প্রয়াত হলেন সকলের প্রিয় সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ

0
678

প্রয়াত হলেন সকলের প্রিয় সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ


গত এপ্রিল মাসেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু আশঙ্কা কাটিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছিলেন বাড়িতে। রবিবার আর শেষরক্ষা হল না। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ।  ২৯ আগস্ট রাত ১১.২৫ নাগাদ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হল তাঁর। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

একাধিক উপন্যাসে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন সাহিত্যিক। ১৯৭৭ সালে আনন্দ পুরস্কারে সম্মানিত হন বুদ্ধদেব গুহ। পুরাতনী গানে স্বনামধন্য় এই সাহিত্যিক ছিলেন চার্টাড অ্যাকাউন্টেটও। পশ্চিমবঙ্গের আয়কর বিভাগের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য, আকাশবাণী কলকাতার অডিশন বোর্ডের সদস্যের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘জঙ্গলমহল’।

বাবলি’, ‘মাধুকরী’, ‘কোজাগর’, ‘হলুদ বসন্ত’, ‘একটু উষ্ণতার জন্য’,’কুমুদিনী’, খেলা যখন এবং ঋজুদা- অরণ্য ও প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা এই মানুষটির রচনা সাহিত্য জগতকে সমৃদ্ধ করেছে।

তিনি তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সুপরিচিত সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশুনা করেন।

বুদ্ধদেব গুহর পেশাগত জীবন শুরু হয়েছিল চাটার্ড অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে, তিনি ছিলেন একজন নামী চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। দিল্লির কেন্দ্রীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গের আয়কর বিভাগের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য নিযুক্ত করেছিল। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের অডিশন বোর্ডের সদস্য হয়েছিলেন তিনি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলেন তিনি। একদা বামফ্রন্ট আমলে তাকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনবিভাগের বন্যপ্রাণী উপদেষ্টা বোর্ড পশ্চিমবঙ্গ বিভাগের উপদেষ্টা বোর্ড এবং নন্দন উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য করা হয়েছিল। বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনে পরিচালন সমিতির সদস্যও নিযুক্ত হয়েছিলেন। বুদ্ধদেব গুহ খুব সুন্দর ছবিও আঁকেন। নিজের লেখা একাধিক বইয়ের প্রচ্ছদ তিনি নিজেই এঁকেছেন। গায়ক হিসেবেও তিনি বহুজনের প্রিয়।

ছোটদের জন্য তার প্রথম বই- ‘ঋজুদার সঙ্গে জঙ্গলে’। ঋজুদা তার সৃষ্ট একটি জনপ্রিয় অভিযাত্রিক গোয়েন্দা চরিত্র। আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৭৭ সালে। প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ঋতু গুহ তার স্ত্রী। সুকণ্ঠ বুদ্ধদেব গুহ নিজেও একদা রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। পুরাতনী টপ্পা গানে তিনি অতি পারঙ্গম। টিভি এবং চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে তার একাধিক গল্প উপন্যাস।

বার্ধক্য জণিত কারণে জটিলতা থাকা সত্ত্বেও কঠিন লড়াই জয় করে বাড়ি ফিরেছিলেন বুদ্ধবাবু। কিন্তু করোনা পরবর্তীতে শরীর ভাঙতে থাকে।

এরপর কেটে যায় বেশ কয়েকমাস। অগাস্ট মাসের শেষে এসেই আবারও শরীর খারাপ, শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। তড়িঘড়ি তাঁকে ভর্তি করা হয় এক বেসরকারী হাসপাতালে। সেখানে চার দলের এক চিকিৎসক টিম চিকিৎসা চালাচ্ছিলেন বুদ্ধদেব গুহর। ডাক্তারের কথায় সংক্রমণ ছড়িয়েছিল মুত্রনালীতে। পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠায় তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় আইসিইউতে। তবে শেষ রক্ষা হল না। রবিবার রাত ১১.২৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে শোকের ছায়া।

সোমবার ভোর হতেই খবর ছড়িয়ে পড়তে থাকে, বইমেলায় স্টলে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ আবার কারুর স্মৃতিতে নতুন বইয়ের খোঁজে অপেক্ষায় দিনগোনা। সম্পর্কে এক অন্য ছাঁচে বেঁধেছিলেন তিনি। তাঁর কলম সব প্রজন্মের মনকেই ছুঁয়ে যেত। তবে থামল সেই কলমের পথ চলা। ছোটদের জন্য যেমন ছিল ঋজুদার সঙ্গে জঙ্গলে ঠিক তেমনই বাবলি, কোয়েলের কাছে, জলছবি, কুমুদিনী পরিণত মনকে আকর্ষণ করেছে বারে বারে।

বহূ পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। সাম্মানিক ডি.লিট উপাধিও পেয়েছিলেন ।কিন্তু তার থেকেও তিনি খুশী ছিলেন পাঠক, পাঠিকার গভীর ভালোবাসতে। স্পষ্টভাষী অথচ মনোহর আকর্ষণীয় চরিত্রের মানুষ ছিলেন তিনি। অনায়াসে মাথা নীচু করতে পারতেন না। সেই মাথা উঁচু করেই তিনি প্রয়াত হলেন আজ কিন্তু রয়ে গেলেন বাঙালির সাহিত্য জগতে অমর হয়ে।

Facebook Comments Box