সকল জল্পনা-কল্পনা ও কানাঘুসার অবসান ঘটিয়ে কিছুদিন আগে আবারো চমক দেখালেন কাউন্সিলর জনাব আজাদ তালুকদার। বাঙ্গালিসহ অভিবাসন কমিউনিটি বেশ ক’বার তাঁর চমক দেখেছে। ডেপুটি মেয়র পদমর্যাদায় অভিষিক্ত হয়ে প্রথম চমক দেখান। পরবর্তীতে মুসলিমদের জন্য স্থানীয় ও স্বাতন্ত্রিক ভাবে কবরস্থান স্থাপনের জন্য কাউন্সিল থেকে অনুদানের ব্যবস্থা করা, বাঙ্গালিদের বিশেষ বিশেষ জাতীয় দিবস গুলোতে লিমরিক কাউন্সিল হলকে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা শোভিত আলোকে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জার মাধ্যমে স্থানীয়দের দৃষ্টি কাড়ার অভূতপূর্ব নজির স্থাপন, পিস কমিশনারের সম্মানে ভুষিত হওয়া এবং লিমরিক সিটি মেয়র বা কাহার্লক হয়ে সর্বশেষ চমকটি দেখান।
অনেকে ভেবেছিলেন, এবার হয়তো আজাদ তালুকদার তাঁর দল ফিনাফল (Fina Fáil) থেকে টিকিট পাবেননা। কিছুদিন আগে জনাব তালুকদার কাউন্সিলের সভায় একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন। বক্তব্যের কিয়দাংশ স্থানীয় এক সাংবাদিক পরিকল্পিত ভাবে টুইস্ট করে প্রকাশ করে যাতে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় এবং জাতীয় ভাবে সিটি মেয়রকে হেয় প্রতিপন্ন করা যায়। কিছু লোক সাময়িক ভুল বুঝেছিলো বটে কিন্তু পরবর্তীতে তারা সত্যটা জানতে পারে। তাঁর দলও প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়। কথায় আছে, ‘রাখে আল্লাহ মারে কে!’ সম্মানি ব্যক্তির সম্মান আল্লাহ নিজে রক্ষা করেন। তাইতো আমরা দেখতে পাই মিথ্যে অপবাদের রোষানল থেকে আজাদ তালুকদার বেরিয়ে এসে অতি সহজেই দল থেকে সম্মানের সহিত আবারো নমিনেশন পান। এ নমিনেশনের মধ্যে একদিক দিয়ে যেমন সত্য জয়যুক্ত হয়েছে অন্যদিক দিয়ে তাঁর চমক ফোটে উঠেছে। এই যে ধারাবাহিক চমক, এগুলোই তাঁর অর্জন। বস্তুত এ অর্জন তাঁর একার নয়, সকল বাঙ্গালির।
তাই এ অর্জনকে ধরে রেখে আমাদেরকে আরও গৌরবময় পথে সামনের দিকে হেঁটে যেতে হবে। মহান আল্লাহতায়ালা সবাইকে সমান যোগ্যতা দিয়ে পাঠাননা। একেকজনকে একেক কাজ বা দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। একজন লোকের মাধ্যমে একটি পরিবার, একটি গোত্র, একটি কমিউনিটি, একটি সমাজ বা একটি দেশ আলোকিত হয়ে ওঠে। ওই ব্যক্তির উসিলায় তাঁর জাতি, জ্ঞাতি-গোষ্ঠি সমাদৃত হয়। লিমরিকস্থ বাঙ্গালি কমিউনিটিতে আল্লাহতায়ালা আজাদ তালুকদারকে ওইরকম একজন আলোকবর্তিকা হিসেবে পাঠিয়েছেন কি-না জানিনা তবে তিনি তাঁর কর্ম, শিষ্টাচার, রাজনৈতিক দক্ষতা ও কৌশল এবং সহযোগী মনোভাবের মাধ্যমে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেভাবে কমিউনিটির সুনাম কুড়াতে সক্ষম হয়েছেন তাতে তাকে বাঙ্গালি কমিউনিটির “নাম রোশনকারী” হিসেবে অভিহিত করলে খুব বেশি একটা অত্যুক্তি হবেনা। এমন একজন ব্যক্তি যখন নির্বাচনের নৌকায় পা রাখেন তখন তাঁর গন্তব্যে পৌঁছা নিয়ে খুব বেশি একটা দুঃশ্চিন্তা করার কি আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে?
