বডি শেইমিং এবং অসুস্থতার প্রতি অসংবেদনশীলতা

0
467

আমি যখন ছোট তখন আত্মীয়দের বাসায় গেলেই অন্য কাজিনদের সাথে আমার উচ্চতা মাপা হতো । একসময় দেখা গেলো আমার সব কাজিনরা আমার থেকে লম্বা, আর আমি খাটো। তখন আত্মীয় স্বজনদের আলোচনার বিষয় হলো আমি খাটো হলাম, এখন অবশ্যই আমাকে লম্বা ছেলের সাথে বিয়ে দিতে হবে । আর তা না হলে আমার ছেলে মেয়েও খাটো হবে! সুতরাং আমার ভবিষ্যতই শেষ!

লম্বা-খাটো, কালো-ফর্সা, শুকনা-মোটা এসব নিয়ে কথা বলা সেই নব্বইর দশকে যেমন ছিল এখনো এই দ্বাবিংশ শতাব্দীতে এর কোনো পরিবর্তন হয় নাই।

আসলে কারো ধর্ম, বর্ণ, গায়ের রঙ, শারীরিক নানা গড়ন নিয়ে কথা বলা যে সভ্যতা নয়, সেই সচেতনতা আমাদের সমাজের নাই। কালো এবং ফর্সা নিয়ে তফাৎ তৈরি করা অনেক দামী বিষয় । তেমনি বেশি শুকনা অথবা বেশি মোটা নিয়ে কথা বলাটাও আমাদের অভ্যাস।

যাই হোক বডি শেইমিং এবং বৈষম্য পরিবার থেকেই করা হতো এবং পুরো সমাজ তাতে নানাভাবে ইন্ধন যোগাতো। সবাই বলে সময় বদলেছে, আসলেই বদলেছে কি?

আমি হয়তো উচ্চতার মতো এত ছোটখাটো বিষয়ে মাথা ঘামানোর সময় পাইনি অথবা আমার হয়তো মনের জোর অনেক বেশি ছিলো। কিম্বা সে সময় নারীরা অনেক বেশি mentally tough ছিলেন বলেই হয়তো অসংখ্য নারীরা কোন কারণে উৎরে গেছেন বা বলা চলে সারভাইভ করে গেছেন।

এখনকার ছেলেমেয়েরা mentally tough না। এই বডি শেইমিং এর হীনমন্যতা থেকে কত ছেলেমেয়ে যে ভয়াবহ ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। ডিপ্রেশনের কারণে তাদের পড়ালেখা হয়নি, ক্যারিয়ার হয়নি, বয়ফ্রেণ্ড-গার্লফ্রেন্ড হয়নি, বিয়ের বাজারে তাদের রয়েছে সীমাহীন নিগ্রহ। কত ছেলেমেয়ে যে এই হীনমন্যতায় নানা ধরণের জটিল মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তার হিসাব এই সমাজ রেখেছে কি কোন দিন?

২০২২ এ এসে মাঝে মধ্যে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মনে হয় এই সামাজিক ব্যবস্থার মুখে যদি সপাটে চড় মারতে পারতাম! পরিবর্তন আনতে পারতাম!

মাস কয়েক আগে অস্কার বিজয়ী অভিনেতা উইল স্মিথ তার এলোপেশিয়া রোগে আক্রান্ত স্ত্রীর ন্যাড়া মাথা নিয়ে কমেডিয়ান ক্রিস রক মস্করা করায় সেই চড়টাই মেরেছেন। যদিও তিনি বডি শেইমিং এর জন্য চড়টা মারেননি। তিনি চড় মেরেছিলেন তার অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে রসিকতা করায়।

অনেক আত্মীয়-স্বজন এবং আপনজন মজা করেই পরিবারের অন্য সদস্যের গায়ের রঙ, শারীরিক গড়ন এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে কটাক্ষ করেন। এটা করা ঠিক না।

উইল স্মিথ গোটা বিশ্বজুড়ে এই বৈষম্যের ক্ষেত্রে একটা পার্থক্য এবং উদাহরণ তৈরি করলেন। তিনি নারীর প্রতি বা একজন মানুষের প্রতি কী ধরণের আচরণ হওয়া উচিৎ সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন। যদিও অস্কার বিজয়ী উইল স্মিথ ঘটনাটির জন্য পরে দুঃখিত হয়েছেন।

আমি যা আমি তেমনই। আমার flaw গুলোকে নিয়েই আমার প্রিয়জনেরা আমাকে ভালোবাসবে। আমার flaw গুলো জেনেই মানুষ আমাকে ভালোবাসবে সেই দিন দ্রুতই এ সমাজে আসুক।

যে বিষয়ে মানুষের নিজের কোন ভূমিকা নেই সেই শারীরিক গঠন, ত্রুটি না দেখে মানুষ মানুষের গুণ দেখতে শিখুক। মানুষ সংবেদনশীল হতে শিখুক।

শায়লা শারমিন
ডাবলিন

Facebook Comments Box