আয়ারল্যান্ডে তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন ঘটিয়ে চলেছে নীরব বিপ্লব

আয়ারল্যান্ডে একটি বাংলাদেশি দাতব্য সংগঠনের সফলতা

0
24

আয়ারল্যান্ডে দাতব্য সেবায় নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছে তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন আয়ারল্যান্ড। এটি এমনই একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান, যাদের কর্ম পর্বতসম কিন্তু প্রচারণা অণুসম। আমাদের সমাজে দেখতে পাই ছোট ছোট কর্মের বিশাল প্রচারণা। কিন্তু বিশাল কর্মের এমন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রচারণা তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশনের, যা বর্তমান সময়ে বিরল। যাদের কার্যক্রমের পরিধি এতই বিশাল যে, আপনিও অবাক হয়ে ভাববেন; আসলেই কি তাই?

হ্যাঁ তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন আয়ারল্যান্ড এমনই এক দাতব্য প্রতিষ্ঠান যাদের কর্মের বিস্তৃতি ঘটেছে অনেক দূর। বাংলাদেশি কমিউনিটি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হলেও যাদের কর্মের প্রসারতা ছড়িয়ে গিয়েছে সমগ্র ভিনদেশী কমিউনিটির মাঝেও। তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশনের সুনাম বাংলাদেশি কমিউনিটির গণ্ডি ছড়িয়ে অন্যান্য কমিউনিটির মাঝেও ব্যাপক পরিসরে বিস্তৃত। বরঞ্চ বাংলাদেশি কমিউনিটিই বুঝে উঠতে পারে নাই সঠিকভাবে তাসনুভা ফাউন্ডেশনের কার্যাবলী।

তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন আয়ারল্যান্ডের লক্ষ্য হলো সামাজিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা, যা বিভিন্ন জাতিগত কমিউনিটিগুলোর মাঝে সংহতি বৃদ্ধি এবং আইরিশ সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।

যেভাবে যাত্রা শুরু

২০০৭ সালে জানুয়ারি মাসে শামীম পরিবারের ঘর আলো করে দুজন জমজ কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। তন্মদ্ধে একজন জন্মের সাথে সাথেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন, যার নাম ছিল ফাতেমা। আর অন্য সন্তান তাসনুভা শামীম বেঁচে থাকলেও তার মাঝে শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় যার ফলে তাসনুভা বসতে ও চলাচলে অক্ষম। শারীরিক ও মানসিকভাবে অন্যান্য বাচ্চাদের মত নয় তাসনুভা। তাসনুভার বয়স বর্তমানে ১৮ বছর হলেও একজন ছোট বাচ্চাদের মতোই তার ব্যবহার। গত ১৮ বছর ধরে তাসনুভাকে নিয়ে তার পরিবারেকে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

তাসনুভা শামীমের এই শারীরিক প্রতিবন্ধতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে তাসনুভার স্মরণে বাবা জনাব সাগর আহমেদ শামীম ও মাতা নাসরিন আহমেদ লাভলী প্রতিষ্ঠা করেন তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন আয়ারল্যান্ড। ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠালগ্নে এগিয়ে আসেন আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের কিছু সুহৃদয়বান ব্যক্তি।

জনাব শামীম জানান, “তাসনুভাকে ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। তাকে দেখাশুনার জন্য নিয়মিতভাবে নার্স বাসায় আসে এবং সার্বক্ষণিক নার্সদের তত্ত্বাবধানে থাকে। সরকারের এ সহযোগিতাও আরেকটি অন্যতম কারণ, যা আমাকে দাতব্য কাজ করতে উৎসাহিত করে। আমরা চেয়েছিলাম এদেশের সরকার ও মানুষকেও কিছু প্রতিদান প্রদান করতে।”

তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন এর কার্যক্রমসমূহ

ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার সময় ২০১৫ সাল থেকে প্রতি শুক্রবার, তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন ডাবলিনের GPO-এর কাছে গৃহহীন, পথচারী ও অসহায় মানুষদের মাঝে নিয়মিতভাবে গরম খাবার, বেকারির আইটেম, নাস্তা এবং চা, হট চকলেট ও কফি সরবরাহ করে আসতেছে। ফাউন্ডেশন বিভিন্ন জায়গা থেকে খাদ্য ও বস্রাদি বস্রাদি সংগ্রহ করে সেগুলো আবার অসহায়দের মাঝে বিতরণ করে থাকে।

