রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনীতি মন্দা, ডলার সংকট সেই সঙ্গে বৈরুত পোর্টে বিস্ফোরণে স্থবির হয়ে পড়েছে লেবানন। ধস নেমেছে ব্যবসা বাণিজ্যে আর মহামারী করোনাভাইরাসের আক্রমণ তো রয়েছেই। দিন দিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাসহ দফায় দফায় লকডাউন সব মিলিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে চলছে লেবানন। এর বিশাল প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশি প্রবাসীদের ওপর।
এতে কর্ম হারিয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার প্রবাসী, অনেকে চাকরি পেলেও সঠিক মজুরি পাচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়ে দেশে ফিরছেন হাজার হাজার প্রবাসী।
প্রতিদিনই লেবানন থেকে ফিরছেন প্রবাসীরা। ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৫ হাজারের অধিক বৈধ কাগজপত্র থাকা প্রবাসী এ পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন। বৈধ কাগজপত্র থাকা প্রবাসীরা সহজে দেশে ফিরতে পারলেও জটিল অবস্থা তৈরি হয় বৈধ কাগজপত্রবিহীনদের। দেশে ফিরতে না পারায় উদ্বিগ্ন সবাই।
দীর্ঘ এক বছর ধরে লেবাননের অর্থনীতির চাকা ভেঙে পড়ায় দেশে ফিরতে চান হাজারও প্রবাসী। ২০১৯ সালে সেপ্টেম্বরে দেশে ফিরতে দূতাবাসে নাম নিবন্ধন করেন সাড়ে ৭ হাজারের অধিক প্রবাসী। চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত দূতাবাস নিবন্ধনকৃত এক হাজারের অধিক প্রবাসীকে দেশে ফেরাতে পারলেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যায় প্রবাসীদের দেশে ফেরার কর্মসূচি। জটিল থেকে জটিলতর অবস্থায় ধাবিত হয় লেবানন। দেশে ফিরতে না ফেরে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে বাংলাদেশি কর্মীরা। বিমান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হলে দেশে ফিরতে শুরু করেন তারা।
লেবাননের ডলার সংকট, চাকরি না থাকাই দেশে ফেরার মূল কারণ বলে জানান দেশে ফিরতে ইচ্ছুক প্রবাসীরা। তারা জানান, আগে একশ’ ডলার সমান দেড় লাখ লেবানিজ পাউন্ড লাগত; আর এখন আট লাখ লেবানিজ পাউন্ডের অধিক দিয়ে করতে হয় একশ’ ডলার। লেবানিজ নাগরিক নিজেরা এ সংকটে ভুগছেন। এমন অবস্থায় প্রবাসীরা ভাবছেন দেশে ফেরাই উত্তম।
গত ৩ অক্টোবর শনিবার লেবাননের বৈরুতে আনসার স্টেডিয়ামে ৪৯৭ প্রবাসীর হাতে বিমান টিকিট তুলে দেন বাংলাদেশ দূতাবাস। বিমান টিকিট হাতে পেয়ে তারা দূতাবাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) ও দূতালয় প্রধান আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মোট ৭৬৩৪ প্রবাসী দেশে ফিরতে নাম নিবন্ধন করেন। তাদের মধ্যে ৪৩টি ফ্লাইটে ৭২২৮ জন প্রবাসীকে এ পর্যন্ত দেশে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের ছোটখাটো মামলাসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান করে পর্যায়ক্রমে তাদেরও দেশে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
প্রবাসীদের নিয়ে ৪ অক্টোবর রবিবার বিকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট বৈরুত ছেড়ে যায় এবং ৫ অক্টোবর ভোরে বিমানটি হযরত শাহজালাল অন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
নিবন্ধনকৃত প্রবাসীদের দেশে পাঠানো হলেও এখনও দেশে ফিরতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বৈধ কাগজপত্রবিহীন হাজার হাজার প্রবাসী।