হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায়

0
533

খুব হরহামেশাই দেখি অনেকের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাাকাউন্ট হ্যাক হতে। এমনকি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েও অনেকে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে দেখা যায়। আমার নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে এই লেখাটি। আমি কিভাবে আমার ফেইসবুকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল ও ফাইনান্সিয়াল অ্যাকাউন্টগুলা আমি রক্ষণাবেক্ষণ করি তার কিছু বর্ণনা আমি দিব যাতে করে অন্যরা হ্যাকিং থেকে রক্ষা পায়। লেখাটা সম্পূর্ণ পড়ুন।

নিয়ম মেনেই যে আমি উপকৃত হয়েছি বা হচ্ছি তা শুধুই নয়, আমি যেহেতু ফাইনান্সিয়াল অর্গানাইজেশনে কাজ করি তাই আমাদেরকে স্পেশালই ট্রেইন করা হয় সিকিউরিটি থ্রেট হতে কিভাবে রক্ষা পেতে হয়ে। আমার উভয় অভিজ্ঞতার আলোকেই এই লেখা।

অ্যাকাউন্ট হ্যাকের হ্যাকারদের একটি অতি সহজ মাধ্যম হচ্ছে পাসওয়ার্ড। আমরা এত সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করি যা হ্যাকারদের সেকেন্ডের ব্যাপার আকাউন্ট হ্যাক করতে। অনেকে ফোন নাম্বার, নিজের নাম, জামাই কিংবা বউ এর নাম, বাচ্চার নাম, জন্ম তারিখ নিজ এলাকার নাম, প্রিয় দলের নাম ইত্যাদি নামে পাসওয়ার্ড দিয়ে থাকেন। যেটা কারো অ্যাকাউন্টে ঢুকতে হ্যাকার হওয়া লাগেনা। আন্দাজ করে কয়েকবার চেষ্টা করলেই যে কেউ যে কারো অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারে।

পাসওয়ার্ড কিভাবে সেট করবেন?
একজন হ্যাকারের এভারেজ দুই সেকেন্ড লাগে একটি অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে যদি পাসওয়ার্ড শুধু নাম্বার অথবা শুধু অক্ষর দিয়ে সেট করা হয়। যদি পাসওয়ার্ডে আপার এবং লোয়ার কেইস অক্ষর (বড় ও ছোট হাতের অক্ষর) দিয়ে সাত ক্যারেক্টার এর পাসওয়ার্ড দেন তাহলে হ্যাকারের লাগবে ১ মিনিট তা ব্রেক করতে আর যদি তা ১১ ক্যারেক্টার এর হয় তাহলে ৫ মাস লাগবে, কিন্তু এর সাথে যদি জাস্ট মিক্স নাম্বার ও অক্ষর দিয়ে সেট করেন তাহলে হ্যাকারের তিন বছর লাগবে তা ব্রেক করতে এবং সাথে যদি একটি স্পেশাল ক্যারেক্টার (@#.$) যোগ করেন তাহলে হ্যাকারের ৩৪ বছর লাগবে সে পাসওয়ার্ড ব্রেক করতে। এরপর যত বড় পাসওয়ার্ড হবে তত বেশি সময় লাগবে হ্যাকারের হ্যাক করতে।

মোট কথা হচ্ছে আপনার পাসওয়ার্ড অন্তত ৭ থেকে ১১ ক্যারেক্টারের রাখবেন এবং পাসওয়ার্ডটি হবে লেটার, নাম্বার ও স্পেশাল ক্যারেক্টারের সংমিশ্রণে। অন্তত একটি লেটার আপার কেইস বা বড় হাতের রাখবেন। তাহলে অন্তত পাসওয়ার্ড দিয়ে হ্যাকারের হ্যাক করার সম্ভাবনা কমবে।

অন্য যেভাবে হ্যাক হয়
অপ্রয়োজনীয় লিঙ্কে ক্লিক করাঃ আমরা বিভিন্ন সময় ফেইসবুকে, হোয়াটসঅ্যাপে, ইমোতে বিভিন্ন লিঙ্কে হরহামেশা ক্লিক করে থাকি। জেনে, না জেনে ও কৌতহলে আমরা তা করে থাকি। বিভিন্ন অফার, বিজ্ঞাপণ, নর কিংবা নারীর ছবি সম্বলিত লিঙ্কে ক্লিক করতে আমাদের হাত নিশপিশ করে। কিন্তু আমরা জানিনা ওইসব লিঙ্ককেই থাকে হ্যাকারের ফাঁদ। আপনি ঐ লিঙ্ক গুলাতে ক্লিক করা মাত্রই আপনি হ্যাকারকে আপনার ডিভাইসের প্রিভিলিজ দিয়ে দিচ্ছেন। আপনার সার্ভারে ঢুকে প্রয়োজনীয় তত্ত্ব নিমিষেই নিজের করে নিতে সক্ষম। সুতরাং ওইসব লিঙ্কে ক্লিক করা ও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।

