
কবির আহমদ
বাংলাদেশে বন্যার ভয়াবহতা আমাদের কারো অজানা নয় । বন্যার ভয়াবহতার কথা চলে আসলে , ৮৮ সালের বন্যার কথা আমরা উদাহরণ হিসেবে নিয়ে আসি । তখন হয়তো বাংলাদেশ এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার অর্থনৈতিক সামর্থ্য , জনবল এবং প্রযুক্তি ছিল না । যে কারনে বন্যায় মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ছিল অনেক বেশী। কিন্তু কথা হচ্ছে ২০২২ সালে এসেও আমরা কি বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং মোকাবিলার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ?
এ মূহুর্তে সিলেটের ৮০ শতাংশ অঞ্চল বন্যার পানিতে ডুবে আছে । সংবাদে প্রকাশ সিলেটবাসী অতীতে কখনও এ ধরনের বন্যার কবলে পড়ে নি । বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে সিলেটের বন্যার ভয়াবহতা , জনদুর্ভোগ , ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার ,দুর্গত মানুষের নির্ঘুম রাত এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে সিলেটবাসী এক একটি কঠিন দিন অতিবাহিত করছেন ।
গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী সরকার এখন পর্যন্ত যে পরিমান ত্রাণ সরবরাহ করেছেন , এতে শুধু চার ভাগের এক ভাগ বন্যার্তদের জন্য যথেষ্ট । এই যদি অবস্থা হয় তাহলে বাকী তিন ভাগ মানুষের কি হবে ? কিন্তু আমরা তো সব সময় বলে আসছি , দেশ উন্নয়নের মহা সড়কে অবস্থান করছে । মাথাপিছু আয় , জাতীয় আয় অনেক গুন বৃদ্ধি পেয়েছে । আজ যখন দেশের একটা অঞ্চলের মানুষ পানি বন্দি হয়ে জীবনের সঙ্গে পান্জা লড়ছে , তখন কি আমরা উন্নয়নের প্রকৃত চিত্র দেখতে পাই ?
শুধু তাই নয় , মাঠ পর্যায়ে সংবাদ কর্মীদের তথ্য অনুযায়ী সরকারের মন্ত্রী , এম পি এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বন্যা প্লাবিত জনগণকে সরজমিনে পরিদর্শন বা পর্যবেক্ষন করতে আসেন নি বলে উল্লেখ করেন । দুর্গত জনগণ কি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে এতটুকুও আশা করতে পারেন না । জাতি হিসেবে এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে ?
বাতিঘরের মতো , অনেক ব্যক্তি এবং সংগঠন বন্যাতর্দের পাশে নিজেদের সাধ্যমত এসে দাড়িয়েছেন । এ ধরনের উদ্যোগ সত্যি আমাদের কে আশান্বিত করে এবং সবার সম্মিলিত প্রয়াসে দুর্যোগ মোকাবিলা করা অসম্ভব কিছু নয় । আশার কথা হচ্ছে ইউরোপ , আমেরিকা এবং মধ্যপ্রচ্যসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসীরাও সিলেটের বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন । ব্যক্তিগত বা বেসরকারি উদ্যোগে বন্যা দুর্গতদের জন্য যে সাহায্য আসবে , তা কিন্তু যথেষ্ট নয় । এক্ষেত্রে প্রয়োজন সরকারি সাহায্য । কারণ বন্যা পরবর্তী আক্রান্ত জনগণের পুনর্বাসন এবং অবকাঠামো উন্নয়ন হবে সরকারের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।তাৎক্ষণিক ভাবে সরকারের পক্ষে এ ধরনের দুর্যোগ মোকিবলা করা সহজ নয় , সেজন্য প্রয়োজন মহাপরিকল্পনা ।
বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশে তো আজ প্রথম নয় । প্রায় প্রতিবছরই কোন না কোন অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে ।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বন্যা প্রতিরোধ , মোকাবিলা এবং নিয়ন্ত্রনে আজোও কি আমরা জাতীয় ভাবে কোন পরিকল্পনা গ্রহন করেছি ? যদি থাকতো তাহলে আজ বন্যা মোকাবিলায় সরকারের অসাহায়ত্ব চোখে পড়ত না । উদাহরণ হিসেবে আমি হল্যান্ডের ডেল্টা প্রজেক্টকথা উল্লেখ করতে পারি । এটাকে ডাস ডেল্টাওয়ারকেন বলা হয়ে থাকে । এটি হল্যান্ডের একটি বিশাল বন্যা নিয়ন্ত্রন প্রকল্প ।১৯৫৩ সালে হল্যান্ডে একটি ভয়ংকর বন্যা হয়েছিল এবং বিপুল জানমালের ক্ষতি হয়েছিল । এই প্রেক্ষিতে সরকার ডেল্টা প্রজেক্টগ্রহন করেন এবং ১৯৮৬ সালে প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেন । যার সুফল এখনও তারা পাচ্ছেন । আমরা কেন ৮৮ সালের মহাপ্লাবনের পরে আজও এভাবে ভাবতে পারি না ?
পরিবেশবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করেন , দিন দিন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে । যে কারণে অতিবৃষ্টি , অনাবৃষ্টি , বন্যা , খরা এবং অনান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে । এর কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন , বন–জঙ্গলে অবাধে গাছ নিধন , পাহাড় নিধন , অপরিকল্পিত নগরায়ন , শিল্পায়ন , নদীর তল দেশে পলিথিন এবং পলিমাটি জমে নদীর নাব্যতা নষ্ট হওয়া এগুলির মধ্যে অন্যতম । অর্থাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি , মানবসৃষ্ট দুর্যোগও কোন অংশে কম নয় ।
কবির আহমদ
সাস্টিয়ান