ডঃ আহমেদ আল-হাব্বাস। খতিব,
ইসলামীক কালচার সেন্টার সোর্ডস,ডাবলিন,আয়ারল্যান্ড।
তারিখ:১২ জুন ২০২০][২০ শাওয়াল ১৪৪১
মানুষ মাত্রই প্রতিনিয়ত গুনাহ করে থাকে। কেউ কেউ দুনিয়ার বস্তুগত আকাঙ্খা আর লোভ লালসার কাছে দাসে পরিণত হয়ে গুনাহে লিপ্ত ,আবার আল্লাহর বহু প্রিয় বান্দা গুনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত করে আল্লার ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর দাসত্ব করার প্রানান্ত চেষ্টা চালিয়ে যান।
তবে আমরা মানুষ ভূল করবই কিন্তু আমাদের রব আল্লাহ সুবাহ নাহু তায়ালা ,তিনি যে “রাহমানুর রাহীম” এবং “গাফুরুর রাহীম” । মৃত্যু চলে আসার আগেও যদি কেউ গুনাহ থেকে তওবা করে ফিরে আসে আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন কারন তিনি শুধু রহমান না তিনি যে “গাফুর” ক্ষমাকারী। মানুষ পাপ করতে করতে খাদের কিনারায় চলে গেলেও তওবা করলে আল্লাহ তওবা কবুল করে মানুষকে ক্ষমা করে দিবেন।
তওবা করার প্রধান শর্ত হলো যে,আল্লাহর কাছে গুনাহ থেকে ক্ষমা চেয়ে সেই একই গুনাহ আর না করার প্রতিজ্ঞা করে গুনাহর জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া। আর তওবা কবুল হওয়ার শর্ত হলো,তওবা কবুল হয়েছে বিশ্বাস করতে হবে এবং আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে নিজেকে পাপ থেকে দুরে রাখতে হবে, তবেই আসা করা যায় তওবা কবুল হয়েছে।
কোরআনের একটি আয়াতে তওবা কবুল করার ক্ষেত্রে আল্লাহ নিজে এজটি শর্ত আরোপ করে বলেছেন,”ইন্নাল্লাহা লা- আইয়্যুশরাকা বিহি”, অর্থাৎ আল্লাহ শিরক’কারীর গুনাহ মাফ করবেন না। তার মানে এই নয় যে তওবার দরজা তার জন্য বন্ধ হয়ে গেছে । শিরক কারীর জন্যেও আল্লার ক্ষমার দরজা খোলা আছে যদি সে স্বচ্ছ হৃদয়ে তওবা করে ।
আল্লাহ কোরআন কারীমে বলেছেন, “ইন্নাল্লাহা ইয়াগফারুয-জুনুবা জামি’য়া”। অর্থত আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন।
যদি কেউ বলে যে,আমি অনেক বড় গোনাহগার আল্লাহ আমার গুনাহ মাফ করবে না, তার মানে সে আল্লাহকে বিশ্বাস করে না।
আবার আল্লাহ সব সময় গুনাহ মাফ করে দিতে প্রস্তুত তাও কিন্তু ঠিক নয়, মৃত্যুর সময় চলে আসার আগে নিজের ভূল শুধরে তওবা করা তওবার একটি অন্যতম শর্ত। অর্থাৎ সারা জীবন পাপে লিপ্ত থেকে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার পূর্ব মূহুর্তে মৃত্যু নিশ্চিত জেনে তওবা করলে কোন ফায়দা হবে না,কারন তা অনেক দেরি ।
একবার এক পাপী ব্যাক্তি এক ধার্মিক বুজুর্গ ব্যাক্তির কাছে জানতে চাইল কি ভাবে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে,তখন বুজুর্গ ব্যক্তিটি বললেন নিচের পাচ্ঁটি বিষয়ের যে কোন একটিকে সম্ভব করতে পারলেই জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে বা তা সম্ভব :
১. আল্লাহর দেয়া সকল খাদ্য,ফল ,মূল খাওয়া বাদ দিলে অথবা ,
২. আল্লাহ জমিনে বসবাস করা যাবেনা অথবা,
৩. এমন কোথাও লুকিয়ে থাকা যেখান থেকে আল্লাহ তাকে দেখবেন না অথবা
৪. মৃত্যুর ফেরেস্তা চলে আসলে তুমি ফেরেস্তাকে বলবে “এখন আমি মরব না তুমি পরে আসো আমি তওবা করে কিছু ভাল আমল করে নেই” অথবা
৫. মৃত্যুর পর তুমি জাহান্নামের ফেরেস্তাকে বলবে “আমি তোমার সাথে জাহান্নামে যাবনা”। পাপী লোকটি সব কথা শুনে বলল “এই পাচ্ঁটি কাজের একটিও আমার দ্বারা সম্ভব নয়” তখন সে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করে ফিরে আসল।
তবে গুনাহের মধ্য সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো মানুষের হক নষ্ট করা , অর্থাৎ মানুষকে কষ্ট দেওয়া,গীবত করা, ইত্যাদি।
শিরক ব্যতিত সকল গুনাহ আল্লাহ চাইলে ক্ষমা করতে পারেন তবে মানুষের হক নষ্ট করলে তা ক্ষমা করার এখতিয়া আল্লাহ তার নিজের হাতে রাখেন নাই । আপনি যার হক নষ্ট করেছেন তার কাছেই মাফ চাইতে হবে নইলে মনে রাখতে হবে মানুষের হক নষ্ট করার কারনে হাশরের মাঠে কঠিন শাস্তির সম্মুখিন হতে হবে।
আল্লাহ সুবাহ নাহু তায়ালা আমাদের মৃত্যুর ফেরেস্তা দেখার আগেই গুনাহ থেকে ফিরে আসার এবং আল্লাহর কাছে তওবা করার তৌফিক দান করুন, আমীন।
অনুবাদক, : মশিউর রহমান।