আবাই এর ওয়েব সাইট কি জনগণের প্রত্যাশা মিটাতে সক্ষম হয়েছে?

0
894

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

আয়ারল্যান্ডে বসবাস কারী নতুন জেনারেশনের প্রত্যাশা ছিল আবাই এর প্রতিনিধি নির্বাচন করতে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। কিন্তু হাউজে নির্বাচন কমিশন ও উপদেষ্টা কমিটির প্রস্তাবে প্রথমেই এই ব্যাবস্থা বাদ পড়ে যায়। কারন হিসেবে খরচ ও নিরাপত্তা ঝুঁকি প্রধান হলেও কারো কাছে মনে হয়েছে অনলাইনে নির্বাচন হয়ে গেলে ভোটের যে আমেজ তা সকলেই উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হবে। প্রস্তাব আসে তাহলে অনলাইনে ভোটার নিবন্ধন ও ডাটা কালেকশন করা হোক। এর প্রেক্ষিতে তারা একটি ওয়েব সাইট তৈরি করেন। হয়ত তারা চেয়ে ছিলো কিছুটা হলেও নতুন জেনারেশনের আকাংখা বাস্তবায়িত  হোক।

খবর নিয়ে জানা গেছে এই ওয়েব সাইট তৈরীতে খরচ হয়েছে ১৫০০ ইউরো।  সময় লেগেছে প্রায় দুই মাস। একটি আইরিশ কোম্পানির মাধ্যমে ওয়েব সাইট টি বানানো হয়েছে। অফিসিয়ালি জানা গেছে এর প্রধান দায়িত্বে আছেন মীর মামুন। নির্বাচন কমিশন ও উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি সরারসরি তাদের তত্ত্বাবধানে ও সহযোগিতায় এই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

আবাই এর অফিসিয়াল ওয়েব সাইটের নাম www.abai.ie যেখান থেকে ভোটার রা তাদের নিবন্ধন করবে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ১৫ই জানুয়ারি এবং এই প্রক্রিয়া ৩১শে জানিয়ারি পর্যন্ত চলার কথা আছে। ওয়েব সাইটের মাধ্যমে নিবন্ধন করায় বিভিন্ন মহলে একটি গঠন মূলক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে শুনা যাচ্ছে। বিভিন্ন জন আবাই এর ফেইসবুক পেইজে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ এর সিকিউরিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, কেউ কেউ এর কোয়ালিটি আবার কেউ কেউ এতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফিচার না থাকায় প্রশ্ন তুলেছেন। আসুন আমরা জনমতের উপর অনুসন্ধান করে দেখি তাদের আশংকা বা অভিযোগ কতটুকু বাস্তব সম্মত।

প্রথম আশংকা বা অভিযোগ, সিকিউরিটঃ

বর্তমান জমানাকে বলা হয় অসম্ভবের সম্ভব। এই জমানায় এমন কাজ নেই যা অসম্ভব বলে বিবেচনা করা যায়। বিশেষ করে ইন্টারনেট ব্যাবহারে। মার্কিন ইলেকশনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ হয়েছে বলে কেউ কেউ ধারনা করে। যদি সেটা সত্য হয় অভিযোগ অনুযায়ী ম্যানুপুলেশন, ডেমোক্রেটদের সার্ভার হ্যাক অন্যত কারন। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার হ্যাকের মত ইতিহাসের অন্যতম একটি তাৎপর্যপূর্ণ একটি হ্যাক । নিঃসন্দেহে এগুলোর সিকিউরিটির ব্যাপারে আমাদের সকলেরই ধারনা আছে। এরকম উচ্চমাত্রার নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও হ্যাক হয়েছে। তাহলে কি এগুলোর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা দুর্বল ছিল? সন্দেহাতীত ভাবে নাকচ হয়ে যায়। মাঝে মাঝেই আমরা শুনি বিভিন্ন বড় বড় টেক জায়ান্টের ওয়েব সাইটও হ্যাক হয়ে যায়। হ্যাক করা একটি অপরাধ। কাউকে দোষী হিসেবে প্রমাণ করা গেলে অবশ্যই সে শাস্তির মুখোমুখি হবে।

