আজ ৮ই নভেম্বর ২০২৩ বুধবার, অল বাংলাদেশি এসোসিয়েশন অফ আয়ারল্যান্ড (আবাই) এবং আয়ারল্যান্ডের ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস মিনিস্টার Helen McEntee এর মধ্যকার ফলপ্রসূ বৈঠকের সফল সম্পন্ন হয়েছে। উক্ত বৈঠকে আয়ারল্যান্ডে বর্তমান বাংলাদেশি ইমিগ্রান্ট ও বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ভিসা ক্যাটাগরির জটিলতা নিয়ে আলোকপাত করা হয়।
এটি ছিল ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস এর সাথে ABAI এর দ্বিতীয় মিটিং এবং প্রথম মিটিং এর ফলো আপ মিটিং। গত ২৬ এপ্রিল আবাই এর প্রথম মিটিং হয় জাস্টিস মিনিস্টার জেমস ব্রাউনের সাথে। জেমস ব্রাউন বর্তমান জাস্টিস মিনিস্টার হেলেন ম্যাকেনটির স্থলাভিষিক্ত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আবাইয়ের সভাপতি জনাব জিন্নরাইন জায়গীরদার, সাধারণ সম্পাদক জনাব আনোয়ারুল হক আনোয়ার, সহ সভাপতি জনাব আজিজুর রহমান মাসুদ ও জনাব মনিরুল ইসলাম মনির এবং সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব ইনজামামুল হক জুয়েল। এছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর জনাব কাজী মোশতাক আহমেদ ইমন ও সময় টিভির সাংবাদিক সৈয়দ জুয়েল।
আজকের বৈঠকে যে যে বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়ঃ
ক) অনথিভুক্ত ইমিগ্রান্টঃ গত মিটিং এ উত্থাপিত বিষয়াবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বাংলাদেশে আইরিশ দূতাবাস স্থাপন অথবা দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে কন্স্যুলার অফিস অথবা এজেন্ট স্থাপন, ভিসা বিষয়ক জটিলতা দূরীকরণ। আজকের মিটিং এ Helen McEntee আশ্বস্ত করেন যে, খুব শিগ্রই বাংলাদেশে কন্স্যুলার অফিস স্থাপন করবে। এ বিষয়ে জাস্টিস মিনিস্টার দৃয়ভাবে ব্যাক্ত করেন যে, ইতিমধ্যে তারা কন্স্যুলার অফিসের জন্য কার্যক্রম শুরু করেন যা আগামী বছরের শুরুর দিকেই একটি অফিস স্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে।
যেহেতু বাংলাদেশে আইরিশ কোন এম্বেসি বা দূতাবাস নেই সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে যেন অন্তত কন্স্যুলার অফিস স্থাপন অথবা VFS এর মত ইমিগ্রেশন এজেন্ট স্থাপন করা হয়। যাতে করে ভিসার আবেদন জমা দেয়া ও ভিসা সংগ্রহ করতে ভোগান্তির শিকার না হতে হয়। ভারত গিয়ে ভিসা জমা ও সংগ্রহ করা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়না এবং হলেও সময়সাপেক্ষ ও ভোগান্তির বিষয়। অনেকে সময়মত পাসপোর্ট হাতে পায় না এবং পাসপোর্ট হারানোরও নজির রয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশে কন্স্যুলার অফিস হলে বাংলাদেশিরা অনেক ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে।
খ) অনথিভুক্তদের বৈধতাঃ আয়ারল্যান্ডে প্রায় ১৭ হাজার অনথিভুক্তদের বৈধতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তার প্রেক্ষিতে অনেকে বৈধতা পেলেও অনেকের আবেদন এখনো ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। আবাই এর প্রতিনিধিগণ গত সভায় কিছু আবেদনের প্রমাণসহ জাস্টিস মিনিস্টার এবং চিপ ইমিগ্রেশন অফিসার এর নিকট প্রদান করেন এবং কথা দিয়েছিলেন যে তার ব্যাপারে তারা দেখবেন। তন্মদ্ধে কিছু আবেদনের সুফল পাওয়া গেলেও অনেকগুলো এখন ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। এই বৈঠকেও তারা কিছু আবেদন মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন এবং মন্ত্রী প্রদানকৃত আবেদন ও অন্যান্য ঝুলন্ত আবেদনের ফলাফল তরান্বিত করার আশ্বাস দেন।
গ) ভিসা সহজীকরনঃ আবাই এর প্রতিনিধিগণ বাংলাদেশ থেকে ওয়ার্ক ভিসা, স্টুডেন্ট ভিসার কোটা বর্ধনের জন্য অনুরোধ জানান, অন্যান্য দেশের তুলনায় জনসংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশে এইসব ভিসা দেয়ার হার অত্যন্ত নগণ্য। ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন অফিসারদের অবহেলার কথাও উল্লেখ্য করেন প্রতিনিধিগন এবং কিছু ভিসা রিফিউজের প্রমাণও উত্থাপন করেন। বিগত সময়ে ওয়ার্ক ভিসা এবং স্টুডেন্ট ভিসা অনেক রিফিউজ হয়েছে শুধুমাত্র অবহেলার কারণে। এ বিষয়েও জাস্টিস মিনিস্টার গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
ঙ) পারিবারিক রিইউনিয়নঃ সেই সাথে বাবা মা এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি ভিসার ব্যবস্থা যেন করে সে অনুরোধও জানানো হয়। এর পর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রাম এর জন্য অনুরোধ জানান। বর্তমানে আয়ারল্যান্ডে ২৪ টি দেশে ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রাম রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য নেই। যেমন পার্শ্ববর্তি দেশ ইংল্যান্ডে কেউ ভিসা পেলে আয়ারল্যান্ডে এবং আয়ারল্যান্ডে ভিসা পেলে ইংল্যান্ডে ভ্রমণ করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এই সুবিধা নেই। Helen McEntee এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন বলে জানিয়েছেন।
চ) ভিসা নবায়ন অনলাইনকরনঃ এরপর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইমিগ্রেশণ সার্ভিস অনলাইনকরণ। এ বিষয় সমাধানের জন্য ও প্রয়োজনে অনলাইনে এই সেবা দেয়া যায় কিনা তা নিয়ে মন্ত্রীর সাথে আলোচনা করা হয়।
Helen McEntee, ABAI এর প্রতিনিধিদের উত্থাপিত সব বিষয় মনোযোগ সহকারে শুনেন এবং বিষয়গুলো তাঁর দৃষ্টিগোচর করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। উপরোক্ত সব বিষয়কেই যৌক্তিক ও ভ্যালিড বলে জানান জাস্টিস মিনিস্টার Helen McEntee। তিনি বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখার আশ্বাস দেন এবং খুব শীগ্রই বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবেন বলে আশ্বাস দেন।
এছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মন্ত্রীর সাথে খোলামেলা আলোচনা করেন আবাই এর নেতৃবৃন্দ।
আবাই এর সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক আনোয়ার জানান, ”ইমিগ্রেশন বিষয়ক সমস্যাগুলো নিয়ে তারা নিরলস কাজ করে যাবেন। সে পর্যন্ত ক্ষান্ত হবেন না, যে পর্যন্ত না সমস্যাগুলো সমাধানের মুখ দেখে”।