সহিষ্ণু মনোভাব কখনো ক্ষয়িঞ্চু নয়

আমাদের একচোখা দৃষ্টি ও একপেশে নীতি আজকের সামাজিক অবক্ষয়ের মূল কারণ

0
403

আপনি যতই ভালো কথা বলেন না কেন লাভ নেই। আপনার বিপক্ষ লোকের কাছে সব ভালো কথা ই খারাপ বলে গণ্য হবে। আবার আপনি খারাপ কথা বললেও যে তা আদতে খারাপ তা কিন্তু নয়, আপনার যারা সমর্থক আপনার সমস্ত খারাপ কথাই তাদের কাছে ভালো বলেই গণ্য হবে।

আপনি ভালো খারাপ যা ই বলেন না কেন, তা কারো কাছে ভালো আবার কারো কাছে মন্দ বলেই উপস্থাপিত হবে। আপনি আপনার সমর্থকগোষ্ঠীর বিবেচনার প্রেক্ষিতেই কথা বলেন। আপনি যেমন বুঝতে পারেন না আপাতদৃষ্টিতে কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ, তেমনি আপনার সমর্থকগোষ্ঠীও আপনাকেই শুধু বিবেচনা করে এবং আপনার মুখ থেকে নিঃসৃত বাণীকেই আদর্শ বলে ধরে নিচ্ছে।

এতে ব্যাক্তি হিসেবে প্রত্যেক ব্যাক্তিই হারাচ্ছে চিন্তা করার স্বকীয়তা। আপনি যে ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীর সমর্থক আপনি ওই ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীর মাঝেই ঘুরপাক খাচ্ছেন। ওই ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীর ভালোকে ভালো, এমনকি খারাপকেও ভালো বলে গণ্য করতেছেন। অন্য দিকে বিপক্ষ ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীর খারাপকে তো খারাপ বলবেনই, এমনকি ভালোকেও খারাপ বলতে আপনার দ্বিধা হয় না। কারণ আপনি স্বাধীন চিন্তা করার স্বকীয়তা হারিয়ে পেলেছেন।

আমরা নৈতিক মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে এসে ব্যাক্তিগত পছন্দ অপছন্দের ভিত্তিতে সবকিছু বিচার করি। আমাদের একচোখা দৃষ্টি ও একপেশে নীতি আজকের সামাজিক অবক্ষয়ের মূল কারণ।

সমাজ কিভাবে ধীরে ধীরে সভ্যতার শিখরে আরোহন করেছে সে বিষয়ে জানতে আমাদের অনীহা। কিন্তু আমরা যে নিজের অজান্তেই সভ্যতার শিখর থেকে শিকড়ে নেমে যাচ্ছি তা কি অনুধাবন করতে পারতেছি?

আমরা খুব কমই ভাবি। সম্মুখে যা আসে তা নিয়েই হইছই করি। খুব কমই পড়ি বা চিন্তা করি। ভাসা ভাসা যা দেখি বা শুনি তাকেই নিজের লব্দ জ্ঞানভান্ডার মনে করে নিরুদ্দেশ সাঁতরানোর চেষ্টা করি। এবং তা নিয়েই একচোখা দৃষ্টিতে মনে করে নেই কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ।

নিজেকে প্রশ্ন করি কোনটা সঠিক কোনটা নয়

আপনি যখন ভবিষ্যত নিয়ে কাজ করবেন সেই সাথে অতীতকেও গন্য করতে হবে। যখন একটা কথা বলবেন তা যেন শুধু নিজ সমর্থকগোষ্ঠী নয় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কথা হয় তা ভেবে কথা বলা উচিত। যখন একটি কথা শুনবেন তখন নিজ ভাবনার সাথে নয় বরঞ্চ সামগ্রিক অর্থে গ্রহণযোগ্য কিনা তা বিবেচনায় আনা বাঞ্ছনীয়। একজন ব্যাক্তি, কে কথা বলল তা বিবেচ্য বিষয় না ভেবে কি কথা বলল তাকে গুরুত্ত্ব দিলে অনেক কিছুই বোধগম্য হয়। নিজের ভাবনাকে কাজে লাগান, চিন্তার প্রসারতা বৃদ্ধি করুন।

অন্যকে যেমন খুব সহজে প্রশ্ন করতে পারেন, ঠিক সেইভাবে নিজেকে প্রশ্ন করতে শিখুন। অনেক উত্তর নিজেই পেয়ে যাবেন।

মাঝে মধ্যে প্রতিযোগিতার দৌড় থেকে পিছিয়ে আসুন। সবসময় প্রতিযোগিতার ময়দানে থাকতে হবে এমন নয়। আপনাকে বিবেচনা করে ময়দানই একদিন আপনাকে ডেকে নিবে। মনে রাখবেন সহিষ্ণু মনোভাব কখনো ক্ষয়িঞ্চু নয়। বরঞ্চ অসহিঞ্ছুতাই অবক্ষয়ের বীজ বপন করে।

সহিষ্ণু মনোভাব কখনো ক্ষয়িঞ্চু নয়

সমাজ হয়ত মাঝে মধ্যে খারাপের কবলে পড়ে কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভালোটাই গ্রহণ করে চলে এবং খারাপটাই বর্জন করে। যত কিছু ভালো তা ই শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত এবং খারাপ নিক্ষিপ্ত হয় আস্তাকুড়ে। খারাপটা খারাপ এবং ভালোটা ভালোভাবেই ইতিহাসে লিখিত হয়।

ইতিহাস রচনা করবে ভবিষ্যৎ, যখন আপনি থাকবেন না হস্তক্ষেপ করার জন্য। ইতিহাসে আপনি কিভাবে লিখিত হতে চান তা ভেবে কাজ করুন। স্বলিখিত ইতিহাস কেউ গ্রহণ করেনা। কিন্তু ইতিহাস যখন আপনার ইতিহাস লিখবে তখন তা ই হবে প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস এবং লিখিত থাকবে স্বর্ণাক্ষরে।

ওমর এফ নিউটন
আইরিশ বাংলা টাইমস

Facebook Comments Box