কাউন্টি কাউন্সিলর হিসেবে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করা জো বাইডেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। মাত্র ২৯ বছরেই এক সময়ের সর্বকনিষ্ঠ মার্কিন সিনেটর এবার হয়েছেন দেশটির প্রবীণতম প্রেসিডেন্ট।
১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়াতে জন্ম হয় জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র। তবে জো বাইডেন নামেই বেশি পরিচিত তিনি। বাবা জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়র এবং মায়ের নাম ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় জো বাইডেন অবশ্য শৈশব থেকে বড় হয়েছেন ডেলোয়ারে।
ডেলোয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশুনা করেন জো বাইডেন। পরে সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময়েই অনেকটা ছাত্র অবস্থায় ১৯৬৬ সালে ভালোবেসে বিয়ে করেন প্রথম স্ত্রী নিলিয়া হান্টারকে। এই ঘরে আছে তিন সন্তান – দুই ছেলে জোসেফ বিউ বাইডেন ও রবার্ট হান্টার এবং এক মেয়ে নাওমি ক্রিস্টিনা।
এরপর ১৯৭০ সালে নিউ ক্যাসল কাউন্টির কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন জো বাইডেন। ১৯৭২ সালে দেশটির ইতিহাসে অন্যতম কনিষ্ঠ সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দফায় দফায় সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জো বাইডেন।
যদিও এর মধ্যে জীবনে বেশ ঝড় মোকাবিলা করতে হয় বাইডেনকে। যার প্রভাব পড়ে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারেও। ১৯৭২ সালে সিনেটর নির্বাচিত হওয়ার পরেই এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রিয়তমা স্ত্রী এবং এক বছর বয়সী এক কন্যাসন্তান অ্যামি নিহত হন।
এরপর সন্তানদের সময় দেওয়ার জন্য সিনেটর পদে আর দায়িত্ব নিতে চাননি বাইডেন। তবে সেই আবেদন খারিজ হলে ১৯৭৩ এ সিনেটরের দায়িত্ব নিতে হয় তাকে।
তারপর অবশ্য ১৯৭৭ সালে জিল ট্রেসি জ্যাকবের সঙ্গে ঘর বাঁধেন বাইডেন। এই সংসারে এক মেয়ে আছে বাইডেনের – অ্যাশলে ব্লেজার বাইডেন।
রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন ছিল বাইডেনের মাঝে। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলের হয়ে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বাইডেন। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে সেবার আর এগোতে পারেননি জো।
যার নয়তে হয় না তার নব্বইতেও হয় না – বাংলার এমন প্রবাদকে মিথ্যা প্রমাণ করতে ২০০৮ সালে আবারও চেষ্টা করেন প্রেসিডেন্ট পদের মনোনয়ন নিতে। তবে দলীয় সতীর্থ বারাক ওবামার কাছে হেরে গিয়ে দলের পতাকা বঞ্চিত হন। তবে ২০০৯ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ওবামা প্রশাসনে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাইডেন।
বাইডেনের ইচ্ছে ছিল, ২০১৬ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার। সেবার ওবামার উত্তরসূরি হিসেবে বাইডেন এক প্রকার চূড়ান্তও ছিলেন। কিন্তু ২০১৫ তে ছেলে বিউ বাইডেনের মৃত্যুতে বাইডেনের মাঝে আর এত কঠিন যুদ্ধে নামার মানসিক শক্তি ছিল না। চোখের সামনে দিয়ে বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামার মতো কনিষ্ঠদের প্রেসিডেন্ট হতে দেখেছেন বাইডেন।
যদিও প্রেসিডেন্ট হওয়ার অদম্য বাসনা যার রক্তে মিশে রয়েছে তাকে ঠেকায় কে! ২০২০ সালে এসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পেয়েছেন দলীয় মনোনয়ন; লড়েছেন নির্বাচন। শেষ পর্যন্ত শ্বাসরুদ্ধকর এক নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বাধিক পপুলার ভোট পেয়ে ৭৭ বছরে প্রবীণতম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন জো বাইডেন।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে অভিষেক হতে যাচ্ছে জো বাইডেনের।