১৫ মে রবিবার Dublin City University তে ২১ শে বই মেলা ২০২২এর বিশেষ আকর্ষন থাকবে চিত্রশিল্পী জেবুন নাহারের চিত্রকর্মের প্রদশর্নী।
জেবুন নাহার ছোট বেলায় হতে চেয়ে ছিলেন একজন সঙ্গীত শিল্পি এবং তার গানের গলাও ছিল খুব ভালো। জেবুন নাহারের বয়স যখন ৯ কিংবা ১০ বছর তখন তার বাবা তাকে হারমোনিয়াম কিনে দেন। বাবারও ইচ্ছে মেয়ে গান শিখুক। জেবুন নাহারের বাবার গানের গলাও ছিলো বেশ। খালি গলায় তার বাবা যখন গান করতেন তখন জেবুন নাহারের কাছে মনে হতো হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গান করছেন।
বড় বোন কামরুন নাহারের ইচ্ছেও ছিলো তার ছোট বোনটি যেন ভালো কন্ঠ শিল্পী হয়। একদিন তার বড় বোন জেবুন নাহারের হাত ধরে তাকে নিয়ে যান উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী বসির উদ্দিন আহমেদের কাছে সঙ্গীতের তালিম নিতে। সঙ্গীতের দিক্ষা নিতে গিয়ে বসির আহমেদ ও তার স্ত্রী মিনা বসিরের প্রিয় ছাত্রী হিসেবে সঙ্গীতের তালিম ও স্নেহ পেয়ে ধন্য হোন জেবুন নাহার।
জেবুন নাহার আয়ারল্যান্ডে আসার আগ পর্যন্ত ঢাকায় অক্সফোর্ড স্কুলে বাচ্চাদের গান শেখাতেন এবং নিজেও গানের রেওয়াজ করেন।
কিন্তু সৃষ্ঠিকর্তা জেবুন নাহারকে দিয়েছেন ছবি আকা্ঁর আরেক প্রতিভা। এই ছবি আকা্ঁর প্রতিভা যে তার রক্তের মধ্যে মিশে আছে। আর তার সঙ্গীতের প্রতিভাকে ছাপিয়ে তিনি এখন চিত্রশিল্পী।
তার পুরো নাম জেবুন নাহার অনু। তিনি একজন বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী, আয়ারল্যান্ডে থাকেন, ছবি আকে্ঁন। সম্প্রতি National Art Gallery of Ireland এ একটি ছবি আকা্ঁতে অংশ নিলেন ইউরোপের বহু চিত্র শিল্পিদের সাথে এবং খুব শিগ্রই ছবিটির প্রদর্শনী হবে।
দুই ভাই তিন বোন, এই পা্ঁচ ভাই বোনের মধ্যে চতুর্থ জেবুন নাহার অনু। তিনি এক পুত্র সন্তানের জননী আর স্বামী পরাগ কে নিয়ে ২০০৭ সাল থেকে Dundalk এ বসবাস করছেন। পারাগের দাদী বাংলাদেশের বিখ্যাত রন্ধনশিল্পী সিদ্দিকা কবীরের নাত’বৌ চিত্রশিল্পী জেবুন নাহার অনু । সিদ্দিকা কবীর তার চিত্রকর্ম ভিষন পছন্দ করতেন এবং ছবি আকাঁয় প্রেরণা দিতেন।
জেবুন নাহার অনু বাংলাদেশ ঢাকা ইউনিভার্সিটির চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে এমএফএ মাস্টার্স সম্পন্ন করেন ২০০৭ সালে ( Bachelor of fine arts BFA Masters of fine arts MFA from Dhaka University fine arts department) এরপর চলে আসেন আয়ারল্যান্ডে।
জেবুন নাহারের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ঢাকায়। মতিঝিলের পোষ্ট অফিস হাই স্কুলে তার শৈশবের পড়া শুনা। বাবা মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ভূই্ঁয়া ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার আর তার মা সামসুন নাহার ছিলেন গৃহিনী। বাবার চাকুরী সুত্রে পাওয়া ঢাকার শাহজাহানপুরে সরকারী বাংলো বাড়িতে জেবুন নাহার ও তার পরিবার থাকতেন। খুব ছোট বেলা থেকেই ছবি আকা্ঁর নেশা পেয়ে বসে তাকে। তার বাবাও খুব ভাল ছবি আক্ঁতেন। জেবুন নাহার মনে করেন বাবার কাছ থেকে জন্মসুত্রে পাওয়া তার এই ছবি আকা্ঁর নেশা। বাবা অফিস থেকে ফেরার পথে তার আদরের মেয়ের জন্য নিয়ে আসতেন রং পেন্সিল আর রং তুলি। সেই রং পেন্সিল আর রং তুলি পেয়ে জেবুন নাহার আনন্দে হারিয়ে যেতেন ছবিতে রং তুলির আচড়ে।
শৈশবে স্কুল জীবনে বড় ভাই বোনদের উৎসাহ আর সহযোগীতায় ছবি আকা্ঁকে ভালোবেসে ফেলেন তিনি এখন ছবি আকাঁ তার আত্মার খোরাকের মত।
আয়ারল্যান্ডে তিনি মেম্বার অফ প্রফেশনাল
আর্টিস্ট এক্সচেঞ্জ আর্টিস্ট মেম্বার (Member of Dundalk art exchange AAEX group).
