দুই মাতালের গল্প – এস. এ. রব

0
1211

গভীর রাত। ফাঁকা সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে দুই মাতাল। হাঁটতে হাঁটতে তারা গিয়ে দাঁড়ায় একটি ৫ তলা বিল্ডিংয়ের কাছে। একজনের নজরে পড়ে বিল্ডিংটি। সঙ্গে সঙ্গে অপর মাতালকে বলে ওঠে, এই চল এই বিল্ডিংডা আমাদের মহল্লায় নিয়ে যাই। আমাদের মহল্লায়তাে কোন বিল্ডিং নাই , এইডা নিলেতাে ভালই হয়।

দু’জনে শলা- পরামর্শ করে এবার ওঠে দাঁড়ায়। বিল্ডিং – এর পাশে গিয়ে একসঙ্গে ধাক্কাতে থাকে। ধাক্কাতে ধাক্কাতে হয়রান। একজন বলে ওঠে ওই আমরা যে ধাক্কাইতাছি, দেখতো কতদূর আগাইছি? অপরজন বলে অনেকদূর। ওই মাতাল বলে তুই কেমনে বুঝলি? আরে বােকা , আমরা যখন ধাক্কানাে শুরু করি, তখন চাঁদটা ছিল ওই খানে। এখন দেখ চাঁদটা কই? নিশ্চয়ই আমরা অনেক দূর এগুয়‌ছি। এই রাইতের মধ্যেই ঠেইল্লা লইয়া যাইতে হইব। তাড়াতাড়ি ঠেল ব‌লে আবার শুরু হলাে ঠেলা। এভাবে ঠেলতে ঠেলতে দু’ মাতালই ঘেমে অস্থির। আবারও দু’জন দাঁড়াল। এবার শরী‌রের কাপড় খুলে পেছনে রেখে শুরু করল ঠেলা। ঠেলতে ঠেলতে অনেকক্ষণ পার। এবার একজন অপরজনকে জিজ্ঞেস করছে, ওই দেখতো আমরা কতদূর আইছি।

অপরজন পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখে তাদের রাখা কোন কাপড়ই নেই। ভাবছে কাপড় যেখানে রেখেছিলাম সেখানেই রয়েছে। আমরাতাে অনেক দূর এগিয়েছি। আসলে দুই মাতাল যখন বিল্ডিং ধাক্কাচ্ছে, তখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল এক চোর। সে তখন তাদের রাখা কাপড় নিয়ে পালিয়ে যায়। ওদিকে মাতালরা ভাবছে , কাপড় যেখানে রেখেছিল সেখানেই রয়ে গেছে। তারা বিল্ডিং নিয়ে এগিয়ে গেছে অনেক দূর। রাত প্রায় শেষ । এর মধ্যেই বিল্ডিং ঠেলে নিতে হবে মহল্লায় । কাজেই বসে থাকার সময় নেই। তাই তারা আবার ধাক্কাতে শুরু করে। ধাক্কাতে ধাক্কাতে ভাের হলো। তখন এ‌কে অপর‌কে ব‌লে একি! আমরা যেখানে আছি , সেখানেই রয়েছি। একটুও এগােয়নি। হায়! মাঝখান থে‌কে হুদা কাপড়ডা হারাইলাম।

এই গ‌ল্পের বাস্তবতা যেন আমি খুঁজে পাই বাংলা‌দে‌শের সাম‌গ্রিক চাল‌চি‌ত্রে। সর্বত্র চল‌ছে উন্নয়ন ও সুশাসনের মুখ‌রোচক গল্প। সা‌থে চর্চা হ‌চ্ছে সামা‌জিক ন্যায়বিচার ও আই‌নের শাস‌নে অ‌র্জিত সফলতার ফুলঝু‌রি নি‌য়ে। কিন্তু প্রকৃতপ‌ক্ষে আমরা যেখানে ছিলাম সেখানেই রয়ে গে‌ছি ব‌লে আমার ম‌নে হয়। শুধূ মাঝখানে জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ৫০ ‌টি বছর। আমা‌দের অর্জনের সা‌থে র‌য়ে‌ছে প্রচুর বিসর্জন। উন্নয়‌নের সা‌থে পাল্লা দি‌য়ে রা‌ষ্ট্রে বে‌ড়ে‌ছে দুর্নী‌তি ও দুঃশাসন । নাগ‌রিক জীব‌নে উন্ন‌তি হ‌লেও রাজনীতিতে সততা, আদর্শ, ও নী‌তি‌বোধের কো‌নো উন্ন‌তি হয়‌নি। সর্বক্ষে‌ত্রে এর পদস্খলন হ‌য়ে‌ছে। উন্ন‌তি হ‌চ্ছে তোষা‌মো‌দের। গণতন্ত্রের জায়গা ক্রমান্ব‌য়ে সংকু‌চিত হ‌চ্ছে পক্ষান্ত‌রে ফ্যাসিস্টবাদের উখান হ‌চ্ছে। দলগু‌লোর ম‌ধ্যে সম্প্রীতির বিপরী‌তে বহুগু‌ণে বে‌ড়ে‌ছে হিংসা, বি‌দ্বেষ ও ঘৃণা। আর এই মূহ‌র্তে বাক স্বাধীনতা চর্চার জায়গা‌য় দৈ‌ত্যের মত হুম‌কি হ‌য়ে দাঁড়িয়ে আছে ডি‌জিটাল না‌মের কা‌লো নিরাপত্তা আইন। ৫০ বছর আগে একটি রাষ্ট্র ও পতাকা অর্জন করলেও বিভেদ, বৈষম্য ও অপরাজনীতির কারণে আমরা আজও একটি “জাতি” হয়ে উঠতে পারিনি। এটি একটি জাতীয় লজ্জা!

ত‌বে দেশিব্যাপি গগনচু‌ম্বি ইমার‌ত, ব্রীজ ও কালবাট মার্কা উন্নয়‌নের ভি‌ড়ে বি‌ল্ডিং‌ ঠেল‌তে গি‌য়ে না হয় আমরা পড়‌নের কাপড়ডা হারাচ্ছি!, কিন্তু দে‌শ যে সাম‌নের দি‌কে এ‌গি‌য়ে যা‌চ্ছে ধাক্কা_ধা‌ক্কি ক‌রে সেটি ভাব‌তে খুব ভালো লাগ‌ছে।

চিয়ার্স ফর উন্নয়ন ।

Facebook Comments Box