ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরাইলের ভ্যাক্সিন যুদ্ধ

0
911

ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন যুদ্ধ শুরু করেছে ইসরাইল। তারা করোনা ভাইরাসের টিকা দেয়ার কর্মসূচি থেকে ফিলিস্তিনকে বাদ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমন সিদ্ধান্তে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। ইসরাইলে নাজুক মানবাধিকার মানদ- থাকা সত্ত্বেও তারা ফিলিস্তিনিদের জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে চরমমাত্রায় নিষ্ঠুরতা বলেই মনে করা হয়। বৃটেন থেকে প্রকাশিত অনলাইন মর্নিং স্টারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ভ্যাক্সিন পাওয়া থেকে ফিলিস্তিনিদের বাদ রাখার ইসরাইলি সিদ্ধান্তের কড়া নিন্দা জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন। এসব গ্রুপ ইসরাইলের এমন আচরণকে প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ইসরাইল সরকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি এমনই নীতি অনুসরণ করে বলে এতে বর্ণনা করা হয়।
ইসরাইল ফেব্রুয়ারি নাগাদ অক্সফোর্ড এস্ট্রাজেনেকার টিকার ২০ লাখ ডোজ পাওয়ার আশা করছে। কিন্তু ইসরাইলের কাছ থেকে এই টিকার কোনো ডোজ পাওয়ার আশা করতে পারছে না ফিলিস্তিন। তবে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ক ফিলিস্তিনি সমন্বয়কারী হোসেন আল শেখ ইসরাইলের কাছে ফিলিস্তিনের ফ্রন্ট লাইনের কর্মীদের সুরক্ষার জন্য ১০ হাজার ডোজ টিকা চেয়েছেন। এখনও পর্যন্ত ইসরাইলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা’র মতে, করোনা ভাইরাসে সেখানে ৪ঠা জানুয়ারি পর্যন্ত কমপক্ষে ১৬২৯ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে এক লাখ ৬০ হাজার ৪৩ জন। বিশ্বের অনেক স্থানেই এমন আক্রান্তের সংখ্যা পাওয়া যায়। কিন্তু ইসরাইলের সামরিক দখলদার, বর্ণবাদী রাষ্ট্র দ্বারা গাজা অবরুদ্ধ হয়ে থাকার কারণে সেখানে এই সঙ্কট জটিল আকার ধারণ করেছে। আরো ভয়াবহ খবর হলো, গত বছরের শুরু থেকে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন এলাকায় দখলদারিত্ব বিষয়ক অভিযান শুরু করেছে ইসরাইল। সেসব এলাকায় তারা অব্যাহতভাবে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার নামে দমন পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনি অধিকার বিষয়ক গ্রুপ আল হক-এর মতে, ২০২০ সালের মার্চ নাগাদ বেশ কিছু ফিল্ড ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। জর্ডান উপত্যকায় খিরবেত ইবজিক থেকে মেডিকেল পরীক্ষার সরঞ্জাম কেড়ে নিয়েছে। পশ্চিম তীরে এমনটা করা হলেও একই ধারা চলে পূর্ব জেরুজালেম, হেব্রন এবং অন্য এলাকাগুলোতেও। তাদের এমন কর্মকান্ডের কোনো আইনি অথবা নৈতিক যথার্থতা নেই। ১৯৪৯ সালের দ্য ফোর্থ জেনেভা কনভেনশনে বলা হয়েছে, দখলদার বাহিনীর দায়িত্ব রয়েছে মেডিকেল ও হাসপাতালগুলোতে সেবা নিশ্চিত করা ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা। এমনকি অসলো একর্ডে উভয় পক্ষকে মহামারি মোকাবিলায় একে অন্যকে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। জরুরি অবস্থার সময়ে এক দেশকে অন্যদেশের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
ইসরাইলের সাবেক রাষ্ট্রদূত অ্যালান বেকার নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ইসরাইলের ওপর ফিলিস্তিনিদের টিকা সরবরাহে সহায়তা করার বিধান আছে। কিন্তু তার আগে ২০১৪ সালের যুদ্ধের সময় ও পরে গাজা এলাকা থেকে যেসব ইসরাইলি সেনাকে আটক করেছে ফিলিস্তিন তাদেরকে আগে মুক্তি দিতে হবে। কিন্তু তার এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ইসরাইলের কাছে নারী, পুরুষ, শিশু সহ কমপক্ষে ৫ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি আছেন। এর মধ্যে কয়েক শত আছেন, যাদেরকে বিচার বা যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই আটকে রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে গাজায় যেসব সেনাকে আটক করা হয়েছে তাদেরকে দর কষাকষির একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ফিলিস্তিন। তারা দাবি করছে গাজা উপত্যকা থেকে কঠোর বিধিনিষেধ তুলে নিতে হবে।

তথ‌্যসুত্র: https://mzamin.com/article.php?mzamin=258442#.X_3gbIoRGWA.link

Facebook Comments Box