আয়ারল্যান্ডে করোনার এক বছর পূর্তি

0
755

গত বছর আজকের দিন পর্যন্ত সব ছিল স্বাভাবিক। মানুষের জীবন যাত্রা ছিল উচ্ছল, চঞ্চল ও আনন্দমূখর। স্বাভাবিকের মতই সবাই উইকেন্ড পালনের জন্য উদগ্রীব ছিল, শীতকে বিদায় জানিয়ে বসন্তকে বরণ করতে উচ্ছ্বসিত ছিল। কিন্তু মুহূর্তেই ভাটা পড়ে গেল সব আনন্দ, পরিকল্পনা ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়।

সেই থেকে এক বছর গত হয়ে গেল। এই এক বছরের ব্যবধানে আয়ারল্যান্ড সাক্ষ্য হল ৪,০০০ এর অধিক জীবনের পরলোকগত হওয়া এবং ২০০,০০০ এরও বেশী করোনা রোগীর।

প্রথম করোনা সনাক্তকরণ 

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয় আয়ারল্যান্ডে। এর আগের দিন পর্যন্ত ইতালি ও চায়নার করোনার মহামারির খবরই শুধু শুনে আসছিল আইরিশরা, কিন্তু ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখে তার প্রত্যক্ষদর্শী হল।

প্রথম কোভিড কেইস উত্তর ইতালি থেকে ভ্রমণ করে এসেছে। সেই সময় প্রধান মেডিকেল অফিসার ডাঃ টনি হলোহান বলেছিলেন, ‘’চিকিৎসা প্রদান আমাদের জন্য অস্বাভাবিক ছিলনা, আমরা গত কয়েক সপ্তাহ থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম’’।

প্রথম লকডাউন

এক বছর আগেও লকডাউন ছিল বিদেশী ধারণা, আর এখন তা হয়ে দাঁড়িয়েছে দৈনন্দিন জীবনেরই অংশ।

মার্চ এর ১২ তারিখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাদকার প্রথম চলাচলে কঠোরতা আনার নির্দেশ দেন। কিন্তু করোনার ঊর্ধ্বমুখী মনোভাবে ২৭ মার্চে পরিপূর্ণ লকডাউনের ঘোষণা দেন। সেই যে শুরু, বছর গড়িয়ে গেলেও আজও লকডাউনের খড়গ থেকে মুক্তি মেলেনি।

লিও ভারাদকারের প্রথম ঘোষণা ওয়াশিংটন থেকে

গত বছর এই দিনেও সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছিল সেইন্ট পাট্রিক ডের জন্য। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে মার্চের ৯ তারিখে তা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে সরকার।

প্রায় ৫০,০০০ দর্শক উত্তেজনায় কাঁপতেছিল আয়ারল্যান্ড বনাম ইটালির রাগবি ম্যাচ উপভোগ করবে বলে। এর পর অনেক তর্ক বিতর্কের মাঝে ৭ মার্চের ম্যাচটি ২৬ ফেব্রুয়ারিতে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়। এর ঠিক তিনদিন পরেই ধরা পড়ে প্রথম করোনা রোগী।

ইতালি বনাম আয়ারল্যান্ডের রাগবি ম্যাচ বাতিল ঘোষণা

প্রথম কোভিড কেইস ধরা পড়ার পর উত্তর ডাবলিনের স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর পর ১২ মার্চে আয়ারল্যান্ডের সব স্কুল ২৯ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এরপর তা বর্ধিত করে সেপ্টেম্বর এর আগ পর্যন্ত না খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ভ্যাকসিনের আগমন

এক বছর আগেও ভ্যাকসিন ছিল অন্য গ্রহের বস্তু। করোনার আগে সবচেয়ে দ্রুততম ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও ব্যবহার যোগ্য হতে সময় নেয় ৫ বছর। কিন্তু এক বছরের ব্যাবধানে অন্যান্য দেশের সাথে আয়ারল্যান্ডও করোনার ভ্যাকসিন পেতে সমর্থ হয়।

ভ্যাকসিন, এক বছর আগেও যা ছিলনা, এক বছর পর অন্তত এই একটা জীবন রক্ষাকারী বস্তু এখন হাতের নাগালে।

৭৯ বছর বয়স্কা অ্যানি, আয়ারল্যান্ডের প্রথম ভ্যাকসিন গ্রহণকারী

এক বছর আগের এই সময়ে সমগ্র জাতির অন্ধকার সুড়ঙ্গে প্রবেশ, যেখানে ছিলনা ছিটেফোঁটা আলোর নাগাল। আজ এক বছর পরে এসেও সেই সুড়ঙ্গের মাঝেই পড়ে থাকা। কিন্তু পার্থক্য হল এখন মিটিমিটি আলোর দেখা পাওয়া যাচ্ছে, যা এক বছর আগের এই দিনেও ছিলনা।

আশার আলো আজ দ্বারপ্রান্তে।

আলো আসবেই
Facebook Comments Box