২০১৫ সালের শেষেরদিকে প্রথম ২ সপ্তাহ হ্যাপি মুসলিম ফ্যামিলির সাথে জিপিওতে কার্যক্রম শুরু হয়। তারপর মুসলিম সংগঠন আল-মাগরিব-এর সাথে যৌথ উদ্যোগে কাজ চলতে থাকে। পরে মুসলিম সিস্টার গ্রুপের সাথে যৌথভাবে ২০১৮ পর্যন্ত জিপিওতে গৃহহীন মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন আয়ারল্যান্ড। গত তিন বছর থেকে এখন পর্যন্ত মুসলিম চ্যারাটি প্রতিষ্ঠান ইসলামিক রিলিফ-এর সাথে যৌথ ভাবে জিপিওতে সুপরান পরিচালনা করে আসছে তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন।

বর্তমানে ফাউন্ডেশনটি কিনারা রেস্টুরেন্ট গ্রুপের সাথে মিলিতভাবে কাজ করছে।

শুধুমাত্র খাবার ও বস্রাদি দেয়ার মাঝেই তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ নয়, মানুষের সাথে আন্তরিকভাবে কথা বলার সুযোগও করে দেয়া হয়। তাদের মতে একটি সদয় কথা একজনকে অনেকদূর নিয়ে যেতে পারে ও মানসিক প্রশান্তি প্রদানে সক্ষম হতে পারে। বলা বাহুল্য একজন গৃহহীন ব্যক্তি দিনের পর দিন আরেকজন প্রাপ্তবয়স্কের সাথে কোনো কথোপকথন ছাড়াই কাটিয়ে দেন।

মাত্র কিছু প্লেট খাবার দিয়ে শুরু করে এখন প্রতি শুক্রবারে কিনারা রেস্টুরেন্টের সহযোগিতায় ৪০০ এরও অধিক মানুষকে নিয়মিতভাবে খাবার পরিবেশন করে আসছে সংগঠনটি।

তাদের মোবাইল ফুডব্যাংক (Mobile Food Bank) প্রতি মঙ্গলবার বিনামূল্যে খাবার বিতরণের কর্মসূচি পালন করে আসছে। দুস্থ, অসহায় ও খাবার কিনতে অক্ষম এমন মানুষদের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার বিতরণ করা হয়ে থাকে। খাবার সংগ্রহকারীদের মধ্যে বেশীরভাগই নেটিভ আইরিশ জনগণ রয়েছেন।

স্থানীয় ২৫ টি পরিবারের মাঝেও প্রতি মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় ইসলামিক রিলিফ ও তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে Clongriffin এ এই মোবাইল ফুড ব্যাংক পরিচালনা করা হয়ে থাকে।

করোনার মহামারী কালে তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন অনেক দাতব্য সংস্থাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে ও তাদের সাথে একযোগে কাজ করেছিল।

তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন আয়ারল্যান্ড সর্বোচ্চ কর্পোরেট গভার্ন্যান্স মানদণ্ড বজায় রাখার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের ভাষ্যমতে, ‘’আমাদের সব স্টেকহোল্ডার, ডোনার, এবং সাহায্যকারীদের কাছে দায়িত্বশীলতা প্রদর্শনের অংশ হিসেবে উচ্চ মানদণ্ড স্থাপন ও রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিশ্চিত করে যে, আমরা আমাদের সহায়তাপ্রাপ্তদের সর্বোচ্চ মানের সেবা প্রদান অব্যাহত রাখতে পারি।‘’

GOV.IE লিংক – তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন

সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন

Get Together to Promote Integration in order to spread Peace, Love & Unity স্লোগানে সংহতি প্রচারের জন্য অভিবাসীদের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে আইরিশ কমিউনিটি ও অভিবাসী সম্প্রদায়ের পরস্পরের মাঝে শান্তি ও ভালোবাসা একতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন।

২০১৮ সাল থেকে মিনিস্ট্রি অফ জাস্টিসের সহযোগিতায় ও ক্লনগ্রিফিন কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশনের সাথে যৌথ উদ্যোগে ডাবলিনের ক্লনগ্রিফিন মাল্টিকালচারাল কমিউনিটি ইন্টিগ্রেশন ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করে আসছে। যা মিনিস্ট্রি অব জাস্টিসের সরাসরি অর্থায়নে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যেখানে আয়ারল্যান্ডের মন্ত্রী মহোদয়, কাউন্সিলর, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ অভিবাসী সম্প্রদায়ের প্রায় ৫০ টি দেশের মানুষ অংশ নিয়ে থাকেন।

