Sir David Attenborough, তার ভরাট গলার সুকণ্ঠ কে শুনে নাই? নিরেট বাচনভঙ্গি, মধু মিশ্রিত কণ্ঠ, মসৃন শব্দচয়ন, ঝর্ণাধারার মত নির্বিগ্ন কথার প্রবাহ। মন্ত্রমুগ্ধের মত আকৃষ্ট করে রাখে যার কথার মাদকতায়। কে শুনে নাই তাকে? ‘Life on Earth’ থেকে শুরু করে ‘A Life on our Planet’, কে দেখে নাই তার প্রামাণ্যচিত্রগুলো? পর্বত, সমুদ্র, অরণ্য, জীবজন্তু, জলবায়ুকে এমনভাবে আর কে তুলে ধরেছে আমাদের সামনে? যার সারাটি জীবন কেটেছে প্রকৃতির সান্নিধ্যে, প্রকৃতিকে ভালোবেসে। যে চষে বেড়িয়েছে অতলান্তিক সমুদ্রের তলদেশ থেকে সুউচ্চ পর্বতচূড়ায়, বিস্তৃন্ন মরুভুমি থেকে গহীন অরণ্যে, আফ্রিকা থেকে এন্টার্কটিকা। আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বিশ্ব এবং এর সৃষ্টির সাথে।
স্যার এটেনবরো শুধু প্রামাণ্যচিত্রকর ও মিডিয়া ব্যাক্তিত্বই নন, সে একজন চিন্তাবিদ, ইতিহাসবিদ ও গবেষক। প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক উপাদান নিয়ে তার রয়েছে অগাধ গবেষণালব্ধ জ্ঞান। এত কাছ থেকে প্রকৃতিকে দেখা ও উপলব্ধি খুব কম মানুষরই রয়েছে। তার ভাষ্যমতে, মানুষ ও প্রকৃতি হচ্ছে একে ওপরের পরিপূরক। সে বলে “If you take care of nature, nature will take care of you”। সে তার প্রামাণ্যচিত্রে প্রকৃতিকে এমনভাবে তুলে ধরেছে, যাতে করে আমরা বুঝতে সক্ষম হয়েছি যে প্রতিটি প্রাকৃতিক উপাদান কিভাবে এই পৃথিবীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ, আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে কিভাবে বাস্তুতন্ত্র কাজ করে।
ডেভিড এটেনবরো তার সম্পূর্ণ জীবনকালের সাক্ষ্য হিসেবে সম্প্রতি একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ করে, যা নেটফ্লিক্সে সম্প্রচার করে। আবেগঘন এই ডকুমেন্টারিতে তুলে ধরেছে কিভাবে ধীরে ধীরে বাস্তুতন্ত্র বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে, বরফ গলতেছে, উষ্ণায়ন বাড়তাছে, যার ফলে প্রকৃতি হারাচ্ছে তার ভারসাম্য। বর্ণনা দিয়েছে তার জীবনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবী কিভাবে পরিবর্তন হয়েছে এবং এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০০ বছর পৃথিবী কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তারও ফোরকাস্ট প্রদান করে। যা সত্যিই লোমহর্ষক। তবে সে সমাধানও প্রদান করে, যে মানুষ চাইলে এখনো কিভাবে পারে এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে।
ডেভিড এটেনবরো একজন অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যাক্তিত্ব। তাকে ব্রিটেনের ট্রেজার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সে শুধু ব্রিটেন না, বিশ্বের জন্যই একজন জীবন্ত ট্রেজার। স্যার এটেনবরো দেখিয়ে গিয়েছে ধরণীর কি ছিল, কি হয়েছে এবং কি হবে। এখন আমাদের সবারই দায়িত্ব এই ধরণীকে রক্ষা করা এবং আগামীর জন্য বাসযোগ্য ধরণী রেখে যাওয়া।
৯৪ বছর বয়স্ক ডেভিড এটেনবারাহ দীর্ঘ অর্থবহ জীবনকাল অতিক্রম করে জীবন সায়াহ্নে দাঁড়ানো। তার কৃতকর্মকে কাজে লাগিয়ে আগামীর প্রজন্ম কিভাবে ধরণী রক্ষার দায়ভার গ্রহণ করে তা ই দেখার বিষয়।