পশ্চিমাদের চরম বৈষম্য ও দ্বৈতনীতি!
ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে শরণার্থী গ্রহণে পশ্চিমাদের চরম বৈষম্য ও দ্বৈতনীতির চরম বহিঃপ্রকাশ ঘঠেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের সময় যতই গড়াচ্ছে বিশ্ব মিডিয়ায় এর চিত্র ততই প্রকট হয়ে উঠছে।
পশ্চিমা মিডিয়াগুলো ইউক্রেনের শরণার্থীদের যেভাবে দেখছে, তাদের সাথে যে ভাষায় কথা বলছে, সেটির মাধমে ইউরোপিয়দের ভেতরকার কদর্য বর্ণবাদী চেহারা বেরিয়ে এসেছে। সিরিয়ান মুসলিম ও ইউক্রেনিয়ান খ্রীষ্টান শরণার্থীদের পশ্চিমারা কখনো এক চোখে দেখে না এটাই পরিলক্ষিত হচ্ছে এখন। কারণ সিরিয়ান শরণার্থীরা বাদামী চামড়ার, অ-ইউরোপীয় ও মুসলিম। এর জনই মুসলিম শরণার্থীরা ইউরোপীয়ানদের কাছে অবহেলিত।
পক্ষান্তরে ইউক্রেনের শরণার্থীরা আরব শরণার্থীদের চেয়ে আলাদা। কারণ, তারা সাদা চামড়ার মানুষ। তাদের চোখ নীল ও চুল সোনালি রঙের। ইইক্রেনের শরণার্থীরা সেক্যুলার । তাই ইউক্রেনের শরণার্থীদের জন্য ইউরোপের দরজা খুলে দিতে হবে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ইউক্রেনের শরণার্থীদের দুই বাহ বলে ফুল দিয়ে সাদরে গ্রহণ করছে কিন্তু সিরিয়া,ইরাক,লিবিয়া, আফগানিস্তানের শরণার্থীদের গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা যে আচরণ করেছে তাহা মানুষ পশুর সাথেও করে না।
ইউক্রেনের শরণার্থীদের গ্রহণের ক্ষেত্রে কার্যত ইউরোপ ও পশ্চিমা বিশ্ব প্রাধান্য দিচ্ছে ধর্ম, সাদা চামড়া,ভাষা তথা বর্ণবাদ সহ অনেক কিছুকে। মানুষ যেখানে প্রধান পরিচয় নয় তাদের কাছে। সিরিয়া ও ইরাক সহ মুসলিম দেশের লাখ লাখ মানুষ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস শত শত মাইল পথ হেটে, সমুদ্র পথ পাড়ি দিয়ে তারা ইউরোপের করুণা পায়নি। তাদের অনেককে দূর দূর করে তাড়িয়ে দ্য়ো হয়েছে। ছোট ছোটো ডিঙি নৌকা দিয়ে যখনা এই সব শরণার্থীরা বড় জাহাজে উঠার চেষ্টা করেছেন , তখন তাদের উঠতে দেওয়া হয়নি। পানিতে পড়ে, বরফে ডুবে তাদের অনেকে মারা গেছেন।ছোটো শিশুর লাশ সাগরে পানিতে ভেসে থাকতে দেখা গেছে।
কিন্তুু ইউক্রেনের শরণার্থীদের পোলান্ড সহ বিভিন্ন দেশের কর্তৃপক্ষ সীমান্তে অপেক্ষা করছে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য। সীমান্ত পারি দেবার সাথে সাথে তাদের জন্য খাদ্য ও উষ্ণ আশ্রয়রে ব্যবস্হা করছে ইইরোপের বিভিন্ন দেশ। কারণ, তাদের চামড়া সাদা ও ধর্ম খ্রীষ্টান। তাদের জন্য সীমান্তে প্রস্তুুত রাখা হয়েছে যানবাহন । খোলা হয়েছে বিভিন্ন তথ্য কেন্দ্র। এরপর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিরাপদ স্হানে।
ব্রিটেন ইউক্রেন শরণার্থীদের জন্য চালু করেছে ভিসা স্কীম কার্যক্রম। আয়ারল্যান্ড সরকার কয়েক হাজার ইউক্রেন শরণার্থীদের গ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছে। ইসরায়েল ইহুদী শরণার্থীদের বিমানে করে ইসরায়েলে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের নাগরিকত্ব দিয়ে স্হায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্হা করা হচ্ছে। অথচ লাখ লাখ আরব শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত খুলেনি ইউরোপ।
