লিও ভারদাকার কী শপথ নিতে পারবেন ? এস,এ,রব
জাতীয় নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্টতা না পাওয়ার কারণে সরকার গঠন নিয়ে আইরিশ রাজনীতিতে বিরাজ করছিল চরম অস্হিরতা। অপরদিকে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে আইরিশ কট্টরপন্থী জাতিয়তাবাদী দল সিন্ ফেইনের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসন লাভের মধ্য দিয়ে দলটির উত্থান নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছিল দেশের বড় দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। কে করবে সরকার গঠন? সেই হিসেব কষছিলেন সবাই।
প্রাপ্ত আসনের দৌঁড়ে সিন্ ফেইন বড় দুটি দল থেকে এগিয়ে থাকলেও একক সরকার গঠনের জন্য তাদের পর্যাপ্ত আসন ছিল না। আবার তাদের সাথে জোট গঠনে ছিল সমস্যা। রাজনীতির এই কঠিন সমিকরণের কাছে শেষ পর্যন্ত হেরে গিয়ে আশানুরুপ ফল পেয়েও সরকার গঠনে ব্যর্থ হয় দলটি।
সিন্ ফেইনের উখান রুখতে তখন আইরিশ বিপরীতধর্মী বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল ফিনে গেইল, ফিনে ফেইল এবং জলবায়ু নিয়ে কাজ
করা গ্রীন পার্টির মথ্যে জোট সরকার গঠন নিয়ে এক নাটকীয় সমঝোতা হয়। সেই সূত্র ধরে এই তিনটি দলের সমন্বয়ে ২০২০ শালের ২৯শে জুন সকল জল্পনা ও কল্পনার অবসান ঘটিয়ে জোট সরকার গঠিত হয়। এটি ছিল দেশটির ৩২তম সরকার এবং ৩৩তম সংসদ।
উক্ত দলগুলোর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ি ৫ বছর মেয়াদি জোট সরকারের প্রথম আড়াই বছর ফিনে ফেইল দলীয় নেতা মিহল মার্টিন প্রধানমন্ত্রী এবং ফিনে গেইল দলীয় নেতা লিও ভারদাকার উপ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। সরকারের শেষ আড়াই বছর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মিহল মার্টিন উপ প্রধানমন্ত্রী এবং ফিনে গেইল দলীয় নেতা লিও ভারদাকার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন, যদি জোট সরকার তাদের পূর্ণ মেয়াদ অতিবাহিত করতে সক্ষম হয়।
তিন দলের চুক্তি অনুসারে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মিহল মার্টিনের দায়িত্ব শেষ হবে। এবং সব কিছু ঠিক থাকলে লিও ভারদাকার জোট সরকারের শেষ আড়াই বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের জন্য বড় দিনের আগে শপথ নিবেন। কিন্তুু রাজনীতিতে সব কিছু সব সময় সরল পথে চলে না। শেষ বলতেও কিছু নেই। পরিস্হিতি কখন যে কোন দিকে মোড় নেয়, সেটি অগ্রিম বলা যায় না।
২০১৯ সালের ভারদাকারের একটি স্ক্যান্ডাল নিয়ে তেমন একটি আশংকা তৈরী হয়েছে দেশটির রাজনীতিবিদদের মাঝে। প্রশ্ন উঠেছে,সব চাপ সামাল দিয়ে লিও ভারদাকার কী পারবেন ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিতে?
এর কারণ হচ্ছে, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্হায় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি ফাঁস করার অভিযোগে বর্তমানে লিও ভারদাকারের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্হার তদন্ত চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, ডিসেম্বরের পূর্বে সেই তদন্তের কাজ শেষ হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, কোনো কারণে যদি উক্ত তদন্তে তাঁর নৈতিক পদস্খলনের প্রমাণ পাওয়া যায়,তবে কী তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন? কিংবা তার অনুপস্হিতিতে ফিনে গেইল থেকে কে হতে পারেন পরববর্তী প্রধানমন্ত্রী?
ঘটনার বিবরণে জানা যায় লিও ভারদাকার, প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্হায় ২০১৯ সালে আইরিশ মেডিকেল অর্গানাইজেশনের (IMO)র সাথে সম্পাদিত সরকারর ২৭০ মিলিয়ন ইউরোর একটি চুক্তির খসড়ার কপি তিনি তাঁর ঘনিষ্ট বন্ধুর কাছে গোপনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। Dr maitiu o tuathail নামের সেই ব্যক্তি তখন ন্যাশনাল এসোসিয়েসন অব জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স (NAGP) এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
এই ঘটনাটি খোদ dr maitiu o tuathail এর মাধ্যমে ফাঁস হবার পর আইরিশ মেডিকেল অর্গানাইজেশনের (IMO) সাথে ন্যাশনাল এসোসিয়েসন অব জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স (NAGP)র মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরী হয়। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নথি চুড়ান্তভাবে অনুমোদনের পূর্বে এইভাবে গোপনে ফাঁস করাকে কেন্দ্র করে লিও ভারদাকার সংসদে বিরোধী দলের প্রচন্ড তোপের মুখে পড়েন। অপরদিকে কড়া সমালোচনার মুখে এপ্রিল মাসে NAGP এর প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ করেন dr maitiu o tuathail ।
ভিলেজ ম্যাগাজিনে ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি খবর প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে লিও ভারদাকার সংসদে এই বিষয় তার বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি সংসদে স্বীকার করেন, যে, যথাযথ পন্হা অবলম্বন না করে এইভাবে নথির কপি তার বন্ধুর কাছে পাঠানো সঠিক হয়নি। তিনি এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সংসদে সবার কাছে ক্ষমা চান এবং তিনি এটাও বলেন যে, উক্ত ঘটনার সাথে তার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য জড়িত ছিল না।
শুধুমাত্র সরকারের এই প্যাকেজটি প্রমোটের স্বার্থে তিনি এই কাজ করেছিলেন। যার ফলে লিও ভারদাকার সেই যাত্রা সংসদে সমূহ অনাস্হা প্রস্তাবের হাত থেকে রক্ষা পান। তবে তার বিরুদ্ধে গার্দার তদন্ত এখনো চলছে। প্রকৃত অর্থে এই নথি ফাঁস করার স্বার্থে কী উদ্দেশ্যে জড়িত ছিল? সেটি গার্দার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বুজা যাচ্ছে না।
অবশ্যি প্রধানমন্ত্রীর শপথের পূর্বে লিও ভারদার যে, বিরোধী রাজনৈতিক দলের কঠিন চাপের মুখে পড়বেন, সেটি অনেকটা নিশ্চিত। তবে তিনি সেই চাপ কীভাবে মোকাবেলা করবেন,আগামি দিন সেটি হবে দেখার বিষয়।
এস,এ,রব