অনেক সময় বিভিন্ন গেম, প্রশ্ন, রাশি, আপনি মানুষ কেমন, আপনার চরিত্র কেমন এসব বিষয়ক লিঙ্ক আমরা দেখতে পাই। আমি অনেক বুঝ জ্ঞান সম্পন্ন মানুষকেও ওইসবে আসক্ত হতে দেখি। বিষয়গুলা মজার হলেও এসবেই লুকায়িত থাকে হ্যাকিং এর ফাঁদ।

অনেকসময় রেভিনিউ, ব্যাংক, ডেলিভার, ফোন কোম্পানি ইত্যাদির নাম করে ইমেইল কিংবা মেসেঞ্জারে লিঙ্ক পাঠানো হয়। ভালো করে ভ্যারিফাই না করে লিঙ্কে ক্লিক করবেন না। করলেও কোন তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকবেন। সন্দেহ হলে ঐ নিদৃস্ট কোম্পানিতে কল দিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিবেন। আমরা অনেকেই লিঙ্কে তো ক্লিক করিই সাথে সাথে যদি কোন ডিটেইলস চায় তাহলে নাম, জন্ম তারিখ, পাসওয়ার্ডসহ দিয়ে দেই; তার মানে হচ্ছে আমরা হ্যাকারকে স্বইচ্ছায় তথ্য প্রদান করে বলতেছি যাও যা ইনফরমেশন লাগে নাও আর যা টাকাপয়সা লাগে আমার ব্যাংক থেকে নিয়ে নাও।

আপনি যদি এই সিম্পল বিষয়গুলো অনুসরণ না করেন তাহলে আপনাকে হ্যাক করা কোন হ্যাকারের পক্ষেই অসম্ভব হবে না।

আরো কিছু পরামর্শ
– কারো সাথে পাসওয়ার্ড শেয়ার করবেন না, পাবলিক প্লেসে পাসওয়ার্ড দেয়ার সময় সতর্ক থাকবেন
– পাসওয়ার্ড কোথাও লিখে না রাখাই উত্তম, আর রাখলেও খুব গোপনীয়তা অবলম্বন করবেন
– ভিন্ন অ্যাকাউন্ট এর জন্য ভিন্ন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা
– সহজে অনুমান করা যায় এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করা
– Two factor authentication সেট আপ করা, যেমন অ্যাকাউন্ট এ ফোন নাম্বার ও ইমেইল লিঙ্ক করা যাতে লগইনের সময় ভ্যারিফাই করা যায়
– পাবলিক কম্পিউটার বা অন্য কারো মোবাইল কিংবা কম্পিউটার থেকে কোন অ্যাাকাউন্টে লগইন করলে লগ আউট করতে ভুলবেন না। কোন অবস্থাতেই ব্রাউজারে যেন পাসওয়ার্ড সেইভ না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখবেন।
– পাবলিক কম্পিউটার (লাইব্রেরি, ইন্টারনেট ক্যাফে, অন্য কারো) ব্যবহার করলে ব্রাউজার হিস্টরি ডিলেট করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
– সব সময় রুল অব থাম্ব অনুসরণ করবেন। রুল অব থাম্ব হচ্ছে স্ট্রং পাসওয়ার্ড ব্যাবহার করা, অপ্রয়োজনীয় লিঙ্কে ক্লিক না করা।

আমার ফেইসবুক অ্যাাকাউন্ট ইমেইল কিংবা অন্যান্য অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয় নাই সত্য, কিন্তু যে কখনো হবেনা তা কিন্তু নয়। কথায় আছে risks are not avoidable, but minimiable. তারপরেও সতর্কতা অবলম্বন করতে তো ক্ষতি নেই। আপনি রিস্কের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিতে পারেন না, কিন্তু রিস্কের সম্ভাবনাকে কমিয়ে আনতে পারেন। খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান হলে হ্যাকাররা বিভিন্নভাবেই চেষ্টা করে, কিন্তু আপনার আমার ক্ষেত্রে হ্যাকাররা বেশি খুব সময় ব্যায় করবে না হ্যাক করতে। জাস্ট নিয়মগুলো মেনে চলুন, তাহলেই হবে।

ওমর এফ নিউটন
আইরিশ বাংলা টাইমস

Facebook Comments Box