গিফট প্রজেক্ট (GIFT Project)“Gateway to Integration For Togetherness, Your Smile is Charity’’ – এ স্লোগানকে সামনে রেখে সমাজে শান্তি ভালোবাসা ও একতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জনকল্যাণ ও সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে স্কুল, মসজিদ, ক্লাব, সামাজিক সংগঠন ও অনুষ্ঠানে বিনামূল্যে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মাঝে মিষ্টি জাতীয় শুকনো খাবার বিতরন করে আসছে তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন আয়ারল্যান্ড। ইতিমধ্যে GIFT প্রজেক্ট এর মাধ্যমে আইরিশ কমিউনিটিসহ আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন পরিচিতি লাভ করেছে। করোনার মহামারীকালে তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন বিভিন্ন সংগঠনের সাথে একসাথে কাজ করেছে।

ইসলামিক রিলিফের সাথে জনাব শামীম

আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত বিভিন্ন দেশের মানুষ তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন এর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার জন্য উদগ্রীব থাকেন। বর্তমানে আয়ারল্যান্ডের স্থানীয় মানুষসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে আসছে, তাছাড়া ইসলামীক রিলিফ এর মত বিশ্ব বিখ্যাত মুসলিম চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথভাবে কাজ করে আসছে ডাবলিনে তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন আয়ারল্যান্ড।

অর্জন ও প্রাপ্তিসমূহ

মানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার নিমিত্তে প্রতিষ্ঠিত তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন অর্জন করেছে অনেক সম্মান ও সুনাম। তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে একই কার্যক্রম পরিচালনা করছে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

আয়ারল্যান্ডের প্রতি বছর Depertment of Justice এর উদ্যোগে কমিউনিটি ইন্টিগ্রেশন উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন সংগঠনকে আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকে। ২০১৯ সালে মাল্টিকালচারাল কমিউনিটি ইন্টিগ্রেশন প্রোগ্রামে ১২৪ টি অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে সেরা প্রতিষ্ঠান (Successful Organisation) হিসেবে ঘোষণা করে, যার মধ্যে একটি ছিল তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন আয়ারল্যান্ড। যার ধারাবাহিকিতয়ায় ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস জনাব শামীমকে Communities Integration Fund 2019 এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানায়, যেখানে স্পেশাল অতিথি হিসেবে জাতিসংঘের High Commissioner for Refugees এবং মিনিস্টার অব জাস্টিস Mr Charlie Flanagan, মিনিস্টার অব স্টেট Mr David Stanton এবং Members of Stronger Together Enniscorthy ও তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশনের ৫ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ইউনাইটেড ন্যাশনের হাই কমিশনার জনাব শামীমকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। সেখানে জনাব শামীম বাংলাদেশের কথাও তুলে ধরেন একজন ভিনদেশী হিসেবে।

ইউরোপের একটি ম্যাগাজিন ‘Yearbook of Muslim in Eurpoe’ যেখানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মুসলিম সংগঠনগুলোর অবদানের কথা তুলে ধরা হয়। তার ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে আয়ারল্যান্ডে তিনটি মুসলিম সংগঠনের কথা তুলে ধরা হয়, যেখানে আয়ারল্যান্ডের মেইনস্ট্রিম বা মূলধারার সংগঠনের মধ্যে তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন এর অবদানের কথা ও উঠে আসে। যেখানে বলা হয়, “জনাব সাগর আহমেদ শামীম হলেন আয়ারল্যান্ডের প্রথম প্রবাসী যিনি ২০১৫ সালে জিপিও তে প্রতি শুক্রবার গৃহহীন মানুষের মাঝে খাবার বিতরণের কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। জনাব শামীম বলেন, এর আগে জিপিওতে অন্যান্য দিন খাবার দিলেও শুক্রবারে কেউ খাবার দিত না। তিনি শুক্রবারে খাবার বিতরনের কাজ শুরু করেন, যা বর্তমানে অনেক সংগঠনকে এই দিনটিতে হোমলেস মানুষের মাঝে খাবার দিতে অনুপ্রাণিত করে।”

