আয়ারল্যান্ডে অ্যান্টি ইমিগ্র্যান্টের সংখ্যা বেড়েই চলছে। কিন্তু অ্যান্টি ইমিগ্র্যান্টরা কি জানেনা প্রচুর সংখ্যক আইরিশ যে অন্যান্য দেশে বৃহদাকারে অভিবাসী এবং অতীতে অভিবাসন সুবিধা পেয়েছিল?
আপনি কী জানেন, ১৮০০ শতক থেকে ৬ মিলিয়নেরও অধিক আইরিশ আমেরিকাতে অভিবাসী হিসেবে গমন করে, যা আয়ারল্যান্ডে বর্তমান জনসংখ্যা থেকেও অধিক। বর্তমানে সেই ৬ মিলিয়ন অভিবাসীর বংশবৃদ্ধি হয়ে ৩৬ মিলিয়ন হয়েছে। যদি সেই ৬ মিলিয়ন মানুষ আয়ারল্যান্ডে থাকতো তাহলে বর্তমান ৫ মিলিয়ন এবং ৩৬ মিলিয়ন মিলে আয়ারল্যান্ডের জনসংখ্যা ৪০ মিলিয়ন হওয়ার কথা ছিল।
এ তো গেল শুধু আমেরিকাতে অভিবাসন করা জনসংখ্যা, এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও আইরিশরা গমন করে থাকে। সমগ্র পৃথিবীর আইরিশ অভিবাসী বংশধরসহ হিসেব করলে 80 মিলিয়নের অধিক হবে বর্তমানে। বর্তমান প্রজন্মের মাঝেও অভিবাসন করার জোঁক অত্যন্ত প্রবল। শিক্ষা জীবন শেষ করার সাথে সাথে বহু তরুণ তরুণী অন্যান্য দেশে চাকুরি ও স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে আয়ারল্যান্ড ত্যাগ করে।
বিপুল সংখ্যক মানুষ বিভিন্ন দেশে স্থায়ী হওয়া ও অভিবাসনের সুবিধা নেয়া আইরিশগণ, বিশেষ করে যারা অ্যান্টি ইমিগ্র্যান্ট ধারণা নিয়ে আছেন তারা কেন অভিবাসীদের প্রতি ঘৃণামূলক মনোভাব নিয়ে আছেন তা বোধগম্য নয়।
১৮৪৫ সাল থেকে ১০ বছর আয়ারল্যান্ডে বড়ো ধরণের মহামারী হয়েছিল, যা ‘দ্য গ্রেট ফেমিন’ নামে পরিচিত। সে সময় জীবন রক্ষার্থে বিপুল সংখ্যক আইরিশ (প্রায় ২ মিলিয়ন) আমেরিকাতে অভিবাসী হয়ে চলে যায়। যার ফলে বহু আইরিশের জীবন রক্ষা পায়। সে সময় প্রায় ১ মিলিয়ন আইরিশ মৃত্যুবরণ করে। ধারণা করা হয় দেশত্যাগ না করলে আরো বহু মানুষের প্রাণহানি হতো।
ঠিক উপরের ঘটনার মতোই জীবন রক্ষার্থে ও বিপদে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ আয়ারল্যান্ডে গমন করে। বিশেষ করে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ থেকে, রাজনৈতিক অস্থির অঞ্চল থেকে ইত্যাদি।
উচ্চশিক্ষা, চাকুরি ও উন্নত জীবনমানের জন্য বর্তমানেও আইরিশরা যেমন অন্যান্য দেশে গমন করে থাকে। ঠিক তেমনি অন্যান্য দেশ থেকেও একই উদ্দেশ্যে মানুষ আয়ারল্যান্ডে গমন করে।
আয়ারল্যান্ড কি অভিবাসনবান্ধব দেশ?
