শান্ত আয়ারল্যান্ড অশান্ত কেন?

অ্যান্টি ইমিগ্রান্ট প্রোটেস্ট ও অভিবাসীদের শঙ্কা

0
380

আয়ারল্যান্ড একটি শান্তি প্রিয় দেশ। আয়ারল্যান্ডের মানুষের মধ্যে রয়েছে সম্প্রীতির মেলবন্ধন। এখানে ইমিগ্রান্ট, ইমিগ্রান্ট আইরিশ ও স্থানীয় আইরিশদের মাঝে কোন ভেদাভেদ করা হয় না। সবাইকে সমান চোখে দেখা হয়। সবাই সমঅধিকার নিয়ে শান্তিতে জীবনযাপনের দেশ এই আয়ারল্যান্ড।

কিন্তু হঠাৎ করেই যেন সব পাল্টে গেল। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হল আরেকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। মুহূর্তের মধ্যে যেন স্তব্ধ হয়ে গেল আয়ারল্যান্ডবাসী। কারণ, এমন ঘটনা দেখে অভ্যস্ত নয় এখানকার জনগণ। আয়ারল্যান্ডের হঠাৎ এমন রুদ্রমূর্তি দেখে সবার মনে তৈরি হল শঙ্কা, চোখে মুখে আতংকের চাপ ও জাগ্রত হল ভীতি।

সবচেয়ে বেশি ভীতি তৈরি হচ্ছে ইমিগ্রান্টদের মাঝে। অভিবাসীরা এতদিন আয়ারল্যান্ডে বসবাস করে আসছে নির্বিঘ্নে, নিঃঝঞ্ঝাটে। নিজ দেশের মতই এমনকি বেশি নিরাপদ মনে করত নিজেদেরকে। সেখানে ইমিগ্রান্টরা চায় না এই সৌহার্দ্যপূর্ণতা হারাতে। কারণ এখানে ইমিগ্রান্টদের দ্বিতীয়, তৃতীয় এমনকি চতুর্থ প্রজন্ম গড়ে উঠেছে। আয়ারল্যান্ডই এখন তাদের দেশে, তাদের আবাস ও তাদের ভবিষ্যৎ। সেখানে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক, যাতে ইমিগ্রান্টদের জীবন যাত্রা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে ও ভীতির মধ্যে কাটাতে হয় তা তারা চায় না।

আয়ারল্যান্ডে অভিবাসীদের সংখ্যা ক্রম বর্ধমান। বিগত বছরে তার পরিমাণ বেড়েছে বিগত বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। আয়ারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় স্টাটিস্টিক্স অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত ১২ মাসে আয়ারল্যান্ডের জনসংখ্যা বেড়েছে ৯৭,৬০০ যা ২০০৮ সালের পরে সর্বোচ্ছ জনসংখ্যা বৃদ্ধি।

বিগত ১২ মাসে ১৪১,৬০০ অভিবাসীর আগমন ছিল ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং দ্বিতীয় টানা ১২ মাসের সময়কাল যেখানে ১০০,০০০ এরও বেশি লোক আয়ারল্যান্ডে অভিবাসী হয়েছিল।

তন্মদ্ধে ২৯,৬০০ ছিল ফেরত আসা আইরিশ সিটিজেন, ২৬,১০০ EU সিটিজেন, ৪,৮০০ UK সিটিজেন এবং ৮১,১০০ আসছে অন্যান্য দেশ থেকে। এর মাঝে ৪২,০০০ ইউক্রেনিয়ানও আছে।

বিপুল পরিমাণ অভিবাসী আসার কারণে আয়ারল্যান্ডে শুরু হয় আবাসন সংকট। হাউজিং ক্রাইসিস নিয়ে বেশ কিছু প্রটেস্ট আগেও হয়েছিল। তন্মদ্ধে অ্যান্টি ইমিগ্রান্ট গ্রুপও তৎপর ছিল।

গত বৃহস্পতিবার ডাবলিনে তিন শিশুসহ পাঁচজনের ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে দুপুর ০১:৩০ এ এবং এর ঠিক ৫ ঘণ্টা পরেই সন্ধ্যা ০৬:০০ টার দিকে শুরু হোয় এন্টি ইমিগ্রান্ট প্রোটেস্ট। শুরু হয় ভয়াবহ তাণ্ডব। ছুরিকাঘাতের মত নিশংস ঘটনাই বা কেন ঘটল এবং এর পরপরই প্রটেস্টরদের এমন ভয়াভহ তাণ্ডব এর সাথে সামঞ্জস্য আছে কিনা তাও সঠিকভাবে নির্ণয় করা কঠিন।

এমন দৃশ্য আয়ারল্যান্ডে খুবই বিরল

আবার একজন ইমিগ্রান্ট অপরাধ করলেই তার দায়ভার যে সমগ্র ইমিগ্রান্টদের উপর বর্তাবে তাও কিন্তু নয়। যে ব্যাক্তি নিরপরাধ কোমল বাচ্চাদের গায়ে চুরি চালিয়ে জখম করতে পারে। সে কতটুকু মানুষের পর্যায়ে পড়ে তা সন্দেহাতীত এবং সে মানসিক বিকারগ্রস্থ কিনা তাও বলা যায় না। যে কারণেই সে ঘটনা ঘটিয়ে থাকুক না কেন, তার নিজের অপরাধের দায়ভার একান্তই তার।

কিন্তু এক ব্যাক্তির অপরাধের জেরে এখন সমগ্র অভিবাসী গোষ্ঠী এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। কিছু অ্যান্টি ইমিগ্রান্ট অবশ্যই আছে। কিন্তু তার পরিমাণ নিতান্তই সামান্য। ইমিগ্রান্টদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে এমন উছিলাই হয়ত এতদিন তারা খুজতেছিল। অবশেষে বৃহস্পতিবারের এই ঘটনা তাদের এই সুযোগ তৈরি করে দেয়।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বৃহস্পতিবারের সেই ঘটনা অ্যান্টি ইমিগ্রান্টদেরকে সুযোগ করে দেয় নাকি ওই ঘটনা দ্বারা তারা সুযোগ তৈরি করে নেয়?

অ্যান্টি ইমিগ্রান্ট প্রটেস্টের একটি দৃশ্য

যে কারণেই ঘটনা ঘটে থাকুক না কেন, এ ঘটনা ইমিগ্রান্টদের জন্য একটি রেড এলার্ট। এমতাবস্থায় সবাই যার যার অবস্থায় সতর্কতা অবলম্বন করুন। আশা করি আয়ারল্যান্ড তার পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। শান্ত আয়ারল্যান্ড একদিন আবার শান্ত রূপ ধারণ করবে।

Facebook Comments Box