২০১৮ সালে The Sun পত্রিকায় আয়ারল্যান্ডের হোমলেস ক্রাইসিসের মুহূর্তে সাহায্যকারীদের সাথে জনাব শামীমের খবরও প্রকাশিত হয় এবং সবার গল্প তুলে ধরা হয়। উক্ত রিপোর্টে একজন ডেন্টিস্ট ভলান্টিয়ার তাঁর বক্তব্যে জানান, জনাব শামীমের কর্ম ধারা অনুপ্রাণিত হয়েই তিনি মানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার উৎসাহ পান।

Heroes of the Homeless – The Sun Newspaper

স্বনামধন্য ইসলামি চ্যারিট্যবল প্রতিষ্ঠান ‘ইসলামিক রিলিফ’ এর ম্যাগাজিনেও তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশনকে নিয়ে আর্টিক্যাল প্রকাশ করে। যেখানে ফাইন্ডেশনের সব কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। এছাড়াও আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন ও জনাব শামীমের মহান কর্মের খবর উঠে আসে বহুবার।

ইসলামিক রিলিফের প্রতিবেদনে

জনাব শামীমের কর্মে আনন্দিত হয়ে আয়ারল্যান্ডের স্বনামধন্য প্রোপার্টি ব্যবসা কোম্পানি গ্যানন হোমস ফাইউন্ডেশন ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিনা ভাড়ায় অফিস প্রদান করে।

তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশনের এই অর্জন ও সুনাম শুধু আহমেদ শামীমের একার নয়। এ সুনামের ভাগীদার সমগ্র বাংলাদেশি ও মুসলিম জনগোষ্ঠীও। এতে করে বাংলাদেশি তথা সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি আইরিশ এবং অন্যান্য কমিউনিটির পজিটিভ মনোভাব তুলে ধরে।

DublinInquirer নিউজ লিংক – তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন

কে এই সাগর আহমেদ শামীম?

তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন আয়ারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা জনাব সাগর আহমেদ শামীম বাংলাদেশের হবিগঞ্জের সন্তান। বৃন্দাবন কলেজের ছাত্র জনাব শামীম নেদারল্যান্ডের Breda University of Applied Sciences থেকে BBS এবং Tourism Management and Consultancy তে গ্রাজুয়েশন শেষ করে ২০০৩ সালে আয়ারল্যান্ডে প্রথম পদার্পণ করেন। চার সন্তানের জনক জনাব শামীম সহধর্মিণী নাসরিন আহমেদ লাভলীকে নিয়ে সুখের সংসার।

ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জনাব শামীম জানান, দাতব্য কার্যক্রম আরম্ভ করার সময় প্রথম প্রথম তাঁকে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছিল। একেতো ছিলেন এ বিষয়ে অনভিজ্ঞ, তার উপরে সকলের আস্থা অর্জন ছিল চ্যালেঞ্জের বিষয়। এরপর ধীরে ধীরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দাঁড় করিয়েছেন আজকের সফল এই ফাউন্ডেশনকে। শুরুতে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল, শুনতে হয়েছিল অনেক নেগেটিভ মতামতও। কিন্তু সব বাধা ও প্রতিবন্ধকতাকে পশ্চাতে ফেলে এগিয়ে গিয়েছেন সাহসের সাথে।

Independent নিউজের খবর – তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন

জনাব শামীম আরো জানান, শুরুতে যেখানে সামান্য ফান্ড পেতে ও স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় এমন পাওয়াটা অনেক দূরহ বিষয় ছিল। অথচ এখন অনেক স্বেচ্ছাসেবী উনার সাথে কাজ করতে উদগ্রীব থাকেন এবং ফান্ড প্রদান করতে Islamic Relief -এর মত স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রদান করতেছে এবং যৌথভাবে কাজ করতে উৎসাহী হচ্ছে। এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

তাঁর ভাষ্যমতে, কমিউনিটির সবাই একে অন্যের সাহায্য করবো, একে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসবো এটাই স্বাভাবিক। যদি আমরা তা না করতে পারি, তাহলে কিসের কমিউনিটি? কিসের সমাজ? তিনি আরো জানান, আমরা যখন কাউকে সাহায্য করবো, আমার ভাবার দরকার নেই তাঁর অতীত কর্ম; আমরা শুধু দেখবো সে একজন বিপদগ্রস্থ এবং তার বর্তমানে সাহায্যের প্রয়োজন।

