর সব নৈতিক শাস্র মহানবীকে অনুসরণ করে লিখলেই আর দ্বিতীয় কোনো চিন্তা পণ্ডিতদের করতে হয়না। যত নৈতিক প্রিন্সিপ্যাল বা মূলনীতি আছে, সেগুলোর থেকেও অধিক আদর্শিক নৈতিক মূলনীতি অনুসরণ করে চলেছিলেন এ মহান মানব।
আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে মানুষের দলে দলে ইসলামের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার একটি অন্যতম প্রধান কারণ ছিল মহানবীর মানবিক গুণাবলি। মানুষজন তাঁকে কখনো মিথ্যে কথা বলতে ও প্রতারণা করতে দেখেননি। নিখুঁত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্বলিত মুহাম্মদ (সাঃ) যখন ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করেন তখন তাঁর কথাকে বিশ্বাস করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকেন অমুসলিমরা। আর যারা সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করেনি, তারা করেনি কেবলমাত্র তাদের মান মর্যাদা, আত্ম অহমিকার কারণে, কিন্তু মনে মনে ঠিকই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে বিশ্বাস করতো।
মানুষ হিসেবে তিনি কেমন ছিলেন, তা শুধু গল্পই নয়। তিনি সহস্র উদাহরণ রেখে গিয়েছেন, যা আজও পাথেয় হিসেবে জাজ্বল্যমান হয়ে রয়েছে। যা অনুসরণ করলে আজকের সময়ের বহু সমস্যা এক নিমিষে দূরীভূত করা সম্ভব। একজন বিচারক, একজন ব্যবসায়ী, একজন নেতা, একজন পিতা, একজন স্বামী, একজন বন্ধু, একজন প্রতিবেশী, একজন শিক্ষক, একজন ধর্মভীরু; সব অবস্থায়ই তিনি ছিলেন একজন আদর্শ মানুষ।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ), যিনি জন্ম থেকে মৃত্যুদিন পর্যন্ত রেখে গিয়েছেন একজন আদর্শ মানুষের পদচিহ্ন। যে পদচিহ্ন অনুসরণ করে যে কেউ হাঁটতে পারে মানুষ হওয়ার গন্তব্যে। একজন আদর্শ মানুষ হয়ে কীভাবে জীবন নির্বাহ করা যায়, যার অন্য কোনো বিকল্প গাইডলাইন দেয়া সম্ভব নয়, একমাত্র মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে অনুসরণ করা ছাড়া।
প্রকৃত মানুষ যদি হতে হয়, মুহাম্মদ (সাঃ) এর মতোই হতে হবে, যার মধ্যে সবগুলো মনুষ্য গুণাবলী উপস্থিত ছিল।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর গুনের মহাসমুদ্র থেকে কিছু গুনের বর্ণনা নিয়ে ‘’এবার তোরা মানুষ হ’’ কাব্যগ্রন্থ থেকে একটি কবিতা ‘’মহান মানব’’ নিম্নে প্রদান করা হল। মহান এ মানবের বহু মনুষ্য গুনের মহাসমুদ্র থেকে কিছু গুনের উপর আলোকপাত করা হয়েছে কবিতাটিতে।
মহান মানব
মরুভূমির বুকে জন্ম নেয়া আমার নবি মুহাম্মদ,
ইসলাম প্রচারে ছিল যার অসীম সাহসী হিম্মত।
এক আল্লাহ ছাড়া করেননি কাউকে সিজদাহ,
সাহায্য চেয়েছেন যাঁর কাছে, সে এক আল্লাহ।
যিনি ছিলেন মানবতার সুউচ্চ শিরোমণি,
অশান্তির জামানায় বিলিয়েছেন শান্তির বাণী।
আল আমিন ছিলেন সত্যের আধার,
যাঁর অন্তর ছিল ক্ষমার সমাহার।
কষ্ট দেননি কখনো গরীব দুঃখীকে,
আপন করে বুকে টেনে নিতেন আপন শত্রুকে।
মাথা নিচু করে বলতেন কথা মৃদু স্বরে,
ছিড়ে যাওয়া জামা পরতেন নিজে সেলাই করে।
শিশুদের প্রিয় ছিলেন আমাদের হজরত,
বৃদ্ধের সেবায় নিযুক্ত সর্বদা ছিল যাঁর হাত।
প্রাণের ধর্মকে রক্ষা করেছেন যতই আসতো আঘাত,
জীবন বাজি রেখে নিজ রক্ত ঝরিয়ে করেছেন জিহাদ।
বলে শেষ করা যাবে না এমন পরিপূর্ণ জীবন বিধান,
রেখে গেছেন সাক্ষ্য সরূপ পবিত্র আল কুরআন।
হস্তপদ সম্পন্ন দোপেয় মানুষটিকে প্রকৃত মানুষ তখনই মানুষ বলা যাবে যখন তার মধ্যে মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান। একজন আদর্শ মানুষের বৈশিষ্ট্য কী হতে পারে তা জানতে বা বুঝতে মহান মানব মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে অনুসরণ করার বিকল্প আর কিছু হতে পারেনা।
ওমর এফ নিউটন
বার্তা সম্পাদক
আইরিশ বাংলা টাইমস