যারা বিভিন্ন উপায়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন তাদের চড়তে দ্য়ো হয়নি যানবাহনে। অনেককে গ্রেফতার নির্যাতন সহ করা হয়েছে নিষ্টুর নির্যাতন। পোলান্ড থেকে সিএনএন এর একজন সাংবাদিক লিখেছেন, ইউক্রেনের শরণার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে পাশ্ববর্তী সব দেশের সীমান্ত। সীমান্ত পার হলে তাদের কাছে বিনয়ের সাথে জানতে চাওয়া হচ্ছে, তোমাদের জন্য কি করতে পারি? উল্লেখ্য যে ২০১৫ সালে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টের রেল স্টেশনের কাছে কোনো রেষ্টুরেন্টে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি আরব শরণার্থীদের। তখন পশ্চিমা বিশ্বের অনেক মানুষ শরণার্থী বিরোধি স্লোগান দিয়েছিল।
পশ্চিমা সভ্যতার দাবীদার কিছু মানুষের কাছে যুদ্ধ এবং তার বহুমাত্রিক বর্বরতা কোনো সমস্যা নয় যদি সেটা হয় মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া বা আফ্রিকার মত অন্ধকারছন্ন জায়গায়। কিন্তুু যুদ্ধের শিকারী যদি হয় সাদা চামড়ার মানুষ, যাদের চোখ নীল, চুল সোনলি এবং আপাদমস্তক ইউরোপিয় হয়,তখন যুদ্ধ তাদের কাছে ভয়াবহ বর্বরতার প্রতিক হয়ে উঠে। আর তাদের সাহায্যে সবাই তখন এগিয়ে আসে। কিন্তুু উইঘুরের মুসলিম কিংবা কাশ্মিরে ভারতীয় আগ্রাসন নিয়ে কাউকে কথা বলতে দেখা যায় না। ১১ বছরের যুদ্ধে সিরিয়া ধ্বংস হয়ে গেছে। ৭০ বছর ধরে নিরীহ ফিলিস্তিনির উপর দখলদার ইসরায়েলির বর্বরতা নিয়ে পশ্চিমারা নিরব। সেখানে গণহত্যা হয়েছে, ফিলিস্তিনিরা ভূমি হারাচ্ছে কিন্তুু তাদের উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, এই সব বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের মনযোগ এত কম কেন? ইরাক ধ্বংসের কারিগরদের উপর কি কোনো নিষেধাজ্ঞা এসেছিল?
আসলে পশ্চিমারা সব সময় নিজেদেরকে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচয় দেবার চেষ্টা করে। তাদের কাজ হল, ভ্লাদিমির পুতিন ও তার মিত্রদের অমানবিক এজেন্ডার বিরোধিতা করা। তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত তৈরী করতে সব কিছু করা। এই কাজ করতে গিয়ে তারা হয়তো ভাবেন পারেন যে, ইতিহাসের সঠিক পক্ষে তারা অবস্হান করছেন।
কিন্তুু বাস্তবতা হলো বৈশ্বিক আদিপত্যবাদের কাঠামোর যে ধ্যান-ধারণা গড়ে উঠেছে, সেটা তাদের মত বর্ণবাদী অনুধাবনের মানুষেরা তৈরী করেছেন। আর এই কাঠামোর ভিতর দিয়ে শক্তিশালী হয়েছেন পুতিনের মত নেতারা।তাই আদিপত্যবাদের এই কঠিামো যতদিন না পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত কখনো রাশিয়া, কখনো ন্যাটো বা কখনো আমেরিকা ছোটো ছোটো দূর্বল দেশগুলোর উপর নানা অজুহাতে তাদের আগ্রাসন অব্যাহত রাখবে।
এস,এ,রব