হ্যাঁ আয়ারল্যান্ড নিঃসন্দেহে একটি অভিবাসনবান্ধব দেশ। আয়ারল্যান্ড তাদের অতীত স্মৃতি এখনো স্মরণ করে থাকে, যে তারাও একসময় প্রয়োজনে অভিবাসী হয়ে দেশান্তর হতে হয়েছে। যার সুফল লক্ষ লক্ষ আইরিশ ভোগ করেছে। বর্তমানেও করে থাকে।
সেসব বিবেচনায় ও মানবিক দিক থেকে আয়ারল্যান্ড অভিবাসনের দিক দিয়ে যথেষ্ট পজিটিভ মনোভাব পোষণ করে। আমরা দেখেছি ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্থান যুদ্ধে অনেক যুদ্ধবিধ্বস্তদেরকে সাদরে বরণ করে নিতে। সম্প্রতি দেখেছি ইউক্রেনের অধিবাসীদেরকে কীভাবে সাহায্য করেছে আয়ারল্যান্ড। এছাড়াও দেখেছি বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক ও অন্যান্য কারণে বিপদগ্রস্থদেরকে কীভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আয়ারল্যান্ডের জনগণও অভিবাসীদের প্রতি যথেষ্ট উদার। তাঁরা উদার ও সহযোগিতামূলক মনোভাবের না হলে অভিবাসীগণ নির্বিগ্নে এখানে চাকুরি, ব্যবসা, বাচ্চাদেরকে সুশিক্ষা ও সুন্দরভাবে বসবাস করতে কষ্টসাধ্য হয়ে যেতো।
তাহলে সমস্যা কোথায়?
আয়ারল্যান্ডের ক্ষুদ্র একটি অংশ, যারা হয়তো কখনোই অন্য দেশের মানুষকে তাদের নিজের ভূখণ্ডে বিচরণ করতে দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তারা হয়তো মনে করে অন্য দেশের জনগণ এসে তাদের ভূখণ্ডে ঝঞ্জাট তৈরি করতেছে। কিন্তু এমন মনভাবাপন্ন মানুষ নিতান্তই নগণ্য।
এ কাতারে হয়তো আরো কিছু যোগ হচ্ছে সম্প্রতি আবাসান সংকটের কারণে। আয়ারল্যান্ডে বর্তমানে আবাসন সংকট চরম আকারে ধারণ করতেছে। তাদের ধারণা অন্যান্য দেশ থেকে আগত অভিবাসীদের কারণেই এমন সংকট তৈরি হচ্ছে। যার কারণে অরিজিনাল আইরিশ যারা তাদেরই বাসা পেতে সমস্যা হচ্ছে এবং উচ্চমূল্যে বাসা ভাড়া দিয়ে থাকতে হচ্ছে। এ সংকটের কারণেও অ্যান্টি ইমিগ্রেন্টের সংখ্যা বাড়তেছে।
বাসা ছাড়াও স্কুল ও হাসপাতালগুলোতে সীমিত ব্যবস্থা, অভিবাসীদের সোশ্যাল বেনিফিটের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়াও অ্যান্টি ইমিগ্র্যান্ট সেন্টিমেন্টের আরো কিছু কারণ।
তারপরেও অ্যান্টি ইমিগ্র্যান্টদের বোঝা উচিত এ সমস্যাগুলো হয়তো ক্ষণস্থায়ী। আইরিশ সরকার যথেষ্ট চেষ্টা করতেছে সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের। এবং তা সবাইকে নিয়েই। আইরিশ সরকার অভিবাসীদেরকে যেমন গুরুত্বসহকারে দেখতেছে, যারা অ্যান্টি ইমিগ্রেন্ট তাদেরও একই মানসিকতা থাকা উচিত, যে সুবিধা আয়ারল্যান্ড অতীতে পেয়ে এসেছে।
কোভিড, ব্রেক্সিট এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে একটার পর একটা লেগেই ছিল। সুতরাং এ অবস্থা উত্তরণে একটু সময় তো লাগবেই। আশা করি সে সমস্যা দ্রুতই কেটে উঠবে।
অভিবাসীদের যেমন আয়ারল্যান্ডে থাকা প্রয়োজন তেমনি আয়ারল্যান্ডেরও অভিবাসীদেরকে প্রয়োজন। আশা করি অ্যান্টি ইমিগ্র্যান্ট আইরিশরা তাদের অতীত স্মৃতি রোমন্থন করে হলেও অভিবাসীদের প্রতি সদয় হয়, এ বিনীত অনুরোধ থাকবে আমাদের সকল অভিবাসীর।
ওমর এফ নিউটন
বার্তা সম্পাদক
আইরিশ বাংলা টাইমস