নব গঠিত ব্রিকসে (BRICS) কেন স্থান পেলনা বাংলাদেশ

0
468

উদীয়মান অর্থনীতির পাঁচ দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিন আফ্রিকা নিয়ে গঠিত হয় ব্রিকস (BRICS)।
২০০৯ সালে প্রাথমিকভাবে চারটি দেশ নিয়ে ব্রিক নামে এর যাত্রা শুরু হলেও পরের বছরই দঃ আফ্রিকাকে অন্তরভূক্ত করে উদ্বোক্তাকারী পাঁচটি দেশের নাম অনুসারে ব্রিকসের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও সহযোগিতা নিয়ে কাজ করার মহান ব্রত নিয়ে এই সংস্থাটি গঠিত হয়। বিশ্ব অর্থনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করতে চায় নবগঠিত ব্রিকস নামক এই সংস্থাটি।

জাতিসংঘ কিংবা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের আদলে গঠিত নুতন জোট BRICS অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করে ২০৫০ সাল নাগাদ অনুন্নত কিংবা স্বল্পউন্নত দেশগুলোকে বেশী করে আর্থিক সাহায্য করতে চায় সংস্থাটি। এই লক্ষে NDB নামে একটি ব্যাংক তৈরী করেছে নুতন এই জোট। অতি সম্প্রতি দঃ আফ্রিকার রাজধানীতে সংস্থাটির প্রথম সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।বাংলাদেশ সহ ৫০টি দেশের রাস্ট্রপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন এই সম্মেলনে।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিকসে সদস্যপদ লাভের জন্য বাংলাদেশ সহ ৪০ টি রাস্ট্র আবেদন করে এর মধ্য থেকে ১৯ টি রাস্ট্রকে বিবেচনায় নিলে ও শেষ পর্যন্ত, ইথ্যুপিয়া সহ ৬ টি রাস্ট্রকে নুতন সদস্য হিসাবে সর্বসম্মতিক্রমে অন্তর্ভূক্ত করে সংস্থাটি।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাক ঢোল পিঠিয়ে রাস্ট্র্রের টাকা খরচ করে সফর সংগীদের নিয়ে ব্রিকসের সম্মেলনে যোগদান করেন।প্রত্যাশা ছিল সদস্য পদ লাভ করবে বাংলাদেশ। সদস্য পদ পাওয়ার বিষয়টি গেল দুই মাস পূর্বে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল মুমিন ব্রিকসের সদস্য পদ লাভের বিষয়ে নিশ্চিত করে আগাম বলেছিলেন যে, আমরা আগস্ট মাসে ব্রিকসের সদস্য পদ লাভ করতে যাচ্ছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলে ও সত্য যে, ভারতের আপত্তির কারনে বাংলাদেশ সদস্য পদ লাভ করতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষের অবশ্য প্রত্যাশা ছিল দেশটি ব্রিকসের সদস্যপদ লাভ করবে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল আমাদের দেশের চেয়ে কম উন্নত দেশ এবং GDP বাংলাদেশের অর্ধেকের কম থাকা দেশ ইথ্যুপিয়ার মতন স্বল্পউন্নত দেশ ব্রিকসের সদস্যপদ লাভ করতে সক্ষম হলেও বাংলাদেশ পারেনি। চীন সদস্য বাড়াতে আগ্রহী হলেও বিশ্লেষকদের ধারনা, ভারতের দাদাগিরীর কারনে বাংলাদেশ চিটকে পড়তে হয়েছে।

বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াক এটা ভারত কৌশলগত কারনে চাইবেনা। এটাই স্বাভাবিক। যদিও স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ভারত আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে তার চির শত্রু পাকিস্তানকে ভেঙ্গে দুর্বল করা এবং ভারত তার নিজ স্বার্থে যাতে করে বাংলাদেশকে শোষন করতে পারে। ভারত তাই করেছে। এখন পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশ থেকে কেবল সুবিধা নিয়েছে, বিনিময়ে বাংলাদেশ ন্যায্য হিস্যা পাওয়াত দুরের কথা, নুন্যতম সহযোগিতা পায়নি কোনদিন ভারতের কাছ থেকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে স্বীকার করেছেন যে, বাংলাদেশ ভারতকে যা দিয়েছে তা ভারত সারাজীবন মনে রাখবে। এর মানে ক্ষমতায় থাকার জন্য ভারতকে দু হাত উজাড করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। প্রধানমন্ত্রীর উল্লেখিত বক্তব্যই প্রমান বহন করে।

তাছাডা এই সম্মেলনে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাইলেটারল (দ্বিপক্ষীয়) বৈঠক করেননি। দঃ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রনে নৈশভোজে নরেন্দ্র মোদী শেখ হাসিনার সঙ্গে কোশল বিনিময় করেছেন মাত্র।
ব্রিকসের সদস্য পদ না পেয়ে রাস্ট্রের টাকা খরচ করে ওখানে গিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নাগরিক সম্বর্ধনায় বিএনপির বিরুদ্ধে তার স্বভাবজাত বিষোদগার করতে ভূল করেননি তিনি।

শেষ কথা সদ্য সমাপ্ত ব্রিকস সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি শূন্য হলেও আমাদের প্রত্যাশা গনতন্ত্র পূনঃপ্রতিস্টা এবং জনগনের সরকার প্রতিস্টিত হলে বাংলাদেশ একদিন অবশ্যই ব্রিকসের সদস্যপদ লাভ করতে সক্ষম হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক
প্রভাষক আব্দুস সহিদ
আয়ারল্যান্ড প্রবাসি

Facebook Comments Box