

তিন মাসের মধ্যেই করোনা সংক্রমণ শূন্য তে আনতে সফল হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া । গত ফেব্রুয়ারীর এক তারিখের আগে দেশটিতে একজন ও করোনায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি, এর পর থেকে শুরু হয় সংক্রমণ । অবশেষে গত পহেলা মে তে দেশটিতে আর কোনো করোনা রোগী পাওয়া যায়নি ।
ফেব্রুয়ারীতে প্রথম সংক্রমণের খবর পাওয়া যায় যে দেশটিতে চারজনের ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে যাদের প্রত্যেকেই বিদেশ থেকে সেখানে ঢুকেছিল এবং বিমানবন্দরে ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর সেখান থেকেই তাদের আলাদা করে ফেলা হয়েছে। খবর বিবিসির।
বিদেশফেরত ওই চারজনসহ দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০,৭৬৫ জনে।
কিন্তু ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে বড় হটস্পট ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। এভাবে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যে নিয়ে আসাটা তাদের একটা যুগান্তকারী সাফল্য।
সম্পূর্ণ ভাবে লকডাউন এ না গিয়েও বিশেষ উদ্দ্যেগ গ্রহণের মাধ্যমে দেশটি সফলতা অর্জন করে ।
ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রমণের হার খুবই বেড়ে যায়- যখন দেইগু শহরে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠির মধ্যে অনেকের ভাইরাসের সংক্রমণের ঘটনা ধরা পড়ে।
শিনজিওঞ্জি নামে একটি গির্জার একজন সদস্যের কাছ থেকে গির্জার অনেক সদস্য সংক্রমিত হয় এবং তাদের থেকে আরও কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। সরকার এরপর ব্যাপক মাত্রায় পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করে দেয়।
সারা দেশে অস্থায়ী ক্লিনিক বসানো হয়- যেখানে গিয়ে গাড়ির ভেতরে বসেই মানুষ তার পরীক্ষা সেরে নিতে পারে। বিনামূল্যে সবার পরীক্ষা হয় ।
বিশাল পরিসরে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করার ফলে দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রমিতের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে শুরু করে। কিন্তু সে কারণে কর্তৃপক্ষ গোড়া থেকেই কারা সংক্রমিত হয়েছে তাদের সফলভাবে চিহ্ণিত করতে সক্ষম হয় এবং দ্রুত তাদের আলাদা করে ফেলে তাদের চিকিৎসা দেয়। এছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া সফলভাবে এবং খুবই ক্ষিপ্রতার সঙ্গে যেটা করেছিল সেটা হল কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং- অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কারা এসেছে তাদের খুঁজে বের করা, এবং যারা পজিটিভ তাদের খুঁজে বের করে তাদেরও আলাদা করে ফেলা ও তাদের চিকিৎসা করা।
কেউ পজিটিভ শনাক্ত হলেই কর্তৃপক্ষ তার কাছাকাছি বসবাস করে বা তার সঙ্গে কাজ করে এমন লোকেদের কাছে সতর্কবার্তা পাঠাতে শুরু করে। শুরু হয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বার্তা আসার স্রোত। মানুষও দ্রুত এতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।
একসময় জানা যায় শিনজিওঞ্জি গির্জার যে গোষ্ঠিটির মধ্যে সংক্রমণ প্রথম নিশ্চিতভাবে ধরা পড়ে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র ধরেই দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ সংক্রমণের শিকার হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সব গির্জা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। কর্মকর্তারা জনসমাগম ঠেকানোর জন্য সর্বোতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যান ।। এভাবেই তারা করোনাযুদ্ধে সফলতা অর্জন করে ।