রুহুল আমীন ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা শারমীন ব্যক্তিগত খরচে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও খোলা জায়গায় গাছ রোপণ করেনছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৯, ২০২০ সালে কোনো গাছ লাগায়নি। বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীরজাতীয় পুরস্কারের জন্য উপজেলাটির পক্ষ থেকে আবেদনও করা হয়নি। উপজেলা পর্যায়ের কমিটি থেকে পাঠানো সুপারিশেরতালিকাতেও উপজেলা পরিষদের নাম নেই। অথচ বৃক্ষরোপণে বিশেষ অবদান রাখায় জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছে হাটহাজারীউপজেলা পরিষদ।
হাটহাজারী উপজেলা কমিটি এ পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করেছিল মোহাম্মদ রুহুল আমীন ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা শারমীনেরনাম। এই দম্পতি ব্যক্তিগত খরচে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও খোলা জায়গায় গাছ রোপণ করেন এবং তা পরিচর্যার জন্য লোকনিয়োগ করেন। তাঁদের করা আবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তাঁরা ৪ একর জায়গাজুড়ে ২ হাজার ৬০০টি গাছ রোপণ করেন। প্রায়শতভাগ গাছকে চার থেকে সাত ফুট পর্যন্ত বড় করে তোলেন তাঁরা।
নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকেউপজেলা কমিটি ব্যক্তিপর্যায়ে বৃক্ষরোপণের জন্য ‘চ’ শ্রেণিতে আমীন ও শারমীনকে মনোনীত করে। অথচ গত ১১ মার্চ চট্টগ্রামেরজেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ‘গ’ শ্রেণিতে পুরস্কারেরজন্য লেখা হয় হাটহাজারী উপজেলার নাম।
গত ২৬ মে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ১০টি শ্রেণিতে ‘বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার–২০২০’–এরচূড়ান্তভাবে মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করে। হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ ‘গ’ শ্রেণিতে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে। তালিকায়রুহুল আমীন ও ফারজানা শারমীনের নাম নেই।
এমন পরিস্থিতিতে গত ২৮ মে রুহুল আমীন ও ফারজানা শারমীন তাঁদের আবেদন প্রত্যাহার করার জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়েরসচিব বরাবর আবেদন করেন। তাতে বলা হয়, আবেদন না করেও উপজেলা পরিষদ পুরস্কার পাচ্ছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালেউপজেলা পরিষদ বৃক্ষরোপণে কোনো অর্থ ব্যয় করেনি। তাঁদের ব্যক্তিগত উদ্যোগকে উপজেলা পরিষদের নামে চালিয়ে দেওয়াহচ্ছে। উপজেলা কমিটি মূল্যায়ন করে যেসব ছবি ও তথ্য উপাত্ত পাঠিয়েছে, সেগুলো তাঁদের ব্যক্তিগত কাজ।
সচিবের কাছে করা আবেদনে রুহুল আমীন ও ফারজানা শারমীন বলেন, ‘আমাদের বৃক্ষরোপণের কর্মকাণ্ড দেখিয়ে অন্য কাউকেপদক না দিতে অনুরোধ করছি।’ তবে এই আবেদনের পরও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আগামীকাল রোববাররাজধানীতে এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে পুরস্কার নিতে ঢাকায় এসেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল আলম। তিনি চট্টগ্রামউত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় বৃক্ষরোপণের জাতীয়পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে, বিষয়টি জানা নেই বলে রাশেদুল আলম প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।
রুহুল ও ফারজানার আবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তাঁরা ৪ একর জায়গাজুড়ে ২ হাজার ৬০০টি গাছ রোপণ করেছেনছবি: সংগৃহীত
রাশেদুল আলম বলেন, ‘আমি কোনো গাছ লাগাইনি, মালি দিয়ে পরিচর্যাও করাইনি। ২৬ মে হঠাৎ পুরস্কারের বিষয়ে ফোন পাই।আমি কোনো আবেদন করিনি। পুরস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। আমি এটার সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত নই। পুরস্কার কারওব্যক্তি নামে দেওয়া হচ্ছে না, উপজেলা পরিষদ পাচ্ছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিষয়টিকে ভিন্ন খাতেনেওয়ার চেষ্টা করছে।
পুরস্কার মূল্যায়ন কমিটিতে আবেদন না করেও পুরস্কার পাওয়ার বিষয়ে কথা বলতে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনাআহমেদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তিনি বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার মূল্যায়নকমিটির সদস্য। প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার প্রদানের নীতিমালা অনুযায়ী পুরস্কার মূল্যায়ন কমিটির সদস্যসচিব হবেন পরিবেশমন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন)। তবে যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) শামীমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মূল্যায়ন কার্যক্রমেরসঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না।
প্রথম আলো