কী করে এ সময়ের প্রজন্ম এত সাহসী, প্রতিবাদী ও অধিকার সচেতন?

0
105

এ প্রজন্ম কেন এত সংগ্রামী, বিপ্লবী, প্রতিবাদী? কী এমন অনুপ্রেরণা তাদের মধ্যে যা তাদেরকে অধিকার আদায়ের জন্য মৃত্যুকেও সাদরে আলিঙ্গন করতে দ্বিধা করে না? তাদের এ বীরত্ব কি একদিনেই তৈরি হয়েছে?

আপনাদের যাদের সন্তান বা ছোট ভাইবোন রয়েছে এবং ভালো কোনো স্কুলে লেখাপড়া করে তারা বুঝবেন যে, বাংলাদেশে একজন ছাত্র/ছাত্রী ৩-৪ বছর থেকেই সংগ্রামে নেমে পড়ে। তার প্রথম সংগ্রাম প্রথম শ্রেণীতে ভালো কোনো স্কুলে ভর্তি হওয়ার সংগ্রাম। কারণ ভালো স্কুলে ভর্তি হতে পারলে মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত একটু নিশ্চিন্ত থাকা যায় পড়ালেখা নিয়ে। এই ভালো স্কুলে ভর্তি হতে তাকে তখনই শুরু করতে হয় কোচিং, প্রাইভেট টিউশন এবং সাথে নিজের পরিশ্রম তো রয়েছেই। মনে রাখতে হবে তখন কিন্তু তার বয়স ৩-৫ এর মধ্যে।

এরপর ভালো স্কুলে চান্স পেলে ভালো স্কুলের ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী পড়ালেখা। সেই সাথে প্রাইভেট কোচিং ও টিউশন তো আছেই। কারণ তাকে প্রত্যেকটা পরীক্ষায় ভালো করতে হবে। টার্গেট মাধ্যমিকে ভালো নাম্বার সহ গোল্ডেন এ প্লাস পেতে হবে। তা না হলে ভালো কলেজে ভর্তির দৌড়ে পিছিয়ে যাবে।

মাধ্যমিক শেষ হলে কলেজে ভর্তির যুদ্ধ। কলেজে ভর্তি হলে উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্টের যুদ্ধ। ভালো রেজাল্ট না হলে বুয়েট, মেডিকেল কিংবা ভালো বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভালো সাবজেক্টে ভর্তি হতে পারবে না। আর তা না ক্যারিয়ার অন্ধকার।

এভাবে ছাত্রজীবন শেষ হওয়া পর্যন্ত তার এ যুদ্ধ চলতেই থাকে। এরপর ভালো চাকুরী পাওয়ার যুদ্ধ। তারপর জীবনযুদ্ধ।

এ যুদ্ধ করতে করতে সে কিন্তু যথেষ্ট মেধাবী ও সাস্টেইনেবল হয়ে বেড়ে উঠে। ডারউইনের একটি তত্ত্ব আছে, survival of the fittest, ছেলেবেলা থেকে সে শিখে আসতেছে যে, সার্ভাইব সে-ই করবে যে ফিট। প্রতিযোগিতা করে তার বড় হয়ে উঠা।

এভাবে ৩ বছর থেকে একটা ছেলে/মেয়ে যুদ্ধ করতে করতেই বড় হয়। সে বেড়ে ওঠে যোদ্ধা হয়ে। সাথে যখন দেখে তারা অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে, তাদের চারপাশে অন্যায়ের জালে আবদ্ধ, দুর্নীতি ছাড়া নিজেদের ভবিষ্যৎ দেখতেছেনা তখন তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে পুঞ্জিভূত হয় প্রতিবাদের বীজ। যখন তাদের মাঝে দৃশ্যমান হয় তাদের থেকে অযোগ্যরা রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে ভালো জায়গায় স্থান পাচ্ছে, আর তারা থাকে নিগৃহীত তখন ক্ষোভ দানা বাঁধে তাদের মাঝে।

মেধা ও শ্রম দিয়ে যুদ্ধ করা প্রতিযোগীর সাথে যুদ্ধ করে জিতে আসতে হলে সম-পর্যায়ের প্রতিযোগী লাগবে। আর যদি সবাই এক পাশে তাহলে তাদের সাথে সন্ধি না করে যুদ্ধ ঘোষণা করা নিতান্তই বোকামি।

এরা এমনই প্রতিযোগী যাদের সামনে খোঁড়া যুক্তি-তর্ক, অজুহাত, আবদার, মিথ্যে সব বুমেরাং হয়ে ফিরে যায়। সাহস তাদের হাতিয়ার, মেধা তাদের অস্র, আর দেশপ্রেম তাদের গোলাবারুদ। মনে রাখা প্রয়োজন অসি অপেক্ষা মসি অধিকতর শক্তিশালী।

ওমর এফ নিউটন
বার্তা সম্পাদক
আইরিশ বাংলা টাইমস

Facebook Comments Box