দ্বিতীয়ত, কোয়ালিটিঃ

ওয়েব সাইটে কিছু ফিচার আছে ও কিছু থিম সম্পর্কিত টেক্সট রয়ে গেছে যেগুলো না সরানো পর্যন্ত ওয়েব সাইটিটি আন্ডার কন্সট্রাকশন মনে হচ্ছে। এর ফেইসবুক পেইজ বা গুগল পেইজের লিংক দেওয়া থাকলেও সেটির সংযোগ দেওয়া হয়নি। সাইটটিতে রেজিস্ট্রেশন করলে সাথে সাথে কোন ইমেইল আসেনা যতক্ষণ পর্যন্ত না এপ্রুভ করা হয় সেটিকে। এপ্রুভ করার পর ইউজারের ইমেইলে একটি পাসওয়ার্ড আসে যেটার কোন ব্যাবহার নাই বা আদৌ ব্যাবহার হবে কিনা সন্দেহ আছে। তাছাড়া এই পাসওয়ার্ডটি আটো ক্রিয়েটেড যা পরিবর্তন করার কোন ব্যাবস্থা রাখা হয় নাই। এই ধরনের পাসওয়ার্ড কারো পক্ষে সহজে মনে রাখা অসম্ভব। তাছাড়া লগইন করার পর তিনটা তিন রঙয়ের টেক্সট দেখা যায়, যার কোন ব্যাবহার নাই এবং তা দেখে মনে হয় সাইটি টি সঠক ভাবে কাজ করছে না। এগুলো ছাড়া সাইটটি ব্যাবহারে জন্য সহজ রাখা হয়েছে যাতে এটির ব্যাবহারকারী গণ বেশি একটা কষ্টের সম্মুখীন না হন এবং স্বল্প সময়ে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেন।

তৃতীয়ত, পর্যাপ্ত ডাটা নাকি নামকা ওয়াস্তে ডাটাবেইজঃ

ওয়েব সাইটটিকে সিম্পল রাখতে গিয়ে মাত্র ৬টা ফিল্ড সম্পন্ন ফর্ম তৈরী করা হয়েছে। ফিল্ডগুলো যথাক্রমে নাম, ফোন নাম্বার, ইমেইল এড্রেস, কাউন্টি, এড্রেস, সন্তান সংখ্যা। এখানে স্বামী স্ত্রী আলাদা রেজিস্ট্রেশন হওয়ায় কোন ভাবে বুঝার উপায় থাকার কথা না কে কার স্বামী বা স্ত্রী। তাছাড়া অনেকেই সন্তানের সংখ্যা উল্লেখ নিয়ে একটু দ্বিধায় পড়েছেন যে স্বামী ও স্ত্রী দুই জনই এটা উল্ল্যেখ করবে নাকি এক জন। দায়িত্বপ্রাপ্তরা কয়ে কবার আবাইয়ের অফিসিয়াল ফেইসবুক একাউন্টে এটা উল্ল্যেখ করলেও অনেকেই বুঝতে সক্ষম হচ্ছে না। কেউ কেউ মনে করছে যে টাকা দিয়ে এই সাইট তৈরী করা হয়েছে তা দিয়ে একটি কম্প্রিহেন্সিভ ওয়েবসাইট তৈরী করা যেত যার একই রেজিস্ট্রেশন ফরমে থাকতে পারতো স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানের সংখ্যার সাথে সাথে প্রত্যেকটি সন্তানের নাম, বয়স, জেন্ডার। তাছাড়া স্বামী ও স্ত্রীর জব সেক্টর যার মাধ্যমে আমরা এক সাথে জানতে পারতাম আমাদের এই দেশে কয় জন বাংলাদেশী কোন কোন সেক্টরে কাজ করে। এতে পরবর্তী নির্বাচিত কমিটির জন্য সহজ হত কমিউনিটির পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কি কাজ করা যেতে পারে সে লক্ষে কাজ করা। অথবা আমাদের বাচ্চারা বিভিন্ন বছর কত জন বিভিন্ন পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আসছে। তাঁদেরকে নিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করা যেত যদি বয়স গ্রুপ নির্ণয় করা যেত।  এছাড়া জগণের হয়তো আর কিছু আগ্রহ তৈরি করা যেত যদি এই রকম কিছু করা সম্ভব হত।

খবর নিয়ে আমরা জানতে পারি নির্বাচন কমিশন চেয়েছে একটা সহজ সরল ওয়েব সাইট তৈরি হোক যার মাধ্যমে সহজেই নিবন্ধন কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব এবং স্বল্প সময়ে রেজিস্ট্রেশন করা যায়। সে হিসেবে তারা এই ওয়েব সাইটিকে হয়েছে যথাযথ বলে মন্তব্য করেছেন।

Facebook Comments Box

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here