এবং তিনি মেম্বার অফ ক্রিয়েটিভ স্পার্ক (Member of creative spark Dundalk) এছাড়াও তিনি Member of visual art of Ireland এবং Member of Irish artist.
বর্তমানে জেবুন নাহার এদেশে বাচ্চাদের নিয়েও নিয়মিত বিভিন্ন এক্সিবিশনে প্রফেশনালি ছবি আকে্ঁন।
জেবুন নাহার বলেন, ” খুব ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকার প্রতি আমার অনেক ঝোঁক ছিল। আমার বাবা ছিলেন একজন আর্কিটেক্ট ইঞ্জিনিয়ার বাবা ছোটবেলা থেকেই অফিস থেকে ফেরার পথে আমার জন্য সবসময় রং কাগজ পেন্সিল তুলি এগুলো কিনে আনতেন। বাবা খুবই ভালো ছবি আঁকতেন। আমি বাবার কাছ থেকে জেনেটিক ভাবে এটা পেয়েছি। কচি-কাঁচার মেলা তে দাদা ভাই রোকনুজ্জামান খান আমার শিক্ষা গুরু। “
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনিষ্টিটিউট থেকে মাস্টার্স কমপ্লিট করার পর জেবুন নাহার বাংলাদেশে ধানমন্ডির “ম্যাপেল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ” আর্ট টিচার ছিলেন।
বর্তমানে আয়ারল্যান্ডে তিনি বাচ্চাদের একটি আর্ট শেখার স্কুল সি বি এস অফ প্রাইমারি স্কুলে তিনি আর্ট টিচার হিসেবে নিযুক্ত আছেন। তিনি আর্ট এক্সচেঞ্জ এর মেম্বার এবং তার গ্যালারিতে নিজের ছবি বিক্রি করা হয় এবং এই গ্যালারিটি (Longwalk shopping centre Dandalk) লং ওয়াক শপিং সেন্টারে।
জেবুন নাহার বলেন,আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন চেয়েছেন বলে আজ আমি এদেশের বুকে শিল্পী হতে পেরেছি এবং অনেক কৃতজ্ঞ আল্লাহতালার দরবারে এবং আপনাদের সকলের দোয়া আর ভালবাসা চাই যেন বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশী শিল্পী হিসেবে নিজের দেশ নিজের দেশের ভাষা এবং শিল্পকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি তাই আপনাদের সবার কাছে দোয়া ও সহযোগিতা আমার কামনা করি।
জেবুন নাহার Irish Monaghan art and Monaghan music and singer group এর সাথে কাজ করেন ছবি আকে্ঁন তার ছবি দেখে অনুপ্রানিত হয়ে আইরিশ কবি Ciran Redmond কবিতা লিখেছেন,একজন প্রবাসী চিত্রশিল্পী হিসেবে এটা জেবুন নাহারের কাছে অনেক বড় পাওয়া।
২০০৯ সালে তিনি Student of the year & Graphic Design Award এ ভূষিত হোন
From oficiah Institute.
২০১৯ সালে প্রায় ৪০জন চিত্রশিল্পীর মধ্যে Print Work প্রতিযোগীতায় County Louth থেকে জেবুন নাহারের print work নির্বাচিত হয় Drogheda arts centre এ print exhibition এর জন্য। এটা একজন বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী হিসেবে অনেক গৌরবের।
আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটিতে এমন অনেক মুখ আছে যারা আমাদের কমিউনিটিতে নিরবে নিভৃতে তারা তাদের কর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুখকে উজ্জল করছেন প্রতিনিয়ত। তাদের কাছে নিজের পরিচিতির চাইতে প্রবাসে দেশের জন্য কাজ করাটাই গৌরবের।
লেখক: মশিউর রহমান।
ডাবলিন,আয়ারল্যান্ড।