পবিত্র শাবান মাসের ফজিলত ও আমল।

0
1432

শাবান মাস অতিক্রম করেছ মুসলিম উম্মাহ। মাসটি পেরুলেই শুরু হবে রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান। রমজানের আগে শাবান মাসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামগণ কী আমল ও ইবাদত করতেন?

রমজান মাসের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসের দিনের ও তারিখের হিসাব রাখা বিশেষ জরুরি এবং একটি সুন্নাত আমল। হাদিস শরিফে নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখো।’ (সিলসিলাতুস সহিহাহ, আলবানি, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১০৩)।

যেহেতু রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসের আমল, তাই শাবান মাসেও ওই আমলগুলো করতে হবে যে সব আমল রমজানে করতে হয়। যেমন:

বেশি বেশি রোজা রাখা, কোরআন তেলাওয়াত, বেশি বেশি ইসতেগফার করা, তাহাজ্জুদের নামাজে গুরুত্ব দেয়া, দান-সদকা বৃদ্ধি করা, মন্দ চর্চা ও পরনিন্দা পরিহার করা, ইত্যাদি।

রমজানের সঙ্গে শাবান মাসের সম্পর্ক হচ্ছে, ফরজ নামাজের আগে সুন্নত আদায় করার ন্যায়। তাই এ মাস সংক্রান্ত হাদিসে অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (সা.) রমজানের পর এ মাসেই বেশি রোজা রেখেছেন। নিম্নে এ সম্পর্কিত হাদিস তুলে ধরা হলো-

হজরত আয়শা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) রমজান ব্যতীত কোনো সময় পূর্ণ মাস রোজা রাখতেন না, তবে শাবান কিছুটা ভিন্ন। কারণ, এ মাসের প্রায় পূর্ণ সময় তিনি রোজা রাখতেন।’

(সহীহ বুখারী, হাদিস নং-১৯৭০, সহীহ মুসলিম ও আবু দাউদ) একই অর্থের একটি বর্ণনা উম্মুল মুমিনিন হজরত উম্মে সালামা (রা.) থেকে হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ সুনানে তিরমিজিতেও এসেছে।

হজরত আয়শা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) শাবান মাসের প্রায় পূর্ণ সময় রোজা রাখতেন। আমি একবার তাকে জিজ্ঞেস করি, আপনার শাবানের রোজা খুব পছন্দ?

রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা সারা বছরে যারা মারা যাবে তাদের তালিকা এ মাসে প্রস্তুত করেন। আমার আকাঙ্ক্ষা যে, আমার নাম মৃতদের তালিকায় ওঠানো হোক রোজা থাকা অবস্থায়।’

(ফাতহুল বারী, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৫২)

হজরত আয়শা (রা.) বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে প্রশ্ন করি যে, শাবান মাস ব্যতীত অন্য কোনো মাসে আপনাকে এত বেশি রোজা রাখতে দেখি না কেন?

রাসূল (সা.) বলেন, রমজান ও রজবের মাঝের মাস হচ্ছে শাবান। এ মাসের বরকত সম্পর্কে লোকেরা উদাসীন। এ মাসে আল্লাহ তায়ালার সামনে বান্দার সারা বছরের আমল পেশ করা হয়। আমার আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে, আমার আমলনামা ওই অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার।

(নাসায়ী, আবু দাউদ) মুহাদ্দিসগণের বড় একটি সংখ্যা এ হাদিস গ্রহণযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রায় সব রজব মাসে ১০টি নফল রোজা রাখতেন এবং শাবান মাসে ২০টি নফল রোজা রাখতেন। রমজানে পূর্ণ মাস ফরজ রোজা। নবীজি (সা.) রমজান ছাড়া বছরের সবচেয়ে বেশি শাবান মাসেই নফল রোজা রাখতেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) রজব ও শাবান মাসব্যাপী এ দোয়া বেশি বেশি পড়তেন, ‘

আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজব ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগ না রমাদান

অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান আমাদের নসিব করুন।’ (মুসনাদে আহমাদ, প্রথম খণ্ড: ২৫৯, শুআবুল ইমান, বায়হাকি,৩: ৩৭৫)।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শাবান মাস জুড়ে নিজেদের ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রাখা। রমজানের প্রস্তুতি নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শাবান মাসজুড়ে উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Facebook Comments Box