বিভিন্ন কাউন্টি থেকে আজাদ ভায়ের কিছু শুভাকাঙ্কী বন্ধু আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছেন তিনি দল থেকে নমিনেশন পেয়েছেন কি-না, ভোটের মাঠে তাঁর অবস্থান কেমন, আমাদের আরেক ভাই জনাব শাহীন রেজা একই এলাকা থেকে নির্বাচন করছেন বলে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব তাঁর উপর পড়বে কি-না ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি তাদেরকে উত্তরে বলেছি, আজাদ ভাই বিগত দিনে স্বীয় ব্যক্তিত্ব ও কাজকর্মের মাধ্যমে স্থানীয় আইরিশ ও অভিভাসন কমিউনিটির মধ্যে যে শক্ত ভিত রচনা করতে সক্ষম হয়েছেন তাতে নির্বাচনে তাঁর ফলাফল নিয়ে ভাববার খুব বেশি একটা অবকাশ নেই। একই এলাকা থেকে যেহেতু দুজন বাঙ্গালি নির্বাচন করছেন সে প্রেক্ষাপটে ভুলেভালে হলেও কিছুটা ক্ষতির প্রভাব তো আজাদ তালুকদারের উপর পড়তেই পারে। কিন্তু যেহেতু জনাব তালুকদার একজন পরীক্ষিত সফল ব্যক্তিত্ব, সফল রাজনীতিক সেহেতু এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠা তাঁর জন্য একেবারেই নস্যি। আমি তাঁর পাস-ফেল নিয়ে মোটেও চিন্তিত নই। আমার অভিজ্ঞতা বলে- গতবারের তুলনায় এবার অনেক বেশি ভোট পেয়ে পাস করবেন তিনি। আমি ভাবছি তাঁর প্লেস নিয়ে। এবার কি তিনি ফার্স্ট হবেন, সেকেন্ড হবেন নাকি থার্ড? এ ভাবনাটাই আমাকে এবার বেশি করে শিহরিত ও রোমাঞ্চিত করে তুলছে।
নির্বাচনে ভোট দেয়া বা অংশ নেয়া দুটোই গনতান্ত্রিক অধিকার। সে অধিকার বলে জনাব শাহীন রেজা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনে অংশ নেয়া একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত ইচ্ছে অনিচ্ছার বিষয়। এ ব্যপারে তাকে বারণ বা নিষেধ করার এখতিয়ার আমাদের কারো নেই। তবে বাঙ্গালী বা শুভাকাঙ্খী হিসেবে শুধু এতোটুকু বলতে চাই, নির্বাচনে কেউ যেনো প্রতিপক্ষ বা প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে না ওঠেন। মাথায় রাখতে হবে, দুজনই বাঙ্গালি। উপর দিকে থুথু ছেটালে নিজের উপরই পড়বে। তা’ছাড়া নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যেহেতু পদ্ধতিগত ভাবেই একটি সুবিধা রয়েছে, আমরা আশা করবো দুজনই ওই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে আরও ম্যচুরিটির পরিচয় দেবেন।
লিমরিকের এ দুজন ছাড়াও গোটা আয়ারল্যান্ডে এবার বাঙ্গালি প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এটি একটি ইতিবাচক দিক। গত টার্মে আমরা দুজন কাউন্সিলর পেয়েছিলাম। এবার যদি এ সংখ্যাটা বেড়ে যায় তবে আমাদের গর্ব ও অহংকারের মাত্রাও আরও বেড়ে যাবে। তাই মূলধারার রাজনীতিতে বাঙ্গালির অবস্থান পাকাপোক্তকরণ ও বাঙ্গালি প্রতিনিধিত্ব সম্প্রসারণের প্রচেষ্টায় তাদের এ আগমনকে আমি জানাই সাদর সম্ভাষণ, সাধুবাদ, লালগোলাপ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
গত নির্বাচনে দেশটিতে তিনজন বাঙ্গালি নির্বাচন করে দুজনই বিজয় লাভ করেছিলেন। সে হিসেবে পাসের হার অর্ধেকের চেয়েও বেশি। আমরা চাই পার্সেন্টিজের এ হার শতভাগে উর্ত্তীর্ণ হোক। প্রবাসের মাটিতে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠুক বাংলা মায়ের মুখটি। কাউন্টিতে কাউন্টিতে ছড়িয়ে পড়ুক আনন্দের ঢেউ। দেশব্যাপি উড়ুক বাঙ্গালির নির্বাচনী বিজয়কেতন।
সাজেদুল চৌধুরী রুবেল
লেখক- কবি ও প্রাবন্ধিক
লিমরিক
০৭ মে ২০২৪