তিনি বলেন, পরকালে আমাদের গুড ডিড বা ভালো কর্মগুলাই কেবলমাত্র গণনাযোগ্য হবে। আমরা যত গুড ডিড করে যেতে পারবো পরকালে সেগুলোই আমাদের সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে। পার্থিব জগতের ধন সম্পদ কিছুই আমাদের কাজে দিবে না, যদি না সেগুলো মানব কল্যাণে ব্যায় না করতে পারি।

আমরা যে দেশে রয়েছি, সে দেশ ও জনগণের প্রতিও আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। আমরা এখানে সবধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে থাকি, এর কিছু প্রতিদান দেয়াও আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে, জানান জনাব শামীম।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

জনাব আহমেদ শামীমের দাতব্য সেবার বর্ণাঢ্য পথচলায় যাদের সহযোগিতা পেয়েছেন সবার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ। সকল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানকে তিনি স্মরণ করেন পরম কৃতজ্ঞতায়। তন্মদ্ধে কিছু ব্যক্তির কথা বিশেষ ভাবে না বললেই নয়।

যারা তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠালগ্নে সাথে ছিলেন, তাঁরা হলেন ডা: শাহ হালিম (ব্রুনাই), ডা: সাফিজ (মালয়েশিয়া), ডা: ফাজরিন (মালয়েশিয়া), ডক্টর শফিকুর রহমান (বাংলাদেশ) ইমরান গাজী (পাকিস্তান), এডভোকেট লাভলী ইয়াসমিন (বাংলাদেশ), সাইদুল ইসলাম(বাংলাদেশ), অ্যাডাম (আইরিশ), আব্দুল মুহিত (বাংলাদেশ), জন ত্রিজনো, সালামত (ইন্দোনেশিয়া), আজগর বাট (ইংল্যান্ড), উসামা হোসেন (জর্ডান), শুয়েভ ইউনূস (পাকিস্তান) প্রমুখ।

ফাউন্ডেশনের মোবাইল ফুডব্যাংক পরিচালনায় যারা সহযোগিতা করেন ব্রানডেন (আইরিশ), জন ত্রিজনো (ইন্দোনেশিয়া) সেরলিন (ইস্তোনিয়া), গিজলান (মরক্কো), আনজি (আইরিশ)।

MetroEiereann নিউজ লিংক – তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন

পরিশিষ্ট

জনাব শামীম ও তাঁর প্রতিষ্ঠান তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন আয়ারল্যান্ডের কর্মযজ্ঞ এতোই সুবিশাল যে লিখে তা তুলে ধরা সম্পূর্ণরূপে সম্ভব নয়। একজন ব্যক্তি যিনি এমন নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছেন তা কমিউনিটির আমাদের মাঝে এখনো বহুলাংশে অপ্রকাশিত। অথচ এহেন কর্মের কথা সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ার দরকার এবং তা শুধু জনাব শামীম ও তাঁর ফাউন্ডেশনের গুণগানের জন্যই নয় বরঞ্চ অন্যদেরকেও অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশ্যে। এতে আমাদের মধ্যে বোধ তৈরি হবে সমাজের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা কি, ভালো কাজ বলতে কি বোঝায় ও চাইলেই যে কোন প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সফল হওয়া যায়।

জনাব শামীম আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁর কর্মে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরাও পারি এমন কিছু করতে, যা সমাজ ও সমাজের মানুষের জন্য কল্যাণকর। আমরা সহযোগিতা করতে পারি জনাব শামীম ও তাঁর প্রতিষ্ঠানকেও; অর্থ দিয়ে, শ্রম দিয়ে, এমনকি তাদের কর্মকে ছড়িয়ে দিয়ে। এতে করে তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন পৌঁছতে সক্ষম অনন্য উচ্চতায়। তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন আয়ারল্যান্ড শুধু জনাব শামীমের জন্যই নয় আমাদের সবার জন্য গর্বের।

তাসনুভা শামীম ফাউন্ডেশন আয়ারল্যান্ড এগিয়ে যাক আপন গতিতে, পৌঁছে যাক অনেক দূর।

প্রতিবেদক: ওমর এফ নিউটন
বার্তা সম্পাদক: আইরিশ বাংলা টাইমস